৫ মিনিটেই ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শেষ!
২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৫০ শতাংশ টিকিট পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে আর বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে। তাই টিকিট কিনতে একদিকে মানুষ যেমন অনলাইনে চেষ্টা করছেন, তেমনি আবার অনলাইনে না পেয়ে অধিকাংশই ভিড় করছেন কমলাপুর রেল স্টেশনসহ ঢাকার ৫ টি স্টেশনে। সোমবার সকালে অনলাইনে নির্ধারিত টিকেটের সবগুলোই প্রথম ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়েছে বলে দাবি করছে সহজ। ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছে সহজ ডটকম।
অনলাইনে কেনার সুযোগ থাকলেও অনেকেই অভিযোগ করছেন প্রথম মিনিটে লগইন করেও টিকিট কাটতে পারেননি তারা। এছাড়া, তিনদিন টানা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্খিত টিকিট পায়নি অনেকে।
সহজের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সোমবার প্রথম মিনিটেই অনলাইনে প্রায় ১৮ লাখ হিট বা ট্রাফিক হয়েছে ওয়েবসাইটে। সে অনুযায়ী অনলাইনে আমাদের ১৩ হাজারের মতো টিকিট প্রথম ৩০ সেকেন্ডেই বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা। সেখানেও নির্ভর করছে ভাগ্য। যারা প্রথম ১৩ হাজার কেবল তারাই টিকিট কাটতে পারবেন।"
তার দাবি, গত ২৩ তারিখ থেকে তাদের সার্ভার এক মিনিটের জন্যও ডাউন হয়নি। প্রথম দিন প্রথম মিনিটে ৫ লাখ, ২য় দিন প্রথম মিনিটে ১০ লাখ হিট করেছিল অনলাইনে। প্রথম দুদিন ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। সোমবার সময় আরও কম লেগেছে।
সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলোয় টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, কেউ একদিন আগে আবার কেউ কেউ দুইদিন আগে থেকেই স্টেশনে অপেক্ষা করছেন অগ্রিম টিকিটের জন্য।
পঞ্চগড় যেতে রোববার রাত ৮ টার পরে এসে অগ্রিম টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আব্দুল বাসেত। সেইসঙ্গে অনলাইনেও সকাল ৮ টা থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু কোনোটিতেই মেলেনি টিকিট।
আব্দুল বাসেত প্রশ্ন করেন, "অনলাইনের টিকিট কারা কেটে নিয়ে যায়? সকাল ৮ টায় বিক্রি শুরু হওয়ার কথা অনলাইনে, তাই আগ থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম। কিন্তু সার্ভারে লগ ইন করার পরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দেখাচ্ছে টিকিট শেষ।"
অনলাইনে টিকিট কিনতে পারেনি শামসুদ্দিনও। টিবিএসকে তিনি বলেন, "আমি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ থেকে একসঙ্গে চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে পারিনি। আমরা এতো চেষ্টা করেই পেলাম না, অন্য সাধারণ মানুষের তো তাহলে অনলাইনে টিকিট পাওয়ারই কথা না।"
রংপুর যেতে অগ্রিম টিকিট কাটতে শনিবার রাতে এসে সিরিয়ালে দাঁড়ান একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। সোমবারও ছিলেন লাইনে। দুপুর ১২ টার দিকে এসে রংপুরের টিকিট শেষ হয়ে গেলে তিনি টিকিট পেতে ব্যর্থ হন।
শহিদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "গত পরশু সেহরির পর থেকে লাইনে আছি। আমার আগে আজকে ১০০ জনের মতো ছিলেন কিন্তু ৭০/৮০ জনের কাছে টিকিট বিক্রির পরেই বলে টিকিট শেষ।"
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা সান্ত্বনা মরিয়ম সোমবার ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও জয়পুরহাটের টিকিট পাননি ।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "ভোরে আমার আগেও ১৫০ জনের মতো মহিলা ছিল। অনেকেই গতকাল থেকে সিরিয়ালে আছেন। এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব? এখানে ফ্যানের ব্যবস্থাও নেই। এতো মানুষের ভিড়ে ২/৩ জন মহিলা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন সকালের দিকে।"
গতকাল রাত তিনটায় এসে মাত্র ১টি টিকিট কিনতে পেরেছেন শারমিন। টিবিএসকে তিনি বলেন, "প্রায় ১২ ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে ১টি টিকিট পেলাম। চেয়েছিলাম কেবিন, কিন্তু ৪ জনের টিকিটও দিলো না। এখন ১ টিকিটেই বাড়ি যেতে হবে সবাইকে নিয়ে।"
কমলাপুর রেলস্টেশনে নারীদের জন্য মাত্র দুটি ডেডিকেটেড কাউন্টার রয়েছে, যা ভিড়ের তুলনায় একেবারেই পর্যাপ্ত নয়।
ঢাকাতে দিনমজুরের কাজ করেন মকবুল হোসেন। রংপুর যাবেন তিনি। রোববার রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পেয়ে, মঙ্গলবারের জন্য সিরিয়াল দিয়ে লাইনেই একটি পাটি বিছিয়ে শুয়ে পড়েছেন মকবুল।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "টিকিট পাইনি তাই আগামীকালের জন্য সিরিয়াল দিয়ে বসে আছি। পরিবারসহ বাড়িতে যাবো বাসে ভাড়া চায় প্রতি টিকিট ১৮০০ করে যেখানে ট্রেনে ভাড়া ৪৪০ করে। তাই কষ্ট হলেও অপেক্ষা করছি।"
এছাড়া, একটি গ্রুপের কয়েকজনকে দেখা যায়, যারা টিকিটপ্রতি ৫০০/১০০০ টাকার বিনিময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কেটে দিচ্ছেন।
এ গ্রুপের একজন রাসেল টিবিএসকে বলেন, "আমরা স্টেশনের মধ্যেই থাকি। কেউ সিরিয়াল ধরে রাখতে চাইলে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি, পরে টিকিট কাটার সময় তাকে দিয়েই টিকিট কাটাই। এজন্য আমরা প্রতিটি টিকিটের বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১০০০ করে টাকা নেই।"
"আমরা যে কষ্ট করি এজন্যই টাকাটা নেই, নিজেরা তো টিকিট বিক্রি করছি না", যোগ করেন রাসেল।
সার্বিক বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারের সঙ্গে কথা বললে টিবিএসকে তিনি জানান, আন্তনগর ও লোকাল মিলে প্রতিদিন প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ রেলের টিকিট কাটছেন। এরমধ্যে ঈদের অগ্রিম টিকিট প্রায় ২৭ হাজার।
এদিকে, মানুষের ভোগান্তি হলেও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, "কালকের টিকিটের জন্য যদি আজকে কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কী করার আছে বলেন। আজকের টিকিট নিয়ে তো কারও কোনো অভিযোগ নেই। কারণ আমরা তো সিস্টেম করেছি, এখানে অন্যকিছুর সুযোগ নেই।"
তিনি বলেন, "আপনি এনআইডি কার্ড দিয়ে টিকিট কাটবেন, আপনার টিকিট দিয়ে তো আমি যেতে পারবো না।"
সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে কমলাপুরে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার সর্বশেষ পরিস্থিতি পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন মন্ত্রী।