ক্রেতায় মুখর ঢাকার বাইরের ঈদ বাজার, তবে বিক্রি জমেনি
সারাদেশে জমে উঠেছে ঈদের পোশাকের বাজার। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে বিপণিবিতানগুলো। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে দোকানগুলোতে। বিশেষ করে নামী ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানে ক্রেতা সমাগম বেশি হলেও বেচাকেনা হচ্ছে তুলনামূলক কম।
সিলেটের সিটি হার্ট শপিং মলের অনন্যা ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'মার্কেটে ক্রেতারা আসছেন। তবে এখন কেনার চাইতে তারা দেখছেনই বেশি। ঈদের তিন-চারদিন আগে থেকে বাজার পুরোপুরি জমে উঠবে।'
সিলেট মহানগরের হাসান মার্কেটের সোহাগ বস্ত্র বিতানের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের মার্কেটের ক্রেতা মূলত গ্রামের মানুষজন। এখন গ্রামে এখন ধান কাটার মৌসুম চলার কারণে মার্কেটে ক্রেতা আসছেন কম।
রাজশাহীতে আড়ং, লা রিভ, ইজির মতো মতো নামী ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। নগরীতে আড়ং ও লা রিভের আউটলেট উদ্বোধনের মাসাধিক কাল পার হতে চললো। কিন্তু সেখানে এখনো যেন ক্রেতাদের ভিড় কমছে না। ইফতারের পর থেকে রাতে আড়ং আউটলেটের সামনে ক্রেতাদের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। আড়ংয়ের বিক্রেতারা জানান, তাদের আশানুরূপ পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসাদুর রহমান রিংকু জানান, এবার ঈদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সবাই সন্তুষ্ট। আশা করছি ২-৩ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হবে।
যশোরে 'পুষ্পা' ও 'কাঁচাবাদাম' নামের শাড়িতে মেতেছেন নারীরা। শাড়িগুলো ১৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে মার্কেটগুলোতে। তবে হ্যান্ডপেইন্ট, বাটিক, সিকোগাদোয়াল, অরগাঞ্জা, রেডি শাড়ি ও বেনারসি সিল্ক শাড়িরও চাহিদা বেশ। আর তরুণীরা কিনছেন সারারা ও ঘারারা থ্রিপিস। সব বয়সী পুরুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পাঞ্জাবি।
নাবিলা হক নামে এক গৃহিণী বলেন, 'করোনার কারণে গেল দুব'ছর ঈদে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারিনি। তবে এবার ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাবো। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের জন্য হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি কিনেছি। বাজেটের মধ্যে হওয়ায় স্বাচ্ছন্দে শাড়ি কিনতে পেরে অনেক খুশি আমি।'
তবে বগুড়ার ঈদের পোশাকের বাজারে ক্রেতা তুলনামূলক কম। করোনার আগে ঈদ বাজারে যে চমক ছিল তার আর ফিরে আসছে না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে পোশাকের দামও তুলনামূলক বেশি। ক্রেতারা দাম শুনেই এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ছুটছেন।
বগুড়া শহরের অভিজাত মার্কেট রানার প্লাজা। এ মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানের ব্যবস্থাপক আলিমুদ্দিন জানান, 'করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। এতে করে মার্কেটে ক্রেতা কমে গেছে। যারা আসছেন তারাও আবার কম দামের পোশাক কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।'
মার্কেটে আসা ক্রেতা তহমিনা ইসলাম জানান, করোনায় তার স্বামীর ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও বেশি দামি পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই।
বগুড়ার জলেশ্বরীতলাও মোটামুটি অভিজাত এলাকা হিসেবে বিবেচিত। এই এলাকায় দেশের নামী সব ব্র্যান্ডের কাপড় পাওয়া যায়। ফড়িং নামের এক দোকানের কর্মচারী জানান, এবার ঈদে পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। তবে দামি পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে কম। সবার আগ্রহ কমদামি পোশাকের দিকে। তবে ঈদের যেহেতু আরও কিছুদিন বাকি, সেজন্য বেচাকেনা আরও ভালো হওয়ার আশার কথা জানান তিনি।
ঈদকে ঘিরে বগুড়ায় নিউমার্কেট খুব জমজমাট থাকে। এই মার্কের্টের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, 'বিভিন্ন কারণে বাজারে ক্রেতা কম। করোনার কারণে এমনিতেই ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত! তবে এখন করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় আশা করছি বাকি দিনগুলোতে ভালো ব্যবসা হবে।'
লক্ষ্মীপুরের বিপণিবিতানগুলোতে এখন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। দিনের তুলনায় রাতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। জেলার রামগঞ্জের জিয়া শপিং কমপ্লেক্সের প্রিয়জন ফ্যাশনের মালিক ফারুক হোসেন জানান, দিনে শিশুদের পোশাক বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। সন্ধ্যার পরও ক্রেতারা আসছেন কেনাকাটা করতে।
মার্কেটে পোশাক কিনতে আসা নাসরিন আক্তার নামে একজন শিক্ষিকা জানান, 'পোষাক, জুতাসহ সব কিছুর দাম খুব বেশি। দাম শুনে দামাদামি করতে মন চায় না। সবকিছুর দামই এবার বেশি মনে হচ্ছে।'
তবে কুমিল্লার মার্কেটগুলোতে এবার ঈদের পোশাক বেচাকেনায় বেশ গতি এসেছে। ২০ রমজানের আগ পর্যন্ত জেন্টস আইটেমের বেচাকেনা কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে সবধরনের আইটেমের বেচাকেনা চলছে।
কুমিল্লার হক টাওয়ার দেহনন্দন ফেব্রিকেশনের স্বত্বাধিকারী আবু রায়হান জানান, এবার বেশি বিক্রির আশায় মার্কেটগুলোতে কয়েকগুণ বেশি মালামাল তোলা হয়েছে। ২০ রোজার পর বেচাকেনা বেড়ে গেছে।
কুমিল্লা ইস্টার্ন প্লাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম বলেন, 'মার্কেটের তিন শতাধিক দোকানের সবগুলোতেই বেচাকেনা বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে এবার এই মার্কেটে ১০০ কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হতে পারে। আশা করি, পুরোপুরি না হলেও গত দুই বছরের ক্ষতি আমরা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব।'
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দশ রোজার পর থেকেই পোশাক বেচাকেনা ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মার্কেটে এখন শিশু ও মেয়েদের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে জেলা শহরের সিটি সেন্টার, ভূঁইয়া ম্যানশন ও আনিছ প্লাজা ঘুরে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মার্কেটগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পছন্দসই কাপড় এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় খুশি ক্রেতারা। এবার মেয়েদের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলছে সারারা ও পুষ্পা। এছাড়া লেহেঙ্গার চাহিদাও বেশ।
জেলা শহরের সিটি সেন্টারস্থ স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউজের পরিচালক সুমন সাহা জানান, তার দোকানে সারারা আর লেহেঙ্গা বেশি বিক্রি হচ্ছে। করোনার আগের বছরগুলোতে তার ৩টি শোরুমে ঈদ কেন্দ্রিক বেচাকেনা হতো প্রায় ১ কোটি টাকার কাপড়। এবারও অর্ধকোটি টাকার পোশাক তুলেছেন দোকানে। কিন্তু ঈদের বেচাকেনা দেরিতে শুরু হওয়ায় সবগুলো পোশাক বিক্রি হবে কিনা- সে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আজিজুল হক বলেন, 'করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় এবার ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কত টাকার কাপড় বেচাকেনা হবে- সেটি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।'
বরিশালে ফুটপাতের বাজারগুলোতে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
সিটি কর্পোরেশন বিল্ডিং হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী শাহিন আহমেদ বলেন, 'রমজানের শুরু থেকেই আমার ভালো বেচাকেনা হয়েছে। আগে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিক্রি হয়তো। এখন সেটি দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন প্রায় ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকায়।
বরিশাল ফ্যাশন হাউসের বিক্রয়কর্মী সুমি আক্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ক্রেতাদের উপস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালোই, তবে বিক্রি পর্যাপ্ত নয়।'