লঞ্চ টার্মিনাল উপচে পড়া ভিড়. জ্যাম-অতিরিক্ত ভাড়ায় ভোগান্তি সড়কে
দেশের সব অফিস বন্ধ হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার। তারপরও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে ঈদ যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিল না। তবে গাবতলী ও সায়দাবাদ থেকে লোকাল বাসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়া যাত্রীদের কিছুটা চাপ ছিল।
চাপ বাড়ায় লোকাল সার্ভিসগুলোতে ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঘাট এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পরে যাত্রীরা। এছাড়া তীব্র গরমের কারণে তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
ঈদের এত কাছাকাছি সময়েও টার্মিনালে কোনো ধরণের ভিড় না থাকায় হতবাক পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও।
"এরকম ঈদ আগে কখনও দেখিনি। আগে এমন সময় আমরা কথা বলারও সময় পেতাম না। সিট তো দিতে পারতামই না, দাঁড়িয়েও যাত্রী নিতে হত। এবার যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। কোন ভিড় নেই", বলেন সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. আলামিন।
যদিও বাসগুলোতে ২৮-১ তারিখ পর্যন্ত কোনো সিট খালি নাই। তারপরও টার্মিনালে ভিড় না হওয়ার বিষয়ে এস আর ট্রাভেলস এর কাউন্টার মাস্টার (গাবতলী) সুজিত সাহা বলেন, "আমাদের ২৮-১ তারিখ পর্যন্ত সব টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। কোনো টিকেট খালি নাই। তবে ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কাউন্টার আছে। মানুষজন তাদের বাসার আশেপাশে কোনো এক কাউন্টার থেকে উঠে যাচ্ছে। তাই গাবতলীতে ভিড় হচ্ছে না।"
"মানুষ টার্মিনালে এসে টিকিট পাবে না বুঝতে পেরে এখানে এসে সময় নষ্ট না করে অন্যান্য লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে চলে যাচ্ছে," তিনি যোগ করেন।
গাবতলী টার্মিনালের পাশেই পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রীবোঝাই লোকাল বাস ছাড়তে দেখা যায়। সেখানে বিভিন্ন পরিবহনে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় ডেকে ডেকে যাত্রী তোলা হচ্ছিল।
তবে ভোক্তাধিকার অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে ভাড়া ১৫০ টাকা হয়ে যায়। পরে বেশি ভাড়া আদায়ের জন্য কয়েকটি পরিবহনকে ১০০০ টাকা করে জরিমানা করে ম্যজিস্ট্রেট।
এছাড়া গুলিস্তান থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৮০ টাকা ভাড়া হলেও ২০০ টাকা করে নেওয়ার আভিযোগ পাওয়া গেছে ইলিশ, ভিআইপি, প্রচেষ্টা, গ্রেট বিক্রমপুরসহ বেশ কয়েকটি বাসের বিরুদ্ধে।
এদিকে অন্যন্য পরিবহনের পাশাপাশি এবার মটরসাইকেল করে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ। ফলে সড়কে বেড়েছে মোটরসাইকেলের চাপ। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর থেকে টোলপ্লাজা পর্যন্ত মোটরসাইকেলের দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটেও ছিল মোটরসাইকেলের চাপ। এখানে দুপুরে ফেরি ভরে যায় শধু মোটরসাইকেলে। জানা যায় প্রায় ১ হাজার মটরসাইকেল উঠে পরে ফেরিটিতে, পরে এই অবস্থায়ই ঘাট ত্যাগ করে ফেরিটি।
এদিকে ঢাকা-সিরাজগঞ্জ সড়কে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে ঘরমুখো মানুষ।
এছাড়া মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়াঘাট ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেও ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের তীব্র চাপ ছিল। শুক্রবার ভোর থেকেই ঘাটে আসতে শুরু করে হাজার হাজার মানুষ।
উভয় জায়গায় ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট ও লঞ্চে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ ছিল।
বিআইডব্লিউটিসি সুত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ৯ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। অন্যন্য সময় এখানে তিন হাজারের মত যানবাহন পারাপার হতো।
দুপুর ১২ পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে শতাধিক বাস ও দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও শিমুলিয়া ঘাটে পাঁচশতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল বলে জানা যায়।
এদিকে বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার দেশের সড়ক-মহাসড়ক অনেক ভালো বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি এক কথা জানান।
এসময় তিনি ঈদে ঘরমুখো মানুষ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি, যাত্রীরা যাতে কোনো ধরণের ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে কঠোর নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
অন্যদিকে এইদিন শিমুলিয়া ঘাট পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কোনো ভিআইপিকে আগে সিরিয়াল না দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এছাড়া শিমুলিয়া ঘাটে চাপ ও বিড়ম্বনা এড়াতে যাত্রী ও যানবাহনচালকদের বিকল্প হিসেবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
শুক্রবারও মোটামুটি সিডিউল অনুযায়ীই কমলাপুর থেকে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন তেমন ভিড় ছিল না ঈদযাত্রীদের।
সকালের দিকে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে একটু ভিড় ছিল। তবে নিদিষ্ট সময়ে ট্রেন আসায় দুপুরের মধ্যে সেই ভিড় কেটে যায়। দুপুর ১২ টার দিকে মোটামুটি স্বাভাবিকই দেখা গেছে কমলাপুরের স্টেশনের চিত্র।
তবে সুন্দরবন ও নীলসাগর- এ দুইটি ট্রেন স্টেশনে আসতে প্রায় ৪৫ মিনিট বিলম্ব করে।
কমলাপুর রেলওয়ে ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো: আমিনুল হক জানান, "আজকে সারাদিনে ১২২টি ট্রেন ঢাকা স্টেশন থেকে আসবে এবং যাবে। এর মাঝে চারটি স্পেশাল ট্রেন আছে।"
তিনি যোগ করেন, "বিলম্বিত ট্রেন দুটির যাত্রাপথ অনেক দূর হওয়ায় এবং যাত্রী উঠানামা ও বিরতিতে কিছু সময় অতিরিক্ত ব্যয় হওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে সেই সময় কিভাবে কমিয়ে আনা যায়।"
তিনি আরও বলেন, গতকালও নীলসাগর ট্রেটি দুই ঘণ্টা লেট ছিল। আমরা আজকে সেটিকে এক ঘণ্টায় নামিয়ে নিয়ে এসেছি।
এবারের ঈদ যাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
লঞ্চে ছিল উপচে পড়া ভিড়
সকালের দিকে যাত্রীর চাপ খুব একটা না থাকলেও দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়তে শুরু করে রাজধানীর সদরঘাটে। সন্ধার পরে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বিকেলের দিকেই ঘাটে থাকা লঞ্চগুলোর ডেক যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে দুটো লঞ্চকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানাও করে।