ফেন্টি বিউটি: মেক-আপের মাধ্যমেই বিলিয়নিয়ার রিয়ানা!
২০১৫ সালে যখন রিয়ানা তার প্রথম একক 'বেটার হ্যাভ মাই মানি' প্রকাশ করেন, তখন অনেকেই হয়ত ভেবেছেন যে তিনি তার 'উই ফাউড লাভ' অথবা 'ডায়মন্ডস' এর মতো হিট গানগুলো থেকে রয়্যালটির টাকা পাওয়াকেই বুঝিয়েছেন।
আসলে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়! গত সপ্তাহেই একজন বিলিয়নিয়ার শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন রিয়ানা। তার এই বিপুল আয়ের পেছনে রয়েছে নিজের প্রসাধনী ব্র্যান্ড 'ফেন্টি বিউটি'র হাত। কারণ রিয়ানার আয়ের সিংহভাগই আসে জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ড থেকে।
২০১৭ সালে ফেন্টি বিউটি নামক প্রসাধনী ব্র্যান্ড নিয়ে যাত্রা শুরু করেন রিয়ানা। সে সময় তা বিলাসদ্রব্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, লুই ভিটো'র সঙ্গে পার্টনারশিপে চালু করা হয়।
রিয়ানার বিলিয়নিয়ার হওয়ার সংবাদের পাশাপাশি, ফেন্টি বিউটি'র এই ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণ অনুসন্ধান করতে সৌন্দর্য্য বিশেষজ্ঞদের সাথে আলাপচারিতায় জড়িয়েছিল রেডিও ওয়ান নিউজবিট। আর তাতেই বেরিয়ে এসেছে তার সাফল্যের পেছনের গল্প।
বাধাহীন বৈচিত্র্য
রিয়ানা জানান, ফেন্টি বিউটির মূল লক্ষ্য ছিল যেকোনো ধরনের, যেকোনো গায়ের রঙের নারীদের সৌন্দর্যমন্ডিত করতে সাহায্য করা।
২০১৭ সালে রিফাইনারি'কে রিয়ানা বলেছিলেন, "আমাদের প্রতিটা পণ্য তৈরির ক্ষেত্রেই আমি ভেবেছি যে, এখানে কালো বা শ্যামলা গায়ের রঙের নারীদের জন্যও কিছু থাকা উচিত। আবার একেবারে ফ্যাকাশে সাদা বর্ণের কারো জন্যেও কিছু একটা রাখা উচিত। এই দুইয়ের মাঝে যাদের গায়ের রঙ, তাদের জন্যও কিছু থাকা উচিত।"
রিয়ানা কিন্তু তার কথা রেখেছেন! সৌন্দর্য্য বিষয়ক লেখিকা, জেসিকা মর্গানও তেমনটাই জানালেন, "রিয়ানা কোনো রকম বাধা ছাড়াই তার পণ্যে বৈচিত্র্যতা এনেছেন। সকল বয়সের, সব ধরনের নারীদের জন্য যেন কিছু না কিছু প্রসাধনী থাকে; তা তিনি নিশ্চিত করেছেন।"
সবার জন্য পছন্দসই পণ্য বেছে নেযয়ার ক্ষেত্রে ফেন্টি বিউটি কতখানি প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তা তাদের পণ্যের সমাহার দেখলেই বোঝা যায়। বর্তমানে ফেন্টি বিউটির ফাউন্ডেশনের ৫০ টি শেড বাজারে রয়েছে। তাদের এই 'ফেন্টি ইফেক্ট' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডগুলোও নিজেদের ফাউন্ডেশনে নতুন নতুন শেড যুক্ত করেছে।
জেসিকা নিজে ফেন্টি বিউটির ফাউন্ডেশন ব্যবহার করেন। তার ভাষ্যে, ২০১৭ সালে ফেন্টি বিউটি যখন প্রথম এগুলো বাজারে আনে, তা ছিল অদ্বিতীয় ও 'বৈপ্লবিক'।
তিনি বলেন, "আমি তখন আমার জন্য আদর্শ একটা শেড খুঁজে পেয়েছিলাম। এর আগে এটা নিয়ে সারাজীবন আমার দুশ্চিন্তার অন্ত ছিলনা! অন্যান্য ব্র্যান্ডও বৈচিত্র্যতা এনেছে তাদের পণ্যে, কিন্তু ফেন্টি বিউটিরটা ছিল একেবারেই অনন্য।"
ফেন্টি বিউটিই প্রথম ব্র্যান্ড, যারা তাদের পণ্যের ক্রেতা হিসেবে বিশেষভাবে শুধু নারীদেরকেই টার্গেট করেনি।
সৌন্দর্য্য বিষয়ক সাংবাদিক, অ্যাম্বার গ্র্যাফল্যান্ড বলেন, "তাদের আইডিয়াটা ছিল প্রসাধনী ও সুগন্ধিকে নির্দিষ্ট কোনো লিঙ্গভিত্তিক করে না রাখা। একটা নির্দিষ্ট বয়সের নারীরাই শুধু প্রসাধনী মেখে সুন্দর হয়ে যাবেন- এমন পুরনো ধ্যান ধারণা অনেক আগেই গত হয়েছে।"
সাফল্যের শিখরে আরোহণ
এই মুহূর্তে রিয়ানার মোট সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। তার ব্র্যান্ড ফেন্টি বিউটির বাজারমূল্য ধরা হয়েছে আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
ফেন্টি বিউটির ৫০ শতাংশ মালিকানা রিয়ানার নিজের বলে জানিয়েছে বিজনেস ম্যাগাজিন 'ফোর্বস'। ২০১৭ সালে বিশ্বের ১৭ টি দেশজুড়ে ফেন্টি বিউটির ১৬০০ দোকান চালু করেন রিয়ানা।
যাত্রা শুরু করার প্রথম ৪০ দিনেই তাদের আয় দাঁড়িয়েছিল ১০০ মিলিয়ন ডলার।
শুধু তাই নয়, তারকাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অন্য যে কোনো ব্র্যান্ডের তুলনায় বেশি আয় করে ফেন্টি বিউটি। প্রতিযোগিতার দৌড়ে কাইলি জেনারের 'কাইলি কসমেটিকস', কিম কার্দাশিয়ানের 'কেকেডব্লিউ বিউটি' এবং জেসিকা আলবার 'অনেস্ট কোম্পানি'র মতো ব্র্যান্ডগুলো রয়েছে বলে জানায় ফোর্বস।
এ তো গেল প্রসাধনী ব্র্যান্ডের কথা। তাহলে রিয়ানার বাকি আয়ের উৎস কি? 'স্যাভেজ X ফেন্টি' নামক অন্তর্বাস প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ডেও শেয়ার রয়েছে রিয়ানার। ব্র্যান্ডটির বর্তমান বাজারমূল্য ২৭০ মিলিয়ন ডলার। তাই তার বাকি আয়ের সিংহভাগ সেখান থেকেই আসে। এর পাশাপাশি নিজের গান ও অভিনয় থেকে প্রাপ্ত টাকা তো থাকছেই।
'ক্রুয়েলটি ফ্রি' নীতি
ফেন্টি বিউটির ওয়েবসাইট নিজেদেরকে একটি 'ক্রুয়েলটি ফ্রি' ব্র্যান্ড হিসেবে দবি করেছে। অর্থাৎ তারা তাদের কোনো পণ্য বা উপাদানকে প্রাণীর উপর পরীক্ষা চালায় না।
সাংবাদিক অ্যাম্বার বলেন, "এটা আসলে তাদের ব্যবসাসফল হওয়ার পেছনের আরেক কারণ। কারণ ভোক্তারা এখন অনেক সচেতন ও জ্ঞানী। তারা শপিং করতে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এবং যেটাই তাদের মন থেকে ভালো লাগে, সেটাই কিনে। আর ক্রুয়েলটি ফ্রি, বৈচিত্র্যপূর্ণ ইনক্লুসিভ ব্র্যান্ডই তাদের পছন্দের তালিকায় থাকে।"
জেসিকাও মনে করেন, ক্রুয়েলটি-ফ্রি তকমা লাগানোটা ফেন্টি বিউটির প্রচারণার সবচেয়ে বড় কৌশল ছিল। কারণ এর দ্বারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচিত হওয়া এড়াতে পেরেছে তারা।
'দ্য রিহানা ফ্যাক্টর'
রিয়ানার তারকাখ্যাতি যে তার ব্যবসায়িক সফলতায় সাহায্য করেনি, এ কথা বলা মুশকিল!
রিয়ানার ১০৩ মিলিয়ন ফলোয়ার সমৃদ্ধ ইন্সটাগ্রাম পেজ ঘুরলে আপনি গানের চাইতে ফেন্টি সম্পর্কিত কন্টেন্টই বেশি পাবেন!
জেসিকা বলেন, "আমার মনে হয় ব্র্যান্ডের সাথে রিয়ানা যে যোগসূত্র তৈরি করেছেন এবং তা বজায় রাখেন; সেটাই মানুষ সবচেয়ে ভালোবাসে। আপনি লক্ষ্য করবেন যে, তিনি নিজের পণ্য সম্পর্কে দারুণভাবে কথা বলেন এবং সেগুলো ব্যবহারও করেন।"
আর আপনার যদি এখনো না জানা থাকে, তাহলে জানিয়ে দেই, রিয়ানা কিন্তু তার ফেন্টি কালেকশনে এবার পারফিউমও যোগ করেছেন।
বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠা যে রিয়ানার উদ্যোক্তা মনোভাবের গতি কমাতে পারেনি, তা একেবারেই স্পষ্ট!
- সূত্র: বিবিসি