পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না কৃষক, লাভ ব্যবসায়ীদের
মেহেরপুরের গোপালনগর গ্রামের বর্গা চাষী আব্দুল জাব্বার এ মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। জমি লিজ থেকে শুরু করে পেঁয়াজ ঘরে তোলা পর্যন্ত বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ তোলার সাথে সাথেই বিক্রি করেছেন ১৭ টাকা কেজি। ফলে প্রতি বিঘায় তার লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
শুধু আব্দুল জব্বারই নন, জেলার অন্যান্য কৃষকরাও এভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন। পাইকারিতে ১৭-১৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন চাষীরা। শুক্রবার মেহেরপুর জেলায় পাইকারীতে প্রতিকেজি ৩২-৩৫ টাকা এবং খুচরায় ৪০-৪৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু, এর সুফল পাচ্ছেন না পেঁয়াজ উৎপাদনকারী চাষীরা। দরিদ্র চাষীদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে যারা সংরক্ষণ করেছেন তারাই মূলত বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
কৃষকের যেন দাম ভালো পায় সে বিবেচনায় সরকার পেঁয়াজ আমদানির বন্ধ রাখলেও এর পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেনা কৃষক। কারণ বেশিরভাগ পেঁয়াজই এখন ব্যবসায়ীদের হাতে।
কৃষিবিদরা বলছেন, কৃষককে পুরোপুরি সুবিধা দিতে হলে যখন মাঠ থেকে কৃষক পিঁয়াজ তুলবে তখনই আমদানি বন্ধ করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. এম হামিদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত মার্চ মাস থেকে কৃষক ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলেছে। কৃষকরা একটি অংশ উৎপাদনের পরপরই বিক্রিতে বাধ্য হয়।
"কারণ কৃষক সার বাকিতে কিনে। ধার পরিশোধের জন্য প্রথমেই বিক্রি করে দেয়। তবে এখন কিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক তাদের মতো সংরক্ষণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে। যারা এটা করেছে তারা সেই পেঁয়াজগুলোর দাম ভালো পাবে। তাতে একটু বাড়তি দামে ভোক্তারা কিনলেও কৃষক উপকৃত হবে।"
তিনি বলেন, যারা ইতোমধ্যেই কৃষকের কাছথেকে পেঁয়াজ কিনে মজুদ করেছে তারা লাভবান হবে। এর জন্য সরকারের এ সংক্রান্ত নীতি আরও শক্তিশালী করতে হবে
যাতে কৃষকের ঘরে যখন ফসল ওঠে তখন যেন আমদানি না হয়। যখন কৃষক পেঁয়াজ মাঠ থেকে তুলে সেই সমই আমদানিটা বন্ধ করা উচিৎ। তাহলে কৃষক বেশি লাভবান হবে।"
"সেই সঙ্গে কৃষক যেন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারে এ ব্যপারে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। কৃষককে প্রযুক্তিগত সহাহয়তাসহ প্রশিক্ষণ দিতে হব। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে হবে সমব্যয়ের মাধ্যমে এক হয়ে পণ্য সংরক্ষণে।"
রাজশাহীর পবার বায়া এলাকার পিঁয়াজ চাষী আব্দুল খালেক ১ বিঘা জমিতে পিঁয়াজ চাষ করেছেন। জমি থেকেই অর্ধেক পিঁয়াজ তিনি লোকসানে ৭০০ থেকে ৮০০টাকা দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি অর্ধেক পিঁয়াজ বাড়িতেই সংরক্ষণ করেছেন। লোকসান পুষিয়ে নিতে তিনি পিঁয়াজের দাম আরও বাড়লে তখন তা বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২০-২১ সালে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩৫ লাখ টন। ২০২১-২২ সালের জন্য চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টন।
আগামী বছর এই চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৩৬ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে তিন লাখ টনের ওপরে।
পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একই সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিতে শীর্ষে বাংলাদেশ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে এখন সাড়ে ৩৩ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় চীন ও ভারতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩৩.৬২ লাখ টন। পেঁয়াজের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ২৫-৩০ শতাংশ। সে হিসাবে নিট উৎপাদন প্রায় ২৩.৫৩ লাখ টন।
রান্নার সময় ফেলে দেওয়া অংশ ও নানাভাবে হওয়া অপচয় বাদ দিলে দেশে নিট চাহিদা ২৬ লাখ ৬১ হাজার টন। অর্থাৎ দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আড়াই থেকে তিন লাখ টন।
টিবিএস মেহেরপুর ও রাজশাহী প্রতিনিধিরা এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন।