চীনে হলিউড চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা তলানিতে?
বক্স অফিস আয়ের দিক থেকে সবসময়ই এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, তবে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে চলেছে।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে চলচ্চিত্রের বাজারের শীর্ষ আসন জিতে নিয়েছে চীন। বহুদিন ধরে চলচ্চিত্রে বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দেশটির ২০২০ সালে বক্স অফিস আয় ছিল ৩.১ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বেশি।
তবে পরিস্থিতি পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ করোনাভাইরাস মহামারি। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশ তাড়াতাড়ি মহামারির অভিঘাত পুষিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীন। ফলে অনেক আগেই দেশটির প্রেক্ষাগৃহগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেক্ষাগৃহ এখনো বন্ধ পড়ে আছে।
এছাড়াও ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া হলিউডের শীর্ষ অনেক চলচ্চিত্রই চীনা দর্শক টানতে পারেনি। চীনে 'ওয়ান্ডার উইমেন ১৯৮৪' চলচ্চিত্রটি সন্তোষজনক ব্যবসা করতে পারেনি, ডিজনি'র মুলানের অবস্থাও এমনই। অবধারিতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে চীনে কি হলিউডের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তার কাল শেষ হতে চলেছে?
চীনা দর্শক বিহীন হলিউড?
"চীনে হলিউডের চলচ্চিত্রের দর্শক কমে গেলে হলিউডের স্টুডিওগুলোকে বড় বাজেটের ব্লকবাস্টারের ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। চীনা দর্শক ছাড়া বর্তমান বাজেট একদমই টেকসই নয়," বলেন 'হলিউড মেইড ইন চায়না'র লেখক অ্যান কোকাস।
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া'র মিডিয়া স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক কোকাস আরও জানান, হলিউডের চলচ্চিত্রের চীনা দর্শক টানতে মার্কিন স্টুডিওগুলো চলচ্চিত্রে চীনা অভিনেতা নিয়োগ দিয়েছে, অনেক চলচ্চিত্রের গল্পও চীনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে।
মহামারির অভিঘাত পুষিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহগুলো খুলে দেওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বক্স অফিস আয়ের জন্য চীনা দর্শকদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চীনে হলিউডের চলচ্চিত্র বেশ ভালো ব্যবসা করলেও সম্প্রতি চীনা স্টুডিও ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোও দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গত আগস্টে মুক্তি পাওয়া 'দ্য এইট হান্ড্রেড' চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার প্রথম সপ্তাহেই চীনে ১০ কোটি ডলারের বেশি ও বিশ্বজুড়ে ৪০ কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে।
বক্সঅফিস.কমের প্রধান বিশ্লেষক শন রবিনস জানিয়েছেন, মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ায় সাফল্যের জন্যই চীন বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছে। চীনা দর্শকরা শুধু হলিউডের চলচ্চিত্রের গ্রাহক না হওয়াও আরেকটি কারণ।
চীনে হলিউডের চলচ্চিত্রের দর্শক কমে আসার আরেকটি কারণ হতে পারে দেশ দুটির মধ্যে চলমান উত্তেজনা।
বৈশ্বিক বক্স অফিসের দুই খুঁটি
২০২০ সালে মহামারির প্রভাব পড়েছে পুরো বিশ্বের চলচ্চিত্রের ব্যবসায়ই। চীনা গ্রাহকদের মধ্যে এখনো অনেক মার্কিন ব্র্যান্ডের চাহিদা আছে উল্লেখ করে শন রবিনস বলেন, "খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে এটি বলার সময় আসেনি এখনও,"
"বর্তমানে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা মহামারির সময়ের, মহামারির আগের অবস্থা বা পরবর্তী অবস্থা কেমন হতে পারে তার যথাযথ প্রতিফলন হয়নি এখানে," বলেন তিনি।
'মুলান' চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগেই এনিয়ে চলমান বিতর্কের কারণে দর্শক আগ্রহ হারিয়েছেন এমনটা হতে পারে। মারভেল, ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ও অন্যান্য ডিজনি চলচ্চিত্রগুলোর বেশ ভালো দর্শক চাহিদা আছে চীনে, জানান তিনি।
প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতে চীনে হলিউডের চলচ্চিত্রের অবস্থা কিরূপ হতে পারে? এখনই এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয়। তবে ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, দেশ দুটির চলচ্চিত্রই বৈশ্বিক বক্স আফিস আয়ে প্রভাব বজায় রাখবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
"দিনশেষে, বৈশ্বিক বক্স অফিসের ভবিষ্যৎ নির্ভর করেছে এ দেশ দুটির ওপরই।" বলেন রবিনস।
- সূত্র: সিএনএন