চলচ্চিত্র বাঁচাতে আসছে বিশেষ তহবিল
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের অবস্থা নাজুক। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে এই অবস্থা।
একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়া, ভালো ও মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রের অভাব, পাশাপাশি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষদের সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হওয়া এবং সর্বোপরি দর্শকদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই এই নাজুক অবস্থার কারণ বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা।
সেই নাজুক অবস্থার কফিনে শেষ পেরেক মেরে দিয়েছে কোভিড-১৯। প্রায় ছয় মাস হলো নতুন কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। খোলেনি সিনেমা হলের দরজা। দেশের অনেক সিনেমা হলও বন্ধের পথে।
বেশ কিছুদিন আগে সিনেমা হল মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, খোলার ঘোষণা এলেও দেশের কমপক্ষে ৫০টি সিনেমা হল আর কখনোই খুলবে না।
এরইমধ্যে সিনেমা হল মালিকদের সংগঠনসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারি সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তারা আশা করছেন, খুব দ্রুত সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে- কত টাকা বরাদ্দ আসছে চলচ্চিত্রের জন্য। এরইমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির একাধিক নেতা।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে সরকারের কাছ থেকে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা চলছে। করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, অর্থাৎ চলচ্চিত্র শিল্প, বিশেষ করে সিনেমা হল বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ আগস্ট বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। তবে সেটা কবে নাগাদ বা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে এখনো কাজ শুরু হয়নি।
এরইমধ্যে চলচ্চিত্রের নেতারা জানিয়েছেন, সরকার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে এই শিল্পের জন্য। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সরকার সিনেমা হল মালিকদের জন্য একটা বরাদ্দের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে- এ রকম একটা খবর আমরা পেয়েছি। এটা ৭০০ কোটি টাকা বা তার কম-বেশি হতে পারে। তবে ঘোষণা একটা আসছে, এটা নিশ্চিত।'
তিনি জানান, এই টাকা সারা দেশের সিনেমা হল সংস্কার ও নতুন সিনেমা হল নির্মাণের কাজে ব্যয় হবে। 'যতদূর শুনেছি, ১ থেকে ২ শতাংশ সুদে এটি নেওয়া যাবে। শোধ করতে হবে ২০-২৫ বছর মেয়াদে। সবকিছু ঠিক থাকলে বরাদ্দের টাকাটা দ্রুত ব্যাংকে পৌঁছাবে।'
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, শুধু সিনেমা হল সংস্কার করলেই যাবতীয় সমস্যার সমাধান হবে কি না? জবাবে বলেন, 'যখন দেশের সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে, তখন সবকিছু অটোমেটিক ঠিক হয়ে যাবে। কারণ অনেকে এই অঙ্গনে টাকা ইনভেস্ট করার জন্য মুখিয়ে আছেন। যদি দেখানোর জায়গা ঠিক হয়ে যায়, তাহলে সবই ঠিক হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।'
তার এবং সিনেমা হল মালিক সমিতির দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কমতে কমতে দেশে এখন দেড়শ'র কিছু বেশি সিনেমা হল রয়েছে। কিন্তু সিনেমা দেখার অবস্থায় হল আছে মাত্র ১১০টি। এর মধ্যে করোনার কারণে কিছু সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হলে বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারেন কিছু মালিক, এমনটাই জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হল মালিক।
এদিকে, গত ১২ আগস্ট সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সন্মেলন করে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান রুহেল বলেন, 'সরকারি সহযোগিতা না পেলে স্টার সিনেপ্লেক্স বন্ধ হয়ে যেতে পারে।' পাশাপাশি সাত দফা দাবি জানান তিনি। এর মধ্যে সহযোগিতার পাশাপাশি দ্রুত সিনেমা হল খুলে দেওয়ারও দাবি ছিল।
এসব দিক বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী দ্রুত বরাদ্দের ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এদিকে, চলচ্চিত্র শিল্প যে মন্ত্রনালয়ের অধীনে, সেই তথ্য মন্ত্রনালয়ের চলচ্চিত্র শাখার উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা বিশেষ তহবিল গঠনের অনুরোধ জানিয়ে একটি সামারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছি। সেখানে টাকার কোনো পরিমান উল্লেখ করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা দেখে পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন। তারপর আমরা সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করব। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে তবেই বিস্তারিত বলতে পারব।'
'এই বরাদ্দ সিনেমা হল মালিকদের জন্য আসার কথা। পুরোন হল সংস্কার, আধুনিকায়ন এবং কেউ যদি নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করতে চাইলে তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এখানে সিনেমা নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নেই,' যোগ করেন তিনি।
এদিকে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটার অফিসিয়ালি কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগস্টের শেষ দিকে তার একটা বক্তব্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চলচ্চিত্রের জন্য তহবিল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুত সেটা বাস্তবায়ন হবে।'