দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দুর্দশার অবসান হলো
আজ শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শেষ হয়েছে। রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণের জেলাগুলির স্থলপথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় এই সেতু চালুর আগে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের ভোগান্তির কোনো সীমা ছিল না।
নদীতে ফেরি করে পারাপারের সময় মানুষের দুর্ভোগ ছিল বছরজুড়ে। শীতকালে নদীর বুকে ঘন কুয়াশা বা বর্ষায় তীব্র স্রোতে প্রায়ই বন্ধ থাকতো মাওয়া ও পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কার্যক্রম। ফেরির অপেক্ষায় বসে বসে মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না।
ঈদ ও অন্যান্য ছুটির সময়ে ফেরির অপেক্ষায় যানজট সৃষ্টি হতো ঘাটে। কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে কখনোসখনো এই যানজট দূর হতে কয়েকদিন লেগে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। প্রমত্তা পদ্মার বুক চিড়ে কোনো সড়ক সংযোগ না থাকায় সংকাটপন্ন রোগীদের পথেই শারীরিক অবনতি ঘটতো, ফেরির অপেক্ষায় ঘাটে অপেক্ষা করতে করতে এভাবেই মারা গেছেন অনেকে।
পদ্মা সেতুর কল্যাণে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা এখন সড়কপথে সরাসরি ঢাকা আসতে পারবেন। ফেরিঘাটের বিভীষিকাময় দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়েছে। সেতু দিয়ে তারা মাত্র ছয় মিনিটে নদী পার করতে পারবেন। ঘাটে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের কাহিনি এবার চিরদিনের মতো বিদায় নেবে।
শনিবার ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল-সড়ক এ সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণাঞ্চলসহ পুরো দেশবাসীর জন্যই যা ছিল ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত।
স্বাধীনতার প্রায় ৫১ বছর পর রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সড়কপথে সংযোগ পেল দক্ষিণাঞ্চলবাসী। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে রেল সংযোগ। ছয় মাস পর যাত্রীরা ট্রেনে করেও সেতু পারি দিতে পারবেন।
বাগেরহাটের মোংলা বন্দর এবং সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে মালামাল পরিবহনে নতুন গতি যোগ করবে এ সেতু। সহায়ক হবে রপ্তানি বাণিজ্যে এবং স্থানীয় বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহকে সহজতর করবে।
বর্তমানে খুলনা থেকে প্রতিদিন ১৬০ টন চিংড়ি ঢাকায় আসে। এছাড়া, মোংলা বন্দর দিয়ে বছরে ৫০০ কোটি টাকার পাট রপ্তানি করা হয়।
সেতুর সাথে নির্মিত হয়েছে একটি গ্যাসের পাইপলাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোয় গ্যাস সংযোগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হলো। তুলনামূলক পশ্চাদপদ এ অঞ্চলে পাইপলাইনে আসা গ্যাস শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।