বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িত থাকা সত্ত্বেও সবাইকে ক্ষমা করেছেন নতুন এমডি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলায়েন্সের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গুরুতর।
বিমানের টিকিট বেচা নিয়ে দুর্নীতির তদন্তে সংস্থাটির সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
এয়ারলায়েন্সের অ্যাকাউন্ট্স বিভাগের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তাও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে টিকিট বিক্রির দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছিল।
এছাড়া বিমানের আর্থিক লেনদেনের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, সেই কর্মকর্তা দুর্বল একটি বেসরকারি ব্যাংকে বিমানের পেনশন তহবিল জমা রেখেছিলেন। ব্যাংকটি শেষপর্যন্ত আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা হারালে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান এয়ারলায়েন্স।
এই কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিমানের আরও ৪০ কর্মকর্তা- যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি প্রদান বা চাকরিচ্যুত করা হয়।
কিন্তু বিমানের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল দায়িত্ব পাওয়া মাত্রই শাস্তিস্বরূপ স্রেফ ভর্ৎসনা জানিয়ে সকল কর্মকর্তাকে দায়িত্বে পুনর্বহাল করেন।
বিমানের পারফরম্যান্সে এর ফলটাও তাৎক্ষণিকভাবেই দেখা যায়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে অফলাইনে টিকিট বেচার পুরোনো নিয়ম ফিরিয়ে আনে।
এরফলে যাত্রী পরিবহনের হার ভালো হওয়া সত্ত্বেও এপ্রিল মাসে বিমানের আয় ২০০ কোটি টাকা হ্রাস পায়। হঠাৎ আয় নেমে যাওয়ায় বিমান নিজেই আরেকটি তদন্ত শুরু করে।
একইসঙ্গে সময়মতো বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণের অন-টাইম পারফরম্যান্সও কমেছে। ২০১৯ সালে বিমানের ফ্লাইট ডিপারচারের (উড্ডয়ন) সেবা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ২০২০ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত ছিল। এখন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামালের নেতৃত্বে তা ৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
এদিকে এক পাইলট স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মাঝ-আকাশে বিমানের জরুরি জ্বালানি ব্যবস্থা চালু করেন যার ফলে উড়োজাহাজের উভয় ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় বিমানের ১৫ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ১৪ জন পাইলট নিয়োগে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে বিমান।
ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট
২০১৯ সালের তদন্তে মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল আলমকে টিকিট নিয়ে দুর্নীতির প্রধান দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আশরাফুল আলম অনলাইনে টিকেট বেচা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং ম্যানুয়াল ব্যবস্থায় টিকেট বেচায় ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করছেন। এরফলে বিমান ফাঁকা অবস্থাতেই উড়াল দিত, কিন্তু যাত্রীরা টিকিট পেত না। টিকিট বিক্রির অনিয়মের কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল বিমান।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বিমান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু আবু সালেহ মুস্তফা কামাল বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার এক মাসের মাথায় গত বছরের মার্চে আশরাফুলকে দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয়।
কামাল তাকে কেবল ভর্ৎসনা করে সবরকমের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন, যদিও তার সে এখতিয়ার ছিল না।
তার পদচ্যুতির পর বিমান পুরোপুরি অনলাইন টিকেট সিস্টেম চালু করেছিল। এর ফলে বিমানের টিকেটের বিক্রি ও আয় বাড়ে।
এখন বিমানের টিকেট বিক্রির দায়িত্ব আগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হাতে এবং এর ফলে টিকেট বিক্রি থেকে আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমান।
আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় অ্যাকাউন্টস বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে। তিনিও নিজের পদ ফিরে পেয়েছেন।
তদন্তে জানা যায়, তিনি এইচএসি ট্রাভেলস নামক একটি ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে তাদের প্রয়োজনের চেয়ে খুবই কম মূল্যে টিকেটের বিপরীতে বিমানকে ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, লন্ডনে আর্থিক ব্যবস্থাপক থাকার সময় টিকেট বিক্রির অর্থও বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা দেননি মহিউদ্দিন। তদন্তে মহিউদ্দিনের আরও একটি অপরাধের কথা জানা যায়। সংশ্লিষ্ট আইটি বিভাগকে না জানিয়েই একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে বেতনভাতা'র একটি সফটওয়্যার ক্রয় করে বিমানকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের থেকে কোনো সম্মতি না নিয়েই মহিউদ্দিন ২০২০ সালের মার্চ মাসে কর্মীদের পহেলা বৈশাখের ভাতা প্রদান করেন। করোনার সময় বিমান যখন আর্থিকভাবে পর্যুদস্ত, তখন ভাতা হিসেবে ২.২১ কোটি টাকা বন্টন করেন তিনি। যদিও মহামারির সময় বিমান তার কর্মীদের সব ধরনের বাড়তি সুবিধা স্থগিত করেছিল।
এতসব দুর্নীতি ও অপরাধ করা সত্ত্বেও মোস্তফা কামাল তাকে সব ধরনের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি প্রদান করেন।
বৈশাখী ভাতা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে বিমানের ফাইন্যান্স কন্ট্রোলার আবু সায়েদ মো. মঞ্জুর ইমামের বিরুদ্ধেও৷ এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিমানকর্মীদের পেনশন তহবিলের অপব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। তিনি পেনশন তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা নিয়ে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করেন। এর জন্য তিনি ট্রাস্টি বোর্ড থেকে কোনো অনুমতি নেননি।
মঞ্জুর ইমাম নিজেও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। আর পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া আবশ্যক। এছাড়া ওই অর্থ তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বদলে বেসরকারি ব্যাংকে জমা করেন। নিজে অবৈধ সুবিধা নিতে কর্মীদের অর্থকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন তিনি।
তদন্তে তার এসব অপকর্মের প্রমাণ পাওয়া গেলে পূর্ববর্তী প্রশাসন তাকে অবৈতনিক ছুটিতে পাঠায়। এরপর তাকে দুর্নীতি বিষয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই ব্যবস্থাপনায় বদল ঘটে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর কামাল সব ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে ইমামকে অব্যাহতি দিয়ে কেবল তিরস্কার করে পুনরায় কাজে নিযুক্ত করেন।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে কামাল স্বীকার করেছেন, তিনি বিমানের ৪৩ কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
তিনি কাউকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিতে পারেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে কামাল উত্তর দিয়েছিলেন, বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদের আপিলের সাপেক্ষে তাদেরকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
তবে বিমানের চাকরির নিয়ম অনুযায়ী, অভিযুক্তকে অবশ্যই বোর্ডের কাছে আপিল করতে হবে। তাদেরকে দায়মুক্তি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নেই।
উড়োজাহাজের ক্ষতি করেও চাকরিতে বহাল তবিয়তে
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার পথে মাঝ-আকাশে বিমানের নতুন ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডা ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের ইমার্জেন্সি পাওয়ার সিস্টেম চালু করেন এর পাইলট আলী রুবিয়াৎ চৌধুরী। এতে উড়োজাহাজটির দুটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উড়োজাহাজ পরিচালনার প্রথাগত যে ব্যবস্থা তাকে বলা হয়- স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম বা এসওপি। তদন্তে প্রকাশ পায়, ক্ষতিটি হয়েছিল পাইলটের এসওপি ভঙ্গের কারণেই। ওই দূর্ঘটনার পর থেকেই উড়োজাহাজটি গ্রাইন্ডেড বা উড্ডয়নহীন অবস্থায় রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনগুলি মেরামতে ১৫ লাখ ডলার খরচ করতে হয় আকাশপথের জাতীয় পরিবহন সংস্থাটিকে ।
গত ১১ মে অনুষ্ঠিত বিমানের নির্বাহী পরিচালকদের এক সভায় তদন্ত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- বিমান যাতে বিমা দাবি করতে পারে সেজন্য এসওপি ভঙ্গের ঘটনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে না। সভা-বিবরণী অনুসারে জানা যায়, সিদ্ধান্তটির অনুমোদন দেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
যদিও এর আগে এ ধরনের দুর্ঘটনার পেছনে পাইলটের ত্রুটি থাকার পরও বিমা দাবি পেয়েছে বাংলাদেশ বিমান। তবে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে প্রতীয়মান হয়- কীভাবে সংস্থাটি নিজেদের ত্রুটি ঢাকতে সচেষ্ট এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনোপ্রকার শাস্তি না দিয়ে- তা থেকে দায়মুক্তিও দিচ্ছে।
যেমন- ভুল করে দুটি ইঞ্জিন বিকল করার পরও ক্যাপ্টেন রুবিয়াৎ কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন।
সভার ধারা-বিবরণী অনুসারে, উড়োজাহাজের ক্ষতি করার পরও ক্যাপ্টেন রুবিয়াৎকে অপারেশন বা বিমান পরিচালনায় নিয়োজিত রাখার পরামর্শ দেন বিমানের ফ্লাইট অপারেশন্স পরিচালক ক্যাপ্টেন মো. সিদ্দিকুর রহমান।
সম্প্রতি বিমানের সাথে গণমাধ্যমের এক মত-বিনিময় সভায় মোস্তফা কামালের কাছে এসওপি ভঙ্গের ঘটনা তদন্ত প্রতিবেদনে গোপন রাখার যৌক্তিকতা জানতে চাইলে তিনি এ প্রশ্নে উত্তর সিদ্দিকুর রহমানকে দিতে বলেন। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উন্মুক্ত সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না।
এর আগে কোনো কারণ-দর্শানো ছাড়াই সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কামাল।
পাইলট নিয়োগে অনিয়ম
বিমানের ব্যবস্থাপকরা আবারো পাইলট নিয়োগে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। কারণ, ১৪ জন পাইলট নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা ওই পদের জন্য দরকারি যোগ্যতা-সম্পন্ন ছিলেন না। এমনকী বিদ্যমান পাইলট নিয়োগ নীতি ভঙ্গ করেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়- যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান।
পাইলট নিয়োগে সাম্প্রতিক দুর্নীতির ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নজরেও এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাত উদ্ধৃত করে সম্প্রতি বিমানকে একটি চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এতে ১৪ জন পাইলট নিয়োগে সাম্প্রতিক দুর্নীতির উল্লেখ ছিল।
গত ২৫ এপ্রিল দেওয়া চিঠিতে মন্ত্রণালয় বিমানের ব্যবস্থাপকদের পাইলট নিয়োগের বিষয়ে একটি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতেও বলা হয়।
এর আগে ২৮ পাইলট নিয়োগে অনিয়মের কেলেঙ্কারিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মুনিম মোসাদ্দেক।
সম্প্রতি চুক্তি-ভিত্তিক পদ্ধতিতে ১৪ পাইলটকে নিয়োগ দেয় বিমান, কিন্তু এ পুরো প্রক্রিয়ায় নিয়োগ-নীতি অগ্রাহ্যের অভিযোগ রয়েছে। তার ওপর আবার নিয়োগ পেয়েছেন বিতর্কিত ও বাতিল প্রার্থীরা। এমনকী বিদ্যমান নীতিমালা ভঙ্গ করে নতুন এসব পাইলটের সাথে তাদের সুবিধামতো চাকরির চুক্তি করা হয়।
যেমন অদক্ষতার কারণে ইউএস বাংলা এবং রিজেন্ট এয়ারলাইনস থেকে বরখাস্ত হওয়া সাদিয়া আহমেদের একটি দুর্ঘটনার রেকর্ডও আছে। তাকে বিমানের বোয়িং-৭৭৭ উরোজাহাজের পাইলট হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাত উল্লেখ করে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন প্রতিবেদনে এটি বলা হয়েছে, যা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পাঠানো হয়।
সাদিয়ার পরীক্ষা নিয়েছিলেন, বিমানের প্রশিক্ষণ প্রধান ও তার স্বামী ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ।
বিমানের নিজস্ব খরচেই বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজের সিমুলেটর ট্রেনিং নিতে সাদিয়াকে ব্যাংকক পাঠানো হয়। এর আগে সাদিয়াকে সিমুলেটর ট্রেনিংয়ের জন্য ইস্তাম্বুল পাঠিয়েছিল রিজেন্ট এয়ারলাইন্স, কিন্তু সেখানে তাকে অযোগ্যতার কারণে বাদ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন।
তাই এবার সাদিয়া যেন যোগ্য হিসেবে নির্বাচিত হন- সেজন্য প্রভাব খাটিয়ে রাতারাতি সিমুলেটর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জাকার্তা থেকে বদলে ব্যাংককে নির্ধারণ করেন সাজিদ।
এর আগে চুক্তি-ভিত্তিক পাইলট নিয়োগের চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকত যে, প্রথম ফ্লাইটের প্রশিক্ষণ খরচ পাইলটকে বহন করতে হবে। তবে নতুন করে ১৪ পাইলট নিয়োগের ক্ষেত্রে এই বিধান সরিয়ে ফেলা হয় এবং কোন পক্ষ খরচ বহন করবে তার কোনো উল্লেখ ছিল না।
প্রশিক্ষণ বিভাগ থাই ফ্লাইট ট্রেনিং সেন্টারের হয়ে ১৪ পাইলটের প্রশিক্ষণের জন্য ৪৪.৭৭ লাখ টাকার পেমেন্ট ইনভয়েস পাঠানোর পর বিষয়টি বিমানের নজরে আসে।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, স্ত্রী সাদিয়াকে সুবিধা দিতেই চুক্তি থেকে প্রশিক্ষণ খরচের শর্তটি বাদ দেন সাজিদ।
সাদিয়ার চাকরির চুক্তিতে আরেকটি শর্ত যোগ হয়েছে, যার ভিত্তিতে তিনি যেকোনো সময় তিন মাসের নোটিশে চাকরি ছাড়তে পারবেন। এর ফলে বিমানের খরচে সমস্ত প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরও চাকরি ছেড়ে অন্য যেকোনো এয়ারলাইন্সে যোগদানের সুযোগ পেয়েছেন সাদিয়া।
নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া অন্যান্য পাইলটের ব্যাকগাউন্ডও বিতর্কিত এবং তারা নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা-সম্পন্ন নন বলে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এসব অনিয়মের প্রেক্ষাপটে- পাইলট নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।