অভিনয়ে নিজেকে শূন্য দেব: নুসরাত ফারিয়া
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। মাত্র ছয় বছরের ক্যারিয়ারে মুক্তি পেয়েছে তার ১৮টি চলচ্চিত্র।
সমানে অভিনয় করেছেন ঢাকা ও কলকাতার ছবিতে।
মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার অভিনীত আরও কয়েকটি ছবি। এসব নিয়েই তিনি কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ন্ডের সঙ্গে।
টিবিএস: আপনার এই সময় ব্যস্ততা কী নিয়ে? সিনেমার শুটিং তো পুরোদমে শুরু হয়নি।
নুসরাত ফারিয়া: বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। এছাড়া সিনেমার ডাবিং করতে হচ্ছে। ক'দিন আগে 'পাতাল ঘর' সিনেমার ডাবিং শেষ করলাম। বার্জারের একটা বিজ্ঞাপনের শুটিংও শেষ করলাম। সামনে চাল-ডালের একটা বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে হবে। আসলে আমি বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তাই বছরের একটা সময় বিজ্ঞাপনের জন্য সময় রাখতে হয়।
টিবিএস: আপনার বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। কোনটা নিয়ে কেমন প্রত্যাশা?
নুসরাত ফারিয়া: প্রতিটি ছবি নিয়েই আমার প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। 'অপারেশন সুন্দরবন', 'পাতাল ঘর', 'ঢাকা ২০৪০'- সবগুলোই নিয়েই দারুণ প্রত্যাশা। আসলে প্রতিটি মুভিতেই আমি সমান এফোর্ট দিয়েছি। প্রতিটির গল্প, চরিত্র সবই আলাদা। এ কারণে চাওয়াটা বেশি। তাই রিলিজের পরই বোঝা যাবে, সেই প্রত্যাশা কতটা মিটেছে।
টিবিএস: আপনার ক্যারিয়ারের প্রায় ৬ বছর হতে যাচ্ছে। সেরা অর্জন কী বলে মনে করেন?
নুসরাত ফারিয়া: প্রথম দিন যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন একটাই লক্ষ্য ছিল- আমার সম্পর্কটা যেন শুধু ক্যামেরার সঙ্গেই হয়। অবশ্যই এটা পূরণ হয়েছে। মাত্র ছয় বছরের ক্যারিয়ার আমার। ১৮টা সিনেমা করতে পেরেছি। এটাই আমার জীবনের সেরা অর্জন বলে মনে করি। অল্প সময়ে অনেক বেশি সম্মান, শ্রদ্ধা এবং অনেক বেশি ভালো ভালো কাজের সুযোগ আমি পেয়েছি।
টিবিএস: ২০১৫ সালে প্রথম সিনেমার শুটিংয়ে বলেছিলেন, আপনি ক্যামেরার সামনে খুব নার্ভাস ফিল করেন। সেই নার্ভাসনেস কি কেটেছে? এখন ক্যামেরার সামনে কেমন লাগে?
নুসরাত ফারিয়া: এখন তো এটা প্রতিদিনকার গল্প। এখন আর আগের মতো নার্ভাস লাগে না। তারপরও নতুন যেকোনো কিছু করতে গেলে নার্ভাস ফিল করি। যেকোনো সিনেমার শুটিংয়ের প্রথম এক সপ্তাহ খুব নার্ভাস লাগে। আসলে নার্ভাসনেসটা আমার মধ্যে ছোট বেলা থেকেই ছিল। আমার মনে হয়, এটা একটা গুড সাইন। আমার বেলায় এটার কারণে কনফিডেন্স আসে। তাই আমার মনে হয় নার্ভাসনেস ইজ গুড।
টিবিএস: চলচ্চিত্রে ২০১৫ সালে এলেন, তার আগে থেকেই আপনি মিডিয়াতে সরব। মোটামুটি এক দশক পার করলেন মিডিয়ায়। পেছনে ফিরে তাকালে জীবনের কোন সময়টা সবচেয়ে বেশি মিস করেন এবং কেন?
নুসরাত ফারিয়া: ২০১২ সালে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিই। তার পরের বছর, মানে ২০১৩ সাল থেকে অ্যাক্টিভলি কাজ করা শুরু করি। ১০ বছর হয়নি। সম্ভবত ৯ বছর। পেছনে ফিরে তাকালে অনেক স্ট্রাগল দেখি। অনেক ভালো সময় দেখি। অনেক আপস-অ্যান্ড-ডাউন দেখি। এই আপস-অ্যান্ড-ডাউন ছিল বলেই আমি নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করেত পেরেছি। আসলে শুধু আর্টিস্ট না, প্রতিটি মানুষের জীবনে আপস-অ্যান্ড-ডাউন খুব জরুরি। এগুলো তাকে ম্যাচিউর হতে শেখায়। সহজে যেটা মানুষ পেয়ে যায়, সেটার মূল্যটা কম থাকে। আমার প্রত্যেকটা পাওয়া বা অ্যাচিভমেন্ট অনেক বেশি কষ্টের, অনেক বেশি আরাধনার। এজন্য আমার কাছে সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ; সেটা হোক সাক্ষাৎকার দেওয়া কিংবা বড় কোনো সিনেমায় অভিনয় করা।
অবশ্য তেমন কিছু মিস করি না। আমি বর্তমান সময়টা নিয়ে খুবই হ্যাপি। যেটা বলতে পারি, আগে আমার একটা পার্সোনাল লাইফ ছিল, এখন সেটা কমে গেছে। ওই সময়টা একটু-আধটু মিস করি।
টিবিএস: ফিল্ম পলিটিক্স বলে একটা ব্যাপার সব দেশেই আছে। আমাদের দেশে সেটা কী আছে? আপনি কখনো সেটা ফেস করেছেন?
নুসরাত ফারিয়া: ফিল্ম পলিটিক্স বিষয়ে আমি জানি না। তবে এখানে ফেভারিজম আছে। যার যাকে পছন্দ, তাকে কাজ দিতে পছন্দ করে। তাই পলিটিক্স বলব না, ফেভারিজম আছে। আমার মনে হয় এটা সব জায়গাতেই আছে। আমিও এর শিকার হয়েছি। আবার অনেকে বলেছে, আমি ফেভারিজমের কারণে এই জায়গায় এসেছি। কিন্তু যেটাই হোক, অভিনয়শিল্পীদের দিন শেষে মেধা দিয়েই টিকে থাকতে হবে।
টিবিএস: দেশে ও দেশের বাইরে, বিশেষ করে কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রশ্ন হলো, ঢাকার আর কলকাতার কাজের বিশেষ কোনো পার্থক্য কি চোখে পড়েছে?
নুসরাত ফারিয়া: আসলে ঢাকা ও কলকাতার তেমন কোনো পার্থক্য নেই বললেই চলে। এটা প্রত্যেকটা টিমের ওপর নির্ভর করে। ওখানে কাজ করে যে আরাম, এখানেও সে আরাম। এখানেও কাজ অনেক আপডেট হচ্ছে। কদিন আগে আমি একটা বিজ্ঞাপন করেছি। সেটার বাজেট একটা বড় বাজেটের মুভির থেকে কম ছিল না। ওই টিমটা দারুণ। আমি কাজ করে খুব আনন্দ পেয়েছি।
টিবিএস: আর কতদিন বাংলা ছবির নায়িকা হিসেবে নিজেকে দেখতে চান?
নুসরাত ফারিয়া: আমি তো আজীবন নিজেকে বাংলা সিনেমার নায়িকা হিসেবে দেখতে চাই। আমি এটাতে খুব প্রাউড ফিল করি। ছোটবেলা থেকেই অনেক মিথ শুনেছি বাংলা সিনেমা নিয়ে, নায়িকাদের নিয়ে। কিন্তু আমি এখানে এসে অনেক বেশি সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়েছি। তাতে আমার ধারণা উল্টে গেছে। এ কারণেই আমি বাংলা সিনেমার নায়িকা হিসেবে গর্ববোধ করি। তাই আমি সবসময় চাইব, আমাদের যারা কিংবদন্তি আছেন, তাদের মতো হতে। আমার তো মাত্র জার্নি শুরু। সামনে আরও পথ বাকি।
টিবিএস: অভিনয়ে নিজেকে ১০-এ কত দেবেন?
নুসরাত ফারিয়া: আমি নিজেকে কোনো নম্বরই দিবো না। আই অ্যাম স্টিল জিরো।
টিবিএস: আপনার গানের প্রসঙ্গে জানতে চাই। নতুন গান কবে আসছে?
নুসরাত ফারিয়া: খুব শিগগিরই আসছে। কাজ করছি। আমি খুবই এক্সসাইটেড। এটা আগের গানগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না। ধামাকা দিয়েই আসবে। এখন একটু অপেক্ষা।
টিবিএস: ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ- বিয়ের পরে জীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে?
নুসরাত ফারিয়া: আমার বিয়ে এখনো হয়নি। শুধু এনগেজমেন্ট হয়েছে। আমরা বয়ফ্রেন্ড-গার্লফেন্ডের মতোই আছি। কোনো পরিবর্তন হয়নি। বলতে পারেন, আমি এখনো অবিবাহিতা।