চলচ্চিত্র নির্মাণে ‘নিয়মিত হতে পারছেন না’ নারী পরিচালকরা
দেশের প্রথম নারী চলচ্চিত্র পরিচালকের নাম বললে সবার আগে আসে রেবেকার নাম। ১৯৭০ সালে তিনি নির্মাণ করেন 'বিন্দু থেকে বৃত্ত' চলচ্চিত্র। এরপর জাহানারা ভূঁইয়া নির্মাণ করেন 'সিঁদুর যাবে না মুছে' সিনেমাটি। এরপর অনেক নারী পরিচালকই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তবে বেশিরভাগ নির্মাণের আগে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ছিলেন, পরে নির্মাতা হিসেবে নিজেদের নাম লেখান। এই তালিকায় আছেন, রোজী আফসারী, সুজাতা, সুচন্দা, কবরী, মৌসুমী, সামিয়া জামানসহ অনেকেই। এ ছাড়া সরাসরি চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আছেন নারগিস আক্তার, শামীম আখতার, ফৌজিয়া খানসহ বেশ ক'জন।
অনেক নারী নির্মাতার হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হয়েছে। দর্শক পেয়েছেন নতুন নতুন চলচ্চিত্রের স্বাদ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি নারীরা চলচ্চিত্র নির্মাণে এসে সফল হলেও নির্মাণ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তারা নিয়মিত নন। এর কী কারণ এবং সমস্যাটা মূলত কোথায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তা জানিয়েছেন দুজন নির্মাতা।
এ পর্যন্ত আটটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নারগিস আক্তার। ২০০১ সালে নির্মাণ করেছেন তার প্রথম চলচ্চিত্র 'মেঘলা আকাশ'। ছবিটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন।
নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারা এই পেশায় নিয়মিত হতে পারছেন না স্বীকার তিনি বললেন, "সমস্যাটা আসলে প্রযোজকদের। আটটি সিনেমার মধ্যে আমি নিজে তিনটা প্রযোজনা করেছি। কি করে নিয়মিত হবো?"
তিনি বলেন, "নারী নির্মাতাদের ওপর কোনো এক অজ্ঞাত কারণে প্রযোজকেরা আস্থা রাখতে পারছেন না। ট্রাস্ট করেন না। এটা পুরোটাই আসলে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। একজন পুরুষ নির্মাতা যেভাবে একটা প্রডাকশন শেষ করেন নারী নির্মাতারা সেভাবেই করেন। কিন্তু আলাদা করে কেন দেখেন এটা ঠিক বুঝি না।"
প্রযোজক না পাওয়ার কথা জানান আরেক নির্মাতা শামীম আখতারও।
তিনি বলেন, "দুই ধরনের নির্মাতা চলচ্চিত্রে আসেন। একদল আসেন সৌখিনতা থেকে। আরেকদল আসেন চলচ্চিত্র সংসদ বা চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। দুই দলই সিনেমা নির্মাণ করতে চান। কিন্তু প্রযোজক বা পরিবেশকদের অসযোগিতার কারণে দুইদলই হতাশ হয়ে পড়েন। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে কেউই টিকে থাকতে পারেন না।"
তবে নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র দর্শক মহলে সাড়া জাগায়নি এমন নয়। বেশ কিছু চলচ্চিত্র যেমন পেয়েছে 'হিট' ছবির খেতাব, তেমনি পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতাই নন, তাদের বানানো ছবিতে অভিনয় করে অনেক অভিনয়শিল্পীও হয়েছেন সমাদৃত, পেয়েছেন নানা পুরস্কার।
নির্মাতাদের প্রযোজক না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সবকিছুর মূলে আসলে ব্যবসা। এখন পুরো চলচ্চিত্র ব্যবসা খারাপ। এটার জন্য নারী বা পুরুষ নির্মাতা নয়, সবারই খারাপ সময় যাচ্ছে। আবার যদি ব্যবসা ভালো হয়, হয়তো নারী নির্মাতারাও নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারবেন।"
তবে এসব সংকটের মধ্যেই অনেক নারী নির্মাতা এগিয়ে আসছেন। ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত কাজ করছেন। এ তালিকায় রয়েছেন- ক্যাথরিন মাসুদ, মেহের আফরোজ শাওন, রুবাইয়াত হোসেন, শাহনেওয়াজ কাকলী, রওশন আরা নিপা, জেসমিন আক্তার নদী, তানিয়া আহমেদ, চয়নিকা চৌধুরী, মারিয়া তুষারসহ অনেকেই।
চলচ্চিত্র পরিচালকসহ দর্শক সবারই চাওয়া, সুদিন ফিরুক বাংলা চলচ্চিত্রে।