আমার অভিনয়ের স্বীকৃতি পেতে অ্যাওয়ার্ডের প্রয়োজন নেই: চঞ্চল চৌধুরী
চঞ্চল চৌধুরী মানেই কি সিনেমা হিট? অন্যরকম চরিত্রের রসায়ন কিংবা সিনেমা হলে দর্শকের হুড়োহুড়ি? কদিন আগে মুক্তি পেয়েছে এই অভিনেতার নতুন ছবি 'হাওয়া'। মুক্তির পর থেকেই সিনেমা হলে দর্শকের লম্বা লাইন। এই লাইন দেখে যে কারো মনে হবে ওপরের কথাগুলো।
কিন্তু আসল রহস্যটা কি? সেটা জানতেই কথা হলো তার সঙ্গে।
আলাপচারিতার শুরুতেই দর্শকদের 'হাওয়া' চলচ্চিত্রটি পছন্দ করা নিয়ে কথা বললেন চঞ্চল চৌধুরী- "এটা অবশ্যই ভালোলাগার বিষয়। আমরা যখন একটা কাজ করি তখন তো সবসময়্ই চাই মানুষ সেটা পছন্দ করুক, দেখুক। অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাক। 'হাওয়া'র বেলায় সেটা হয়েছে দেখে ভালো লাগছে।"
চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত 'আয়নাবাজি' ও 'দেবী' সিনেমাই এর আগে দর্শকদের টেনে নিয়ে গিয়েছিল সিনেমা হলে। তারপর আর কোনো সিনেমা নিয়েই দর্শকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়নি। অবশ্য চঞ্চল এই কৃত্তিত্ব নিতে চাইলেন না। বিনয়ী হয়ে বললেন, "আয়নাবাজির পরেও আমি অনেক কাজ করেছি। বিশেষ করে টেলিভিশন নাটক করা হয়েছে। তবে ভালো গল্প, চরিত্র, ভালো নির্মাতা, টিম হলে সেটা দর্শকের কাছে পৌছে যায় সহজেই। তাই এই ক্রেডিট একা আমার না, পুরো টিমের। আমি একটা অংশ মাত্র।"
তবে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী কোনো প্রজেক্টে যুক্ত হওয়ার আগে বেশকিছু বিষয়ে সর্তক থাকেন। তার ভাষায় তিনি 'পঞ্চতত্ত্ব' মেনে চলেন অভিনয়-সংক্রান্ত যেকোনো কাজে যুক্ত হওয়ার বেলার। সেগুলো হলো-ভালো পরিচালক, ভালো গল্প, সহ-শিল্পী, ভালো সিনেমাটোগ্রাফার এবং ভালো বাজেট। এর কোনোটার ঘাটতি থাকলে সেই প্রজেক্টে যুক্ত হন না তিনি।
তবে অভিনেতা এও জানালেন, যেকোনো বড় কাজে যুক্ত হয়ে তিনি আগেই ভাবেননা এই কাজটি সেরা হবে, দর্শক পছন্দ করবে। তাহলে কি থাকে চঞ্চলের ভাবনায়?
জবাবে অভিনেতা বলেন, "আমি আমার যে কাজ, সেটা ঠিকঠাক করতে চাই। আর কিছু না। অনেকেই আমাকে চিত্রনাট্য পাঠিয়ে বলেন, ওটা করলে দেশে-বিদেশে পুরস্কার নিশ্চিত। আমি তাকে সরাসরি স্যরি বলি। বলি তোমার আগ্রহ কাজে না, তোমার আগ্রহ পুরস্কারে। কিন্তু আমার পুরস্কারের লোভ নেই। আমি যে কাজটা করছি সেখানে আমার মেধা, আমার ডেডিকেশন, আমার যোগ্যতার ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারলাম কিনা সেটা দেখি। সেই ছবি হিট না ফ্লপ হবে সেটা ভাবনায় থাকেনা।"
"সেই ছবিটা যদি দর্শক নাও দেখেন তাহলেও তো একটা ভালো কাজ হলো। সিনেমার ইতিহাস লেখা হলে তো সেটা জায়গা পাবে। এই যে এত পরিশ্রম ও কষ্ট করে 'হাওয়া' বানানো, যদি দর্শকেরা না দেখতো তাহলে আমরা কি করতে পারতাম। কিছুই না। কিন্তু দিনশেষে তো এটা সত্যি আমরা সবাই মিলে একটা ভালো কাজ করেছি", যোগ করলেন অভিনেতা।
'হাওয়া'য় তার চরিত্র নিয়েও জানতে চাইলাম। চঞ্চল চৌধুরী বললেন, অনেকেই মনে করছেন আমার চরিত্রটা ভিলেন। কিন্তু এটা আসলে অনেকের গতানুগতিক ভাবনা যে সিনেমায় ভিলেন কে, নায়ক-নায়িকা কে? কিন্তু আমরা কি হলিউডে কোনো ছবি দেখতে গিয়ে, নায়ক-নায়িকা বা ভিলেন খুঁজি? আমরা তো একটা গল্প খুঁজি এবং চরিত্রগুলো ঠিকঠাক হলো কিনা সেটা দেখি। 'হাওয়া'তেও তাই হয়েছে।"
নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলেও কোনো আফসোস নেই অভিনেতার- "আমার চরিত্রটা নেতিবাচক চরিত্র। একটা মানুষ তো সবদিক থেকে পজিটিভ হতে পারে না।"
চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত নতুন সিরিজ আসছে ওটিটি প্লাটফর্ম হইচই-এ। এরই মধ্যে ট্রেলার এসেছে। নতুন এক চরিত্র, নতুন এক গল্পে আবারও চঞ্চল। কেমন হয়েছে কাজটি?
চঞ্চল বললেন, "এটা নিয়ে আমাদের খুব বেশি কথা বলার সুযোগ নেই। শুধু এতটুকু বলি, এটার বেশিরভাগ অংশের শুটিং হয়েছে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। একজন কয়েদির গল্প এটা। আপাতত এতটুকুই বলা যাবে।"
শুধু সিনেমা বা সিরিজ নয়, চঞ্চল চৌধুরী টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করে যাচ্ছেন। মাছরাঙা টিভিতে প্রচার হচ্ছে তার একটি ধারাবাহিক নাটক। চঞ্চল চৌধুরী বলেন, "আমি সিনেমায়, ওটিটি টেলিভিশন, নাটক এমনকি বছরে দু একবার মঞ্চেও কাজ করি। কিন্তু আমাদের এখানে বদ্ধমূল ধারণা আছে যে সিনেমায় চলে গেলে আর নাটকে অভিনয় করা ঠিক না।"
অনেক পরিচালকও চঞ্চল চৌধুরীকে বলেন, টিভি নাটক থেকে সরে আসতে কারণ সেখানে বাজেট কম, ঠিকঠাক কাজ হয় না। কিন্তু তাদের কথার জবাবে চঞ্চল চৌধুরী শুধু একটি কথাই বলেন- "মঞ্চ থেকেই আমার উঠে আসা। তারপর আমার এই যে নাম হওয়া, মানুষ চেনা, সফলতা এটার অর্ধেক অবদান তো নাটক থেকে। আমাকে ড্রইং রুমের দর্শক ভালোবাসতেন; এখনো বাসেন। সেই ভালোবাসার দায় তো আছে টেলিভিশনের কাছে। তবে আমি এখন একটা স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করি। এটা তো আমাদের সবারই করা উচিত।"