‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর প্রিমিয়ার শো'তে ডিলানকে পর্দায় দেখেই বেরিয়ে যান লেনন!
১৯৭২ সালে বিটলস সদস্য জর্জ হ্যারিসনের 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' সম্পর্কিত ঘটনা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশিত হয়। এবং ডকুমেন্টারির প্রিমিয়ার শোতে বব ডিলানকে পর্দায় দেখা যাওয়ার সাথে সাথে জন লেনন থিয়েটার থেকে বের হয়ে যান। ষাটের দশকে ডিলানের বেশ বড় ভক্ত ছিলেন লেনন, কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ভালো লাগা কমতে থাকে। তবে লেনন কেন স্ক্রিনিং থেকে আগেই চলে গিয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়।
ষাটের দশকে ডিলানের প্রশংসায় মত্ত থাকতেন লেনন
লেননের মতে, তিনি মনে করেন ডিলান কখনোই বিটলসের মতো বড় কিছু হতে পারবে না। তারপরেও তিনি স্বীকার করেন তার প্রথমদিকের অনেক অনুপ্রেরণাই এসেছে মার্কিন শিল্পীর কাছ থেকেই।
রোলিং স্টোনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে লেনন বলেন, "আমি আমার নিজের আবেগ নিয়ে ভাবা শুরু করি। আমি জানি না ঠিক কখন থেকে আমি 'আই অ্যাম আ লুজার', 'হাইড ইয়োর লাভ অ্যাওয়ে' বা এগুলোর মতো গান লেখা শুরু করি। আমি আমার বইয়ে নিজেকে, নিজেকে নিয়ে চিন্তাগুলোকে যেভাবে উপস্থাপন করেছি, গানগুলোর ক্ষেত্রে সেভাবে হয়নি।"
"আমার মনে হয় ডিলান এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছে। তবে [তার সাথে] কোনো আলোচনার মাধ্যমে নয়, বরং তার কাজ শোনার মাধ্যমে। পপ গান লেখার ক্ষেত্রে আমি পেশাদার মনোভাব ধরে রাখতাম। ডিলান আবার প্রতি সিঙ্গেল গানের জন্য আলাদা নির্দিষ্ট স্টাইল তৈরি করতো। আমরা আবার ভিন্ন স্টাইল তৈরি করতাম।"
ষাটের দশকজুড়ে ডিলান আর লেনন একসাথে বহু সময় কাটালেও ধীরে ধীরে দুইজন আলাদা হয়ে যেতে থাকেন।
ডিলানের পারফরম্যান্স চলাকালীন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন লেনন
১৯৭২ সালের ২২ মার্চ অ্যাপল কর্পস নিউ ইয়র্কে 'দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'-এর প্রিভিউ প্রদর্শনী করে। ডকুমেন্টারিতে কনসার্ট করার পেছনে হ্যারিসনের উদ্দেশ্য, ব্যাকস্টেজের ফুটেজ এবং পারফরম্যান্সগুলো দেখানো হয়। লেনন কনসার্টে পারফর্ম না করলেও ডকুমেন্টারি দেখতে স্ত্রী ইয়োকো ওনোকে সাথে নিয়ে থিয়েটারে হাজির হয়েছিলেন। হ্যারিসন চাননি কনসার্টে ওনো পারফর্ম করুক, আবার লেনন স্টেজে আবার বিটলস একত্রিত হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিলেন।
'দ্য বিটলস ডায়েরি ভলিউম টু' বই অনুযায়ী বিটলস ভেঙে গেলেও লেনন ডকুমেন্টারি উপভোগই করছিলেন। তবে তিনি বব ডিলানের পারফরম্যান্সের সময় উঠে যান। ডিলানের পারফরম্যান্স ডকুমেন্টারির শেষভাগে দেখানো হয়েছিল, তাই লেনন আগেই উঠে যেতে পেরেছিলেন। ঠিক কী কারণে তিনি চলে গিয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে কারো কারো মতে, ডিলানের গান সম্পর্কে লেননের বিতৃষ্ণার কারণে তিনি তার পারফরম্যান্স না দেখার জন্যই আগে বের হয়ে গিয়েছিলেন।
ডিলানকে সমালোচনা করতেও ছাড়েননি লেনন
বিটলস ভেঙে যাওয়ার পর বেশ কয়েক জায়গায় সাক্ষাৎকার দেন লেনন, যার বেশিরভাগই ছিল কর্কশ বক্তব্যে ভরপুর। অন্যান্য মিউজিশিয়ানদের নিয়ে আলোচনা করলেও তার রাগ ঝাড়ার মূল কেন্দ্র ছিল তার সাবেক ব্যান্ড বিটলসের অন্যান্য সদস্যরা। ওই সাক্ষাৎকারগুলোতেই তিনি স্বীকার করেন যে, ডিলানের গানের প্রতি তার আর আগ্রহ নেই।
"আমি ভেবেছিলাম এটা [ডিলানের গান] তেমন বড় কিছু না, কারণ আমি তার কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করেছিলাম। সম্ভবত আমি সবার কাছ থেকে বেশি আশা করি। রক গান গাওয়া বাদ দেওয়ার পর আমি ডিলানকে অনুসরণ করা বাদ দিয়েছি। আমি 'রোলিং স্টোন'সহ ঐ সময়ের বেশকিছু গান পছন্দ করেছিলাম। তার প্রথমদিকের কিছু গানও আমার ভালো লেগেছিল। কিন্তু ঐটুকুই। আর বাকিসব গান ঐ লেনন-ম্যাককার্টনির মতোই। একইরকম সবকিছু, কোনো ভিন্নতা নেই। এগুলো মিথ।"
পরবর্তী সময়েও লেননের সুনজর ফিরে পাননি ডিলান। জীবনের শেষদিকে লেনন ডিলানের মিউজিককে 'অপমানজনক' এবং 'প্যাথেটিক' হিসেবে অ্যাখ্যা দেন। পল ম্যাককার্টনি আর মিক জ্যাগারের মতো ডিলানকেও একই কাতারে রেখে তাদেরকে অ্যাখ্যা দেন 'কোম্পানি মেন' হিসেবে।
সূত্র: চিটশিটডটকম