‘ইভিএম ম্যানিপুলেট করা অসম্ভব’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) একটি নির্ভরযোগ্য মেশিন, একে কোনভাবে ম্যানিপুলেট করা সম্ভব নয় বলে বুধবার জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রযুক্তিবিদরা। ইভিএম ব্যবহারে রাজনৈতিক দলগুলোরই লাভ মন্তব্য করে তারা এটি ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন।
বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আমন্ত্রণে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদ ও শিক্ষকরা ইসিতে ইভিএম মেশিন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা নেন। এমনকি মেশিন খুলে এর গঠন পদ্ধতি ও বিভিন্ন সার্কিট পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা করেন যা সকাল সোয়া ১০টায় শুরু হয়ে চলে প্রায় চার ঘণ্টা।
পরে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা ডেমোনেস্ট্রেশন দেখেছি পুরোটা। ভেতরের খুঁটিনাটিও জেনে নিয়েছি ওনাদের কাছ থেকে। আর একটা মেশিন ওনারা আমাদের জন্য খুলে রেখেছেন, যাতে আইসি লেবেল পর্যন্ত দেখতে পারি, এগুলো কীভাবে মাউন্ট করা হয়েছে। কেউ যদি এগুলো ম্যানিপুলেট করতে চায়, সেটা কতটা কঠিন বা সোজা হবে সে ধারণা করার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে কনভিন্সড হয়েছি। অত্যন্ত চমৎকার একটি মেশিন।'
তিনি বলেন, 'এখানে ভোটিংটা অনেক নিখুঁতভাবে করা সম্ভব। একজন মানুষ অন্য মানুষের ভোট দেওয়ার বিষয়টা মোটামুটিভাবে অসম্ভব। মোটামুটি পারফেক্ট একটা মেশিন। আমাদের দেশের জন্য এটা অত্যন্ত সহজভাবে চালানো সম্ভব।'
তিনি যোগ করেন, 'খবরের কাগজে দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলো নতুন কমিশন তৈরিসহ তিনটা দাবির কথা জানিয়েছে। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, আপনারা যদি নতুন কমিশন তৈরি করতে পারেন, তখনো এই ইভিএম মেশিনটা ব্যবহার করবেন। আপনাদেরই লাভ হবে।'
এই প্রযুক্তিবিদ আরও বলেন, 'ম্যানিপুলেশন করার এখানে কোনো জায়গা নেই। ম্যানিপুলেশন করার জন্য যে লেভেলে যাওয়ার দরকার, সেই লেভেলে যাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব না। অপারেট করার শুরুতে এটা দেখানোর ব্যবস্থা আছে, যেখানে কী আছে, না আছে। এখন বিশ্বাস করবেন কি করবেন না, সেটা আপনাদের বিষয়।'
'এক মার্কার ভোট আরেক মার্কায় গিয়ে পড়বে, এটা এই মেশিন দ্বারা করা সম্ভব না। আমি সার্কিটগুলো খুলে দেখানোর জন্য বলেছিলাম। ম্যালফাংশন করতেই পারে, কিন্তু ম্যানিপুলেট করার কোনো সুযোগ নেই', তিনি আশ্বস্থ করেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, 'কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে, ম্যানিপুলেশনের কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটা বিষয় এমনভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, কেউ ইচ্ছা করলেই সেটা ম্যানিপুলেট করা সম্ভব না।'
তিনি আরও বলেন, 'এটা খুব ভালো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আমি আশা করি, এটার ডিসপ্লে করা হবে, সেটা টেস্ট করতে পারবে যে কোনো নাগরিক। তারা এসে দেখতে পারবে যে, এখানে সবকিছু ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা।'
রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে ড. কায়কোবাদ বলেন, 'তাদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের আইনে রয়েছে এবং সেটা তারা করবে। বায়োমেট্রিক সার্চ করে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করি। যে কোনো মেশিনের জন্য আধুনিকায়ন জরুরি এটার প্রতিটা ছোট ছোট অংশ যেভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, কেউ এসে এটাকে ম্যানিপুলেট করবে, এটা সম্ভব নয়।'
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএম মেশিন নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে করব, না ১০০ আসনে করব, না মোটেই করবো না; এগুলো যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হবে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যে ব্যবহার করা হবে কী হবে না।'
সিইসি বলেন, 'শতভাগ বিষয়টা আপেক্ষিক। আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি আমরা কিন্তু কারো মতামতকে উপেক্ষা করিনি। বিরোধীদল থেকে যে মতামত এসেছে- আমরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেইনি। আমরা অনেকগুলো মিটিং করেছি। আজকেও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বসেছি। এই মেশিনের ব্যাপারে উনাদের বক্তব্যের পরে কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি এই মেশিনের বিষয়ে আরও কয়েকটা মিটিং করবো। পলিটিক্যাল পার্টিকে ডাকা হবে।'
তিনি বলেন, 'একজন ট্যাকটিক্যাল ব্যক্তি পারবেন মেশিন নিয়ে মূল্যায়ন করতে। আমরা সেই পার্সপেক্টিভ থেকে টেকনিক্যাল পারসনদের ডেকেছি। পলিটিক্যাল পার্টিদেরও আমরা অনুরোধ করবো তাদের যে টেকনিক্যাল টিম আছে কিংবা যদি থাকে তাদের যাচাই করার জন্য।'
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'ইভিএম নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন ম্যানিপুলেশন করার সুযোগ নেই। আমার কিন্তু আস্থা রাখতে হবে ওইসব মানুষের ওপর যারা এই জিনিসগুলো বোঝেন, যারা প্রোডাক্টগুলো তৈরি করেছেন তাদের ওপর। প্রযুক্তিবিদদরা আশ্বস্ত হয়েছেন। আমরা আরও কয়েকটি বড় মিটিং করব। পলিটিক্যাল পার্টি যেহেতু বাইরে মাঠে বলছেন, এটা মন্দ মেশিন ভালো মেশিন না। আমরা লিখিতভাবে জানতে চাইব আপনারা কী কী সমস্যা পাচ্ছেন। আমাদেরকে লিখিতভাবে অবগত করুন। আমরা যেন সিস্টেমেটিক্যালি অ্যাড্রেস করার সুযোগ পাই।'
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মতিন সাদ আবদুল্লাহ, ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।