ইন্ডিয়ানা জোনস ৫: শতাধিক ভিএফএক্স শিল্পী কাজ করেছেন হ্যারিসন ফোর্ডকে তরুণ দেখাতে!
গত ৩০ জুন মুক্তি পেয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র 'ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য ডায়াল অব ডেস্টিনি'। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার অনেকদিন আগে থেকেই প্রধান চরিত্রে হ্যারিসন ফোর্ডকে প্রযুক্তির সাহায্যে বয়স কমানোর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে হ্যারিসন ফোর্ডের বয়স ৮০ বছর, তবুও এরকম একটি অ্যাডভেঞ্চার-অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন সবার প্রিয় 'ইন্ডি'র ভূমিকায়।
ছবিতে তরুণ হ্যারিসন ফোর্ডকে দেখতে বেশ লাগছে ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে আমেরিকান মোশন পিকচার ভিজুয়াল ইফেক্টস কোম্পানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইট অ্যান্ড ম্যাজিক-এর একশোর বেশি শিল্পীর অবদান। হ্যাঁ, এই শতাধিক শিল্পীর চেষ্টায়ই চিরাচরিত 'ইন্ডিয়ানা জোনস' এর দেখা মিলেছে ছবিতে। তিন বছর ধরে এই শিল্পীরা কাজ করেছেন সিনেমাটির ভিজুয়াল ইফেক্ট নিয়ে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল তাদের কাছে থাকা ডি-এজিং প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে আইএলএম ফেস সোয়াপ তৈরি করা।
ফটোরিয়ালিজম ডি-এজিং এই টিমের কাছে নতুন কিছু নয়। ফ্লাক্স এর মতো প্রযুক্তি তো আগে থেকেই ছিল এবং 'অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াসপ: কোয়ান্টাম্যানিয়া', 'দ্য আইরিশম্যান' সিনেমাগুলোতে এটি ব্যবহারও করা হয়েছে।
কিন্তু সিনেমার ভিএফএক্স সুপারভাইজার অ্যান্ড্রু হোয়াইটহার্স্ট এবং আইএলএমে ভিএফএক্স সুপারভাইজার রবার্ট উইভার যখন প্রথম জেমস ম্যানগোল্ড পরিচালিত এই সিনেমার কাজে হাত দিলেন, তখনই তারা জানতেন যে এটাই হতে যাচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
"আমরা জানতাম যে আমাদের কাছে থাকা সব টুলসই ব্যবহার করতে হবে এখানে, সেইসাথে নতুন টুলসও উদ্ভাবন করতে হবে", বলেন হোয়াইটহার্স্ট। তাই তারা আইএলএম ফেসসোয়াপ তৈরি করলেন।
এই নতুন টুলসগুলোর সাহায্যে তারা সম্পূর্ণ কম্পিউটার-জেনারেটেড থ্রিডি হেড, এমন সব উপাদানের সমন্বয় ঘটালেন এবং অন-সেট ফটোগ্রাফি থেকেও কিছু জিনিস নিলেন। হোয়াইটহার্স্টের ভাষায়, আগের ইন্ডিয়ানা জোনস সিনেমাগুলো থেকেও তারা 'মেশিন লার্নিং-ভিত্তিক রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করেছেন। রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল হাতে আসার পর শিল্পীরা হ্যারিসন ফোর্ডের ইন্ডি চরিত্রের আকারে একটি 'ক্লে মডেল' তৈরি করেন এবং শট-বাই-শট এই তারকাকে তরুণ রূপ দিতে লেগে পড়েন।
উইভার জানান, মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির তাদেরকে তারা যা চেয়েছিলেন, এর একটি টুডি রেপ্লিকা দেয়। কিন্তু তাদের দরকার ছিল ফুল থ্রিডি সিজি অ্যাসেট।
একইসঙ্গে তারা এও নিশ্চিত করেছিলেন যে শ্যুটিং এর সময় মূল ক্যামেরা ইউনিটের সাথে যেন বাড়তি ক্যামেরা থাকে যাতে করে সর্বোচ্চ রেফারেন্স পাওয়া যায়। প্রতিটি সেটআপের জন্য লাইট রেফারেন্স বের করেছিলেন তারা, যাতে করে সিজি প্রক্রিয়ায় এগুলোর নকল করা যায়।
উইভার বলেন, "আইএমএম ফেসসোয়াপের পেছনে আমরা কয়েকশো শিল্পী কাজ করেছি, বিভিন্ন শট নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু ছবিতে হ্যারিসন ফোর্ডের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করাটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আর সে কারণেই আমাদের কাজ সফল হয়েছে। আমরা কিভাবে তার পারফরম্যান্সের হুবহু তরুণ রূপে প্রকাশ করবো, কিভাবে কাজগুলো করবো সেসব ক্ষেত্রে ফোর্ডই ছিল মূল চালিকাশক্তি।"
এছাড়াও, পরিচালক ম্যানগোল্ডকেও কৃতিত্ব দিয়েছেন হোয়াইটহার্স্ট। তিনি জানান, পোস্ট-প্রোডাকশনের সময় পরিচালক অন্যদের আইডিয়া শুনতে খুবই পছন্দ করতেন।
আর হ্যারিসন ফোর্ডের বিষয়ে উইভার বলেন, "তিনি কতখানি দিতে সক্ষম, কতটা ফিট এবং পারফরম্যান্সের প্রতিটি দিক পরিচালনা করার জন্য আমরা তার উপর কতটা নির্ভর করতে পারি তা নিয়ে আমাদের মধ্যে ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা কাজ করছিল।"