যেভাবে কিং খান আবার বলিউডের রাজত্ব ফিরে পেলেন!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/12/21/12-1703086081.jpg)
চেন্নাইয়ের ৩৬ বছর বয়সী আর্থিক বিশ্লেষক, সুধীর কোঠারি, ডানকি সিনেমার মুক্তি উদযাপনের জন্য ৫ কেজি চকো ট্রাফেল কেক, ফুলের তোড়া এবং ঢোল বাদকের ব্যবস্থা করেন। সিনেমা মুক্তির আগে অর্ডার দেওয়া টি-শার্ট, ব্যাজ ও রিস্ট বেন্ডও সময়মতো তার কাছে চলে আসে। এমনকি হলের বাইরে শাহরুখ খানের একটি ২৫ ফুটের কাটআউট ছবিও স্থাপন করেন তিনি। তার এতো সব আয়োজন শুধুমাত্র সারাবিশ্বে একযোগে মুক্তি পাওয়া ডানকি সিনেমার সকাল নয়টার প্রথম দিনের প্রথম শো দেখার জন্য।
শাহরুখের অন্ধভক্তরা নিজেদেরকে 'এসআরকিয়ান' বলতে পছন্দ করেন। এমনই এক ভক্ত কোঠারি আল-জাজিরাকে জানান, '২০১৩ সালে শাহরুখ স্যার আমাকে টুইটারে ফলো দেওয়ার তিন চারদিন পরই আমি আমার একাউন্টটিকে ফ্যানক্লাবে পরিণত করি। এখন তার এই ফ্যানক্লাবে প্রায় দেড় লাখের ওপর ফলোয়ার আছে।' কোঠারি সবসময় নিজের নামের সাথে 'দ্য অনলি ফ্যান এসআরকে ফলোজ' যুক্ত করেন, এমনকি একই নামে একটি বইও লিখেছেন তিনি।
ভক্তদের জন্য শাহরুখ খানের প্রোডাকশন টিম থেকে প্রথম শো'র জন্য কিছু আয়োজন করা হয়। তারা শাহরুখের কাটআউট ছবিতে দুধ এবং ফুল জড়ানোর পর আতশবাজি ফোটাবেন, ৫৫০ আসন বিশিষ্ট থিয়েটারে নাচবেন, কেক কাটবেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #ডানকিরিভিউ হ্যাসট্যাগ দিয়ে বিভিন্ন পোস্ট ও ভিডিও শেয়ার করবেন। আর শাহরুখ তার এক্স (সাবেক টুইটার) থেকে উদযাপনের পোস্টগুলো ধন্যবাদ দিয়ে রিপোস্ট করবেন।
আল-জাজিরাকে একরকম কয়েকজন ভক্ত জানান যে, তারা এসব করার জন্য কোনো টাকা বা ফ্রি টিকেট পান না, শুধু মাত্র শাহরুখের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এমনটা করেন।
ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির সাথে বিগত সময়ে কিছু মতবিরোধ থাকলেও– শাহরুখ এবার তাদের নির্বাচনী প্রচারণা অনুসরণ করে তাঁর ডানকি সিনেমার প্রচারণা করেছেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/12/21/lutt-putt-gaya-still_006.01070171-1703086105.jpg)
হ্যাটট্রিক ব্লকবাস্টার
৫৮ বছর বয়সী শাহরুখের জন্য এই বছরটা অনেক ভালোই গিয়েছে। টানা কয়েকটি চলচ্চিত্র ফ্লপের পর চার বছর পর তিনি আবার সাফল্যের মুখ দেখেন।
জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া 'পাঠান' ও সেপ্টেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত 'জাওয়ান' দুটো চলচ্চিত্রই ব্লকবাস্টার হিট হয়। চলচ্চিত্র দুটি ভারতের সেরা ১০ ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান করে নেয়। সিনেমা বিশ্লেষকরা তাই ধারণা করছেন, ডানকিও হ্যাটট্রিক ব্লকবাস্টার করবে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৫ সালে শাহরুখের কোনো ছবি সাফল্যের মুখ দেখেছিল। কারণ ওই বছর ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেছিলেন। তার এই বিপরীত অবস্থান ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে। ফলস্বরূপ, খানের চলচ্চিত্রগুলোকে ট্রোলিং ও বয়কটের হুমকি দেওয়া হয়।
ফলস্বরূপ; মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে তিনটি ফ্লপ হয় এবং দুইটি মাঝারি ব্যবসা করে।
২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে আরিয়ানকে তাঁর কিছু বন্ধুসহ মুম্বাইয়ের একটি জাহাজ থেকে মাদকদ্রব্য রাখার মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় তাঁর ছেলে তিন সপ্তাহ কারাবন্দি ছিলেন।
তবে খান সবসময়ই স্পষ্টভাষী ছিলেন এবং সহজেই ভয় পাওয়ার পাত্র নন। এর আগেও মুম্বাইয়ের এক মাফিয়া তাকে একটি সিনেমায় অভিনয় করার জন্য চাপ দিতে থাকলে তিনি বলেন, 'দরকার হলে আমাকে গুলি করো, তবুও আমি তোমার জন্য কাজ করবো না, কারণ আমি একজন পাঠান।'
শাহরুখ প্রায়শই গণমাধ্যমে খোলামেলা সাক্ষাত্কার দিতেন এবং বিভিন্ন কমেডি টিভি শোতে অংশগ্রহণ করতেন, বিশেষ করে চলচ্চিত্র প্রচারের সময়। কিন্তু তার ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি কিছুটা গণমাধ্যমের আড়ালে চলে যান। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, টিভি শো এবং মিডিয়ার সামনে আসাও বন্ধ করে দেন। তখন শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তার ভক্তদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/12/21/ap21281292029419.jpg)
জানুয়ারিতে পাঠান মুক্তির পর প্রথম দিনের প্রথম শোতেই প্রায় ৫০ হাজারের মতো টিকেট বিক্রি হয়। কিন্তু পাঠানের এ রেকর্ড ভেঙে যায় জাওয়ান সিনেমার প্রথম শোতে ৮৫ হাজার টিকেট বিক্রির মাধ্যমে!
বক্স অফিস থেকে প্রায় ২১ বিলিয়ন রুপি আয় করে, বিগত কয়েক বছর ধুঁকতে থাকা বলিউডকে আবার আগের মহিমায় ফিরিয়ে আনতে শাহরুখের অবদান তাই স্বীকার করতে হবেই।
প্রযোজক এবং চলচ্চিত্র ব্যবসা বিশেষজ্ঞ গিরিশ জোহর আল জাজিরাকে বলেন, '২০২৩ সালে শাহরুখের এই উত্থানের পেছনে তার কিছু কৌশল ছিল। চলচ্চিত্রগুলোকে এমনভাবে বানানো, প্রচারণা ও মুক্তি দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিটি ছবি মুক্তির পর তার প্রতি দর্শকদের উন্মাদনা আরও বাড়ে এবং বক্স অফিসেও সাফল্য আসে।'
তামিল পরিচালক অ্যাটলি পরিচালিত জাওয়ান ছবিতে দক্ষিণের কিছু তারকারাও অভিনয় করেন। জোহর বলেন, 'আগে হিন্দি সিনেমাগুলো দক্ষিণে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ কোটি রুপি আয় করতো, কিন্তু জাওয়ানই প্রথম ছবি যেটি ৮০ কোটি রুপি আয় করার মাইলফলক স্পর্শ করে।'
খান ভক্তরাও ডানকি সিনেমার জন্য অনেক উচ্ছ্বসিত। সিনেমাটি পাঞ্জাব থেকে যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে করা একটি আবেগঘন চলচ্চিত্র। অভিবাসনের জন্য বড় সংখ্যায় মানুষের অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া হলো ডানকি ট্রাভেল।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/12/21/dsc02487-1703086137.jpg)
২০২৩: শাহরুখের নতুনভাবে উত্থান
২০১৬ সালে বলিউড কিং ডাফ অ্যান্ড ফেলপসের সেলিব্রিটি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ১৩ কোটি ১২ লাখ ডলার ব্র্যান্ড মূল্য নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছিলেন। ২০২২ সালে তা নেমে এসে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারে এবং তার অবস্থান নামে দশম স্থানে।
জনসংযোগ নিয়ে কাজ করা দিলিপ চেরিয়ানের মতে, তিনটি বিষয়ের জন্য শাহরুখের নতুন করে সফল প্রত্যাবর্তন হয়েছে।
প্রথমত, সবসময় রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করা শাহরুখ এবার চলচ্চিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেশপ্রেম, বীরত্বে, জাতীয় অনুভূতির মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ এই বিষয়গুলো সাধারণ দর্শকদের অনুভূতি স্পর্শ করে।
গত ২রা নভেম্বর ভক্তদের সাথে খানের জন্মদিন উদযাপনে উপস্থাপনা করা রেডিও জকি, রোহিনী রামনাথন এ নিয়ে বলেন, 'আপনি এই বছরের যেকোনও বড় চলচ্চিত্র দেখুন, সবগুলো ছবির পোস্টারেই দেখবেন হাতে বন্দুক থাকা নায়ককে দেখানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, শাহরুখ তার বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলেন। মূলধারার গণমাধ্যমের সাথে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখেন যাতে সাংবাদিকদের সাথে কোনো বিষয় নিয়ে মতবিরোধে না জড়ান।
তৃতীয়ত, শাহরুখ খান তার চারপাশে একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি করে রেখেছিলেন, যেমন- বিভিন্ন উপাসনালয় পরিদর্শনে যাওয়া বা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যাওয়া। নিজের মেয়ের সিনেমার প্রিমিয়ারেও তাকে দেখা যায়। এ ব্যাপারগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মূলধারার মিডিয়ায় ইতিবাচক আলোচনা সৃষ্টি করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বুর্জিল হাসপাতালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর খান, সম্প্রতি দুবাই সফর করেছেন। কিন্তু মজার বিষয় হল, তিনি ভারতের কোনো প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেননি!
তবে শাহরুখ খান সক্রিয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ করে এক্স-এ বিভিন্নভাবে সিনেমার প্রচারণা করছেন, যেখানে তিনি 'আস্ক মি এনিথিং' সেশনের মাধ্যমে ভক্তদের সাথে যুক্ত হন। তাদের সমালোচনামূলক বিভিন্ন জটিল প্রশ্ন এড়িয়ে ইতিবাচক, হাস্যকর টুইটগুলো বেঁছে নিয়ে উত্তর দিয়েছেন, প্রশংসা করছেন কিংবা ভার্চুয়াল আলিঙ্গন করেছেন।
এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মানুষের কথোপকথন বিশ্লেষণ করা দিল্লি ভিত্তিক ন্যারেটিভ রিসার্চ ল্যাব, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত খানের ৩১০টি টুইট বিশ্লেষণ করে দেখেছে শাহরুখ খানের পোস্ট করা হিন্দু উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছাসহ ভগবান গণেশের ছবিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক লাইক পড়েছে। গত সপ্তাহেও শাহরুখ দুটি হিন্দু মন্দির পরিদর্শন করেন এবং তা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল, শাহরুখের বাড়ির সামনে তার জন্মদিনে জড়ো হওয়া ভক্তদের সাথে নিয়ে তোলা একটি সেলফি।
ন্যারেটিভ রিসার্চ ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুদীপ নারওয়ানি বলেছেন, "শাহরুখ খানের রিব্র্যান্ডিং এবং চলচ্চিত্র প্রচারণা নির্বাচনী প্রচারণার মতোই, তারা শিখেছে যে তাদের পাল্টা লড়াই করতে হবে।"
শাহরুখ খান সতর্কতার সাথে রাজনৈতিক দলের মতো করে তার প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করেছেন। তার এই পন্থা বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণার মতো, তারা যেভাবে তাদের একটি অনুগত ভক্ত তৈরি করেছে, মূলধারার গণমাধ্যমকে একপাশে রেখেই তাদের চিন্তাভাবনা, আদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছে, শাহরুখও ঠিক একই কাজ করেছেন।
ভালো সাজতে ইন্সটাগ্রামের ব্যবহার!
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে শাহরুখ খানের বিভিন্ন ক্লিপ বেড়েছে। ক্লিপগুলোর মাধ্যমে শাহরুখকে একজন হাসিখুশি, বুদ্ধিমান ও নম্র ব্যক্তি হিসেবে চিত্রায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, তিনি নারীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন, একজন যত্নশীল পিতা এবং স্বামীর দায়িত্ব পালন করছেন, হাস্যরসের মাধ্যমে দর্শকদের বিনোদন দিচ্ছেন, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের পাঠ দিচ্ছেন।
কিন্তু শাহরুখের বিভিন্ন সমালোচিত রাজনৈতিক মন্তব্য, সেলফি তুলতে আসা ভক্তদের প্রতি বাজে আচরণ কিংবা সহ-অভিনেতাদের সাথে ঝগড়ার মতো বিষয়গুলোকে ভিডিও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
নারওয়ানি বলেন, 'এভাবে উদ্দেশ্যমূলক কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাকে আসলে জোর করে মহাতারকা বানানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।'
পাঠান একটি দেশপ্রেম ভিত্তিক চলচ্চিত্র আর জওয়ান রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত প্রতিশোধের, যেখানে শাহরুখ খান পিতা ও পুত্রের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
যখন ছবিটির ট্রেইলার প্রকাশ করা হয় তখন সব আকর্ষণ একটি সংলাপের দিকে চলে যায় সেটি হলো, "বেটে পে জানে সে পেহলে বাপ সে বাত কার (আমার ছেলেকে স্পর্শ করার আগে আমার সাথে কথা বল)।" সংলাপটি ২০০৮ সালের লিয়াম নিসন অভিনীত 'টেইকেন' এর অনুরূপ বা অনুপ্রাণিত।
যদি ডানকি বক্স-অফিসের রেকর্ড ভেঙে দেয়, তাহলে এটি বলিউডের জন্য শাহরুখ খানের বছরের শেষ উপহার হবে। যদি নাও হয় তাতেও খুব একটা পার্থক্য তৈরি হবে না কারণ, তিনি ইতোমধ্যে তার বাকি সিনেমা দিয়ে জয়ী হয়ে গিয়েছেন।
সমালোচনা থেকে প্রশংসায় পঞ্চমুখ
ডানকি ভারতের উত্তরের রাজ্য পাঞ্জাবের ওপর নির্মাণ করা, যেখানে বাড়িগুলোর ছাদে আমেরিকান দুধের ট্রাক, মাথার ওপর পানির ট্যাংকির আকারের বিমান এমনটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টিরও দেখা মিলে। বাড়িগুলো দেখলেই বোঝা যায়, ওই পরিবারের কোন সদস্য কোন দেশে অভিবাসী হয়েছেন।
ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পরিচালক রাজকুমার হিরানি দ্বারা নির্মিত এই ছবিতে, শাহরুখ খান 'হার্ডি' নামের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি তার চার বন্ধুকে অবৈধ ও বিপজ্জনক 'ডানকি রূট' দিয়ে লন্ডনে নিয়ে যান। ছবিটি ভারতীয়দের মধ্যে অনেক আবেদন তৈরি করেছে কারণ প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ ভারতীয় প্রবাসী সারাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন।
বক্স অফিসে সবসময় ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র তৈরি করার সুনাম আছে রাজকুমার হিরানীর। কিন্তু, ডানকিতে হিরানি থাকায় সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই আছে। ২০১৪ সালে, হিরানি 'পিকে' পরিচালনা করেছিলেন, যেখানে আমির খানকে একজন এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসী হিসেবে দেখানো হয়েছিল, যা ভারতের ধর্মীয় গুরুদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস এবং ভক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যদিও ছবিটি একটি বিশাল সাফল্য ছিল; কিন্তু এটিকে প্রায়ই ডানপন্থী ট্রলদের দ্বারা তাঁকে দেশবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য উত্থাপন করা হয়। ফলে তার চলচ্চিত্রগুলি বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়াও ২০১৯ সালে, হিরানি যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ওই ঘটনার পর এটি তার প্রথম ছবি। এছাড়া কয়েকদিন পর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পিকে এবং ডানকি নিয়ে, হিরানিকে বয়কটের আওয়াজ তোলা হয়।
ন্যারেটিভ ল্যাবের বিশ্লেষণমতে, গত ২ নভেম্বর শাহরুখ হিরানিকে ট্যাগ করে পোস্ট দিলে অন্তত ৭ শতাংশ নেতিবাচক মন্তব্য ছিল ওইখানে। তাই পরের ১০ দিনের প্রচারণামূলক পোস্টে শাহরুখকে আর হিরানিকে ট্যাগ করতে দেখা যায়নি।
আল জাজিরা রেড চিলিসের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা মন্তব্য দিতে রাজি হয়নি।