অ্যাস্ট্রোওয়ার্ল্ড এবং হৃদয়বিদারক ৬ কনসার্ট ট্র্যাজেডি
গেল শুক্রবার টেক্সাসের হিউস্টনে অ্যাস্ট্রোওয়ার্ল্ড মিউজিক ফেস্টিভ্যালে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির কথা হয়তো এতক্ষণে অনেকেরই জানা। এ দুর্ঘটনায় অন্তত আটজনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হওয়ার খবরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া।
কিন্তু কনসার্টের মধ্যে দুর্ঘটনা কিন্তু এবারই প্রথম নয়। আগেপরেও পৃথিবীর নানা প্রান্তে লাইভ কনসার্টে এমন কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, যেখানে একাধিক্ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কালিম্পংয়ে মেলা গ্রাউন্ডে একটি র্যাপ কনসার্ট চলাকালীন দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন।
কনসার্ট আয়োজনের ইতিহাসে তেমনই কিছু হৃদয়বিদারক ঘটনা পাঠককে জানাবো আজ।
১। রোলিং স্টোনস: দ্য আলটামন্ট স্পিডওয়ে ফ্রি ফেস্টিভ্যাল
৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯
বিখ্যাত ব্যান্ড রোলিং স্টোনসের আলটামন্ট স্পিডওয়ে কনসার্টে দুর্ঘটনার আগে ও পরে মিলিয়ে অন্তত চারজন নিহত হন।
রোলিং স্টোনস ঠিক করেছিলো সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট পার্কে বিনামূল্যে একটি কনসার্ট আয়োজ়নের মাধ্যমে তাদের সে বছরের যুক্তরাষ্ট্র ট্যুরের ইতি টানবে। গ্রেটফুল ডেড, সানটানা, জেফারসন এয়ারপ্লেন, দ্য ফ্লায়িং বারিতো ব্রাদারসের মতো স্বনামধন্য অতিথিদেরও সেদিনের কনসার্টে নিমন্ত্রণ জানানো হয়।
কিন্তু সানফ্রান্সিসকোতে অনুমতি না পাওয়ায় শেষ মুহূর্তে কনসার্টটি আলটামন্ট স্পিডওয়েতে সরিয়ে নেওয়া হয়।
কনসার্টে নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকায় ছিল দ্য হেলস অ্যাঞ্জেলস। কিন্তু ১৮ বছর বয়সী মেরেডিথ হান্টারের মৃত্যু এই আয়োজ়নে বড় দাগ রেখে যায়। অন্যদিকে, গাড়িচাপায় মৃত্যুবরণ করেন আরও দুই ভক্ত এবং এলএসডি মাদকের প্রভাবে খালে ডুবে মারা যান আরও একজন।
২। দ্য হু: সিনসিনাতি রিভারফ্রন্ট কলিসিয়াম
৩ ডিসেম্বর ১৯৭৯
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিওতে রিভারফ্রন্ট কলোসিয়ামে দ্য হু'র কনসার্টে সেদিন জড়ো হয়েছিলেন ১৮,০০০ দর্শক। ব্যান্ডের ড্রামার কেইথ মুনের মৃত্যুর পর এটিই ছিল দ্য হু'র প্রথম ট্যুর। তাই স্বভাবতই ভিড়টা হয়েছিল একটু বেশি।
যেহেতু কনসার্টে ভক্তদের জন্য কোনো সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা ছিলনা, তাই প্রত্যেকেই সুবিধাজনক জায়গাটিতে বসার জন্য আগেভাগেই ভেন্যুতে হাজির হয়েছিলেন।
কিন্তু সেদিনই দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ব্যান্ডের সদস্যদের এই খবর দেওয়া হয়নি, তাই তারা শো চালিয়ে গিয়েছিলেন।
এই ঘটনার পর কয়েক দশক কোনো কনসার্ট আয়োজনের অনুমতি দেয়নি সিনসিনাতি। ২০০২ সালে ব্রুস স্প্রিংস্টিনের কনসার্টের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটে।
৩। পার্ল জ্যাম: রকস্কিলড ফেস্টিভ্যাল, ডেনমার্ক
৩০ জুন, ২০০০
পার্ল জ্যামের কনসার্টের সেটে ঠিক কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছিল তা আজও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কিন্তু সেদিন দুর্যোগের রাতে ৯ জন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন।
অনেকের ধারণা্, আয়োজ়নের ভেন্যু ভেজা থাকা, মঞ্চের দিকে ভিড়ের চাপ এবং দর্শকদের হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
শো চলতে থাকার ৪৫ মিনিটের মাথায় দুর্ঘটনার খবর পায় পার্ল জ্যাম এবং সাথে সাথেই শো স্থগিত করে তারা।
৪। গ্রেট হোয়াইট: ওয়েস্ট ওয়ারউইক স্টেশন, রোড আইল্যান্ড
২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩
গ্রেট হোয়াইটের কনসার্ট আরম্ভ করার অল্প কিছুক্ষণ পরেই ভুলক্রমে আতশবাজ়ি এসে পড়ে মঞ্চের কাছে এক্যুস্টিক ফোমে এবং আগুন ধরে যায়। চরম বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার মধ্যে প্রায় একশত মানুষ আগুনে পুড়ে যান।
গ্রেট হোয়াইটের ট্যুর ম্যানেজার ড্যানিয়েল বিয়েচেলকে এই দুর্ঘটনার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। তবে দুই বছরেরও কম সময় জেলে কাটানোর পর তিনি প্যারোলে মুক্তি পান।
আমেরিকার ইতিহাসে এটি চতুর্থ ভয়াবহ নাইটক্লাব বিপর্যয় হিসেবে লেখা আছে।
৫। মাওয়াজিন মিউজিক ফেস্টিভ্যাল: রাবাত, মরক্কো
২৩ মে, ২০০৯
মরক্কোর মাওয়াজিন উৎসবের শেষ দিন বহির্গমন পথের দিকে একসাথে বহু ভক্ত এগিয়ে আসতে থাকে। ফলে সেখানকার একটি বেষ্টনী ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হন।
মরক্কোর এই মিউজিক ইভেন্টে আরও ছিলেন কাইলি মিনোগ, স্টিভি ওন্ডার এবং অ্যালিসিয়া কীস। হে নাহদা স্টেডিয়ামে একটি ইভেন্টের মাধ্যমে এই উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এরকম একটি দুর্ঘটনা সত্ত্বেও প্রতি বছর ঠিক সময়েই এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়ে আসছে; যদিও মহামারির সময়ে তা স্থগিত করা হয়।
৬। লাভ প্যারেড: ডুইসবার্গ, জার্মানি
২৪ জুলাই, ২০১০
কনসার্ট চলাকালীন ২৬০ গজের একটি টানেলের ভেতর দিয়ে হাজারো মানুষ বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ফলে দমবন্ধ হয়ে ২১ জনের মৃত্যু ঘটে।
এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।