ঢাকাকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করতে ৩০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৩০ বছর মেয়াদী ইন্টিগ্রেটেড সিটি মাস্টারপ্ল্যান ফর ঢাকা (২০২০-২০৫০) প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এটি বাস্তবায়িত হলে পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট সিটি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ঢাকা গণপরিবহন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মহাখালী বাস টার্মিনাল ভেঙে নতুনভাবে পুনঃনির্মাণসহ বিআরটি লাইন-৩ এর করিডোর রাস্তা উন্নয়ন কার্যক্রম করা হবে।
লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্পমেয়াদী কাজের অংশ হিসেবে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে পানি প্রবাহ সচল রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পলি অপসারণ, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার এবং দুই পাশের ফেসিং স্থাপনের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, "দীর্ঘমেয়াদী কাজের অংশ হিসেবে 'বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন কাজ' বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে।"
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উপকূলীয় জেলায় লবণাক্ততা দূরীকরণ প্ল্যান্টসহ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর আওতায় পুকুর খনন ও পুনঃখননসহ সৌরচালিত স্যান্ড ফিস্টার এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিতকল্পে গত এক দশকে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সম্প্রতি ১৬ হাজার ১৭৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় ১০টি জেলায় দুই লাখ ছয় হাজার ৮৭২টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া এসব জেলায় পুকুর খননকাজ চলছে।
তিনি জানান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) এবং ইউএনডিপির যৌথ ব্যবস্থাপনায় ২৭ হাজার ৬৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানিয়েছেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক দেশের ২৭১টি উপজেলায় প্রায় ৫০ লাখ নলকূপের আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ ৫ হাজার অর্থাৎ ২৯ শতাংশ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক অতিমাত্রায় পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ৩৩৫টি উপজেলায় তিন হাজার ২০০টি ইউনিয়ন পরিষদ ও এনজিওর মাধ্যমে ৮০ লাখ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তারমধ্যে পানের অযোগ্য নলকূপে লাল রং ও পানযোগ্য নলকূপে সবুজ রং করা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার। আর ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন সক্ষমতা ২৭০ থেকে ২৭৫ কোটি লিটার। অর্থাৎ চাহিদা অনুযায়ী পানির সরবরাহে ঘাটতি নেই।
তিনি বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণের কাজটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পলি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড, অ্যালাম সালফেট ও ক্লোরিনেশনের মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়। ডব্লিউএইচও অ্যান্ড ইসিআর ৯৭ অনুসরণ করে পানির গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার পর নেটওয়ার্কে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ঢাকা ওয়াসার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নিজস্ব ল্যাবরেটরি ও আইসিডিডিআরবি ল্যাবে নিয়মিত পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয়।