নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে বন্যার অবনতি, ইউএনও অফিস-হাসপাতালেও আশ্রয়কেন্দ্র
নেত্রকোনার হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, সদর, আটপাড়া ও মদন উপজেলার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আর দুর্গাপুর উপজেলার গ্রামগঞ্জ থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত ও খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, সোমেশ্বরী, ধনু ও কংস নদীর পানিবৃদ্ধি এখনও অব্যাহত। কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার, জারিয়া পয়েন্টে কংস নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার এবং খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে দুর্গাপুর পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ২৭৪ সেন্টিমিটার নিচে চলে এসেছে।
খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান, ওই উপজেলার ৭০টি গ্রামের সবকয়টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের বেশিরভাগ লোকের ঘরে বন্যার পানি ঢোকায় রান্নাবান্দা বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গত পরিবারগুলো সহায়-সম্পদ ও গবাদিপশু নিয়ে ৫২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
"অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আশ্রয়কেন্দ্র খুলতে হয়েছে। খালিয়াজুরী সদর ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং সহায়-সম্পদ নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা তাদের শুকনো খাবার সরবরাহ করছি," যোগ করেন তিনি।
এ উপজেলা সদরের বেশিরভাগ সরকারি অফিস এবং অফিসার ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলো বন্যা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসার নিচতলায় কোমরপানি উঠেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অফিসে ও হাসপাতাল ভবনে রাতযাপন করছেন।
ওই উপজেলার খলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব সরকার বলেন, "খলাপাড়া বাজারসহ এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে মানুষ পানিবন্দী হয়নি। রাস্তাঘাট অথৈ পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষ ঘর থেকেই বেরোতে পারছেন না। এছাড়া গ্রামের একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্গত মানুষের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় এবং লাকড়ি না থাকায় অনেকে রান্না পর্যন্ত করতে পারছেন না।"
ইউএনও জানান, রোববার সকাল থেকে ১৩০ জন সেনাসদস্য উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ কাজে সহায়তা শুরু করেছেন।
এদিকে কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, আটপাড়া এবং মদন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরের কিছু কিছু এলাকা এখনও সম্পূর্ণভাবে পানিতে নিমজ্জিত। অনেকে বাসাবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে বা দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
ওই উপজেলা সদরের চানপুর রোডের বাসিন্দা শিক্ষক ঝুলন সরকার জানান, "এ কয়দিন বাসায় থাকার চেষ্টা করেছি। এখন রান্নাবান্না করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই আজ গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছি।"
এদিকে, দুর্গাপুরের গ্রামগঞ্জ থেকে বন্যার পানি সরতে শুরু করলেও পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতিচিহ্ন। বন্যার পানির চাপে ও স্রোতে বহু বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। নতুন করে নির্মাণ বা মেরামত ছাড়া অনেকের বাড়িঘরে ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।