পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনায় বন্যা, উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ
নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দুর্গাপুর পয়েন্টে সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর প্রায় কাছাকাছি কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর পানিও। এ দুই উপজেলার সদর ছাড়াও অসংখ্য গ্রামের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। দুর্গাপুর পৌর শহর এবং কলমাকান্দা বাজারের কিছু কিছু এলাকায় চলছে নৌকাও।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ উল্লিখিত দুই উপজেলায় বন্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ভারি বৃষ্টিপাত এবং মেঘালয় থেকে সোমেশ্বরী, গণেশ্বরী ও উদ্বাখালি নদী দিয়ে বয়ে আসা পহাড়ি ঢলের পানির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোণা জেলায় ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি যেন থামছেই না। ওদিকে আবার সোমেশ্বরী, গণেশ্বরী এবং উব্দাখালি নদী দিয়ে ধেয়ে আসছে পাহাড়ি ঢলের পানি। বালির স্তর জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাবার কারণে নদীগুলোর পানি সহজে ভাটির দিকে যেতে পারছে না।
এ কারণে দুর্গাপুর পৌর এলাকার কাচারি মোড়, মোক্তারপাড়া, চর মোক্তারপাড়া, তেরিবাজার, মুজিবনগর এবং পৌর এলাকার বাইরের বালিকান্দি, খরস, চক লেঙ্গুরা, ঝাঞ্জাইল, শান্তিপুর, মাদুরপাড়, জয়নগর ও রামবাড়ি এলাকার অসংখ্য বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে। দুর্গাপুর পৌর এলাকার কোথায়ও কোথায়ও নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। অনেকে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
অন্যদিকে কলমাকান্দা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সবকটিই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কলামাকান্দা বাজারের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। প্লাবিত এলাকার কিছু পরিবার কলমাকান্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের নিচতলাতেও ঢুকে গেছে বন্যার পানি। এ কারণে চিকিৎসা সেবাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বড়খাপন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের সব গ্রামই প্লাবিত। অনেকে গবাদিপশু রাখারও জায়গা পাচ্ছেন না। বাড়িঘর ছেড়ে মানুষ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।
বিরামহীন বৃষ্টির কারণে এ দুই উপজেলার মানুষজন ঘর থেকেই বেরোতে পারছে না। বন্ধ হয়ে গেছে বহু দোকানপাট। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ। চুলা ডুবে যাওয়ায় অনেকে করতে পারছেন না রান্নাবান্নাও।
কলমাকান্দার বাসাউড়া গ্রামের বিভাস সাহা বলেন, বন্যায় আমাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। অনেকের রান্নাঘরে পানি ঢোকায় রান্নাবান্নাও করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।
এদিকে সোমেশ্বরী নদীর পানির চাপে দুর্গাপুরের সীমান্ত এলাকার ভবানীপুর-ফারাংপাড়া এলাকার একটি সীমান্ত সড়কে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজীব উল আহসান সড়কের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, 'বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষদের আশ্রয় দিতে আমরা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা দুই উপজেলায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিছু কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আসতে শুরু করেছেন।'
জেলা প্রশাসক আরও জানান, দুই উপজেলার দুর্গত মানুষদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল, প্রতি উপজেলার জন্য ১ লাখ করে টাকা এবং ৫শ প্যাকেট করে শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বারহাট্টা এবং মোহনগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও বন্যা দেখা দিয়েছে। বারহাট্টার সিংধা, আসমা, রায়পুর এবং মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া ও মাঘান সিয়াধারের বেশকিছু গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মোহনগঞ্জ পৌর এলাকারও কিছু বাসাবাড়ি প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।