মজুদ থাকার পরও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
কৃষকদের সুরক্ষা দিতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের প্রভাবে দাম বেড়েছে পণ্যটির। দেশের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের মজুদ থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অন্তত ১২-১৫ টাকা। খুচরা বাজারেও পণ্যটির ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
কৃষকদের সুরক্ষা দিতে গত ৬ মে থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র। এছাড়া আমদানির অনুমোদন দেওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির বন্ধের খবরে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ বাজারে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ প্রতিকেজি পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩৫-৩৮ টাকায়। গত সপ্তাহেও এর দাম ছিল ২২-২৩ টাকা। ভারতীয় ইন্দুরী জাতের পেঁয়াজ এখন প্রতিকেজি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ২৪-২৫ টাকা।
এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দামও কেজিপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪-৫ টাকা। পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতো ২৬-২৭ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৪ টাকায়। খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়েই চাহিদা মেটানো হয়। আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের মজুদ থাকলেও মোকামে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন এই বাজারে ৪০-৪৫ ট্রাক পেঁয়াজ আসতো। আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর তিনদিন আগে মাত্র ৫-৭ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছিল। এরপর থেকে দাম বাড়তে থাকে।"
"দাম আরো বাড়ার আশঙ্কায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) ৩০-৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে বাজারে। আমদানি শুরু না করলে সামনে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর ও টিসিবির তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২২-২৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৯ লাখ টন। এর আগে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন।
কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সংগ্রহত্তোর অপচয় হিসেবে ২৫ শতাংশ বাদ দিলে ব্যবহার উপযোগী পেঁয়াজ থাকে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকন টন। আবাদকৃত পেঁয়াজের প্রায় ২ শতাংশ পরবর্তী বছরের বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। সেই হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় ৯-১০ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজেও সরবরাহ ও বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ অপচয় হয়।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, "গত ছয় মাসে তিন বার পেঁয়াজ এসেছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে। মূলত স্থল বন্দর দিয়ে এই পণ্যটি আসে।"
ব্যবসায়ীদের সংগঠন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ আছে। তা দিয়ে আমাদের চলবে। পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজশাহী, বগুড়াসহ যেখানে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, সেখানে মনিটরিং বাড়াতে হবে। যেন মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি মুনাফা না করতে পারে।"
তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে আমদানির অনুমোদন (ইমপোর্ট পারমিট-আইপি) না দেওয়াই ভালো। কারণ এখন ডলার খরচ করা উচিত হবে না।