অভিনেতা অপূর্বর ডিভোর্স, যা বললেন দুজন
খবরটি চাপা ছিলো এতদিন। কিন্তু রোববার সন্ধ্যার পর থেকে সেটি আর চাপা থাকেনি। টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও তার স্ত্রী নাজিয়া হাসান অদিতি বিচ্ছেদের খবর জানতে পারে সবাই।
গতকাল ১৭ মে সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে রিলেশনশিপের জায়গায় 'ডিভোর্সড' লেখেন নাজিয়া হাসান অদিতি। এবার তাকে 'ভাবী' ডাকতে মানা করে দেন। তারপরই মূলত আলোচনায় আসে অপূর্ব-নাজিয়ার বিচ্ছেদের বিষয়টি। অবশ্য অনেকদিন ধরে দু'জন আলাদা ছিলেন বলে জানা গেছে।
২০১১ সালের ১৪ জুলাই নাজিয়া হাসান অদিতিকে বিয়ে করেন অপূর্ব। ২০১৪ সালে অপূর্ব-অদিতির ঘরে এসেছে সন্তান আয়াশ। এরইমধ্যে অপূর্ব ও অদিতি পুত্র আয়াশও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিনয় করেছে বাবার সঙ্গেও। নয় বছর পর বিয়ের বিচ্ছেদ হলো অপূর্বর।
এর আগে ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভাকে বিয়ে করেছিলেন অপূর্ব। যদিও এর পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ডিভোর্স হয়ে যায় তাদের। ওই বছরের ১৪ জুলাই অপূর্ব পারিবারিকভাবে নাজিয়া হাসান অদিতিকে বিয়ে করেন।
নিজেদের বিচ্ছেদ নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় নাজিয়া হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন। ইংরেজিতে লেখা পোস্টটি বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়-
"সবাইকে আসসালামুয়ালাইকুম।
জিয়াউল ফারুক অপূর্ব! একজন অসাধারণ বাবা, স্নেহশীল ভাই, দায়িত্বশীল পুত্র এবং একজন ভালো মানুষ হিসেবেই তাকে দেখেছি আমি। একজন চমৎকার মেধাবী মানুষ, যিনি তার কাজ দিয়ে অর্জন করে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ ভক্তের ভালোবাসা। নিজের যোগ্য অবস্থানেই আছে সে। দয়া করে আপনারা তার কাজ দিয়ে তাকে বিবেচনা করুন, তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নয়।"
দুর্ভাগ্যবশত বেশ কয়েকটি কারণে আমরা আর একসঙ্গে নেই। কিন্তু ওর সুখী ও সফল জীবন কামনা করি আমি। ও আমাকে আমার জীবনের সেরা উপহারটা দিয়েছে- আমার ছেলে আয়াশ এবং ভালোবাসা আর স্নেহে ভরা একতা পরিবার। এজন্য আমি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকব।
এই সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের দুজনের কাউকেই ভুলভাবে বিচার করবেন না দয়া করে। সুখে-দুখে আপনারা আমাদের ভালোবেসেছেন, পাশে থেকেছেন। ভবিষ্যতেও এমনটা করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
সকল সাংবাদিক ও রিপোর্টারদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, দয়া করে কোন মিথ্যা-বানোয়াট খবর তৈরি করবেন না। আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন। সবাই নিরাপদে থাকুন।"
এদিকে বিচ্ছেদের খবর জানার পর অসংখ্যবার অপূর্বর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এরপর সাবেক স্ত্রী নাজিয়ার স্ট্যাটাসের পর নিজের অবস্থান পরিস্কার করে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন অপূর্ব।
সেখানে লেখা ছিল-
"আসসালামুআলাইকুম।
অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে চাই, নাজিয়া হাসানের সঙ্গে কাটানো আমার ৯ বছরের চমৎকার যাত্রাটি অবশেষে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দিকে মোড় নিয়েছে। এই ঘটনায় আমি স্তব্ধ। যদিও এরকম একটি পরিণতির কথা আমাদের দুজনের কেউই ভাবিনি, তবে দুঃখজনকভাবে জীবন আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে।
এতগুলো বছর আমরা একস্নগে ছিলাম। ও একজন অসাধারণ সঙ্গী হিসেবে এবং আমার একজন সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে সবসময় আমার পাশে ছিল। আমার অনেক সাফল্যের পেছনেও মূল চালিকাশক্তি ছিল অদিতি। ও একজন অসাধারণ মানুষ, একজন আত্মবিশাসী তরুণ উদ্যোক্তা এবং সবচাইতে বড় কথা, একজন দয়ালু ও মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ।
জীবনে অনেক সাফল্য অর্জন করেছি আমি, কিন্তু তারপরও আমার সবচাইতে বড় অর্জন- আমাদের ছেলে আয়াশ। পিতৃত্বের এই অসাধারণ অনুভূতি উপহার দেওয়ার জন্য নাজিয়াকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না, ওর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার সন্তানের চমৎকার মা সে। আমাদের সন্তানকে বড় করে তোলার যাত্রায় আমরা পরস্পরের পাশে থাকব।
বিয়ের মতো পবিত্র একটি বন্ধন ভাঙার ফলে অনেক রকমের প্রশ্ন জাগতে পারে সবার মনে, ব্যাপারটা আমি বুঝি। তবুও আমি আমার সহকর্মী ও আমার অগণিত ভক্ত-শুভাকাংক্ষীদের কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের বিষয়টা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন। দয়া করে বোঝার চেষ্টা করবেন, এই সিদ্ধান্ত আমাদের সবার মঙ্গলের জন্যই। এই সিদ্ধান্তে আমাদের দুই পরিবারই আমাদের পাশে থেকেছেন। এবং আমি আশা করব আপনারাও আমাদের পাশে থাকবেন, যাতে করে নাজিয়া আর আমি এই কঠিন সময়টুকু পার হয়ে এগিয়ে যেতে পারি।
আমাদের তিনজনের জন্য দোয়া করবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো রাখুন।"
পরে রোববার মধ্যরাতে আরও একটি স্ট্যাটাস দেন অপূর্ব। সেখানে তিনি সবাইকে অনুরোধ করে বলেন,
"ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গসিপ করা এবং তীর্যক, মিথ্যা বানোয়াট মন্তব্য করে তাদের কষ্ট বাড়িয়ে দেওয়ার মতো খারাপ কাজ গুলো থেকে সবাই বিরত থাকবেন এবং এর মধ্যে রসালো কোন গল্প তৈরী করে সংবাদ করার চেষ্টা করবেন না, প্লিজ। অত্যন্ত সম্মানের সাথে জানাচ্ছি আমি এবং আমার স্ত্রী অদিতি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাধানের মধ্যদিয়ে আমাদের সম্পর্কের আইনগত ভাবে ইতি টেনেছি। কোন সংবাদ মাধ্যম এই ব্যাপারটাতে তৃতীয় কাউকে জড়িয়ে কোন ধরনের ভুল সংবাদ প্রকাশ করলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আইনগত ব্যবস্থা নিব। অলরেডি প্রকাশিত কিছু সংবাদের লিংক আমি সংগ্রহ করেছি। এখানে আরো উল্লেখ্য আমি অদিতিকে সম্মান করি এবং আজীবন করবো। সুতরাং কোনভাবেই অদিতিকে অসম্মান করে তার পাশে অন্য কারো নাম আমি সহ্য করবো না। ভুলে যাবেন না অদিতি এখন আইনগত ভাবে আমার স্ত্রী না থাকলেও সে আমার সন্তানের মা।"
তবে টেলিভিশনের জনপ্রিয় তারকা অপূর্ব এমন বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। বিভিন্ন বাংলা নাটকের গ্রুপ ও সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে অপূর্ব ভক্তরা তাদের অভিমত জানান।