৫০ মিলিয়ন থেকে শূন্য: ৭০ বছর বয়সে বাধ্য হয়ে ‘নিজের সঙ্গে যায় না’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পাচিনো
হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র 'দ্য গডফাদার'র অভিনেতা আল পাচিনো সম্প্রতি প্রকাশিত তার এক স্মৃতিকথা 'সনি বয়'-এ জানিয়েছেন, তিনি তার সমস্ত অর্থ হারিয়ে ফেলার পর, ক্যারিয়ারে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হন। তার এক দুর্নীতিবাজ হিসাবরক্ষকের কারণে পাচিনোর এমন পরিণতি হয়। অবশ্য একটি পনজি স্কিম পরিচালনার অভিযোগে পরবর্তীতে সেই হিসাবরক্ষকের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়।
সেই হিসাবরক্ষক পাচিনোর সম্পদ ভুলভাবে পরিচালনা করেন, যার কারণে তার সঞ্চয়ের ৫০ মিলিয়ন ডলার মুহূর্তেই শূন্যে নেমে আসে।
পাচিনো জানান, ২০১১ সালে তিনি প্রথম সতর্ক সংকেত পেতে শুরু করেন। তার সেই হিসাবরক্ষক অনেক সেলিব্রিটি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করতেন এবং তিনি বিশ্বাসযোগ্য নন। সেই সময় পাচিনো বেভারলি হিলসে একটি বড় বিলাসবহুল বাড়ি ভাড়া নিতে বিশাল পরিমাণের অর্থ ব্যয় করেছিলেন। এরপর পুরো পরিবার নিয়ে ইউরোপ ট্রিপে যান পাচিনো। সেখানে তিনি বিলাসবহুল প্রাইভেট জেট 'গালফস্ট্রিম ৫৫০'-এ করে তার বেশকিছু অতিথিকেও সেই ইউরোপ ট্রিপে নিয়ে যান, আর লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলের পুরো একটি ফ্লোর ভাড়া নেন।
পাচিনো যখন তার হলিউডের বাড়িতে ফিরে আসেন তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে যান। কারণ ছুটিতে এতো ব্যয়ের পর তার আর্থিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। তিনি তার স্মৃতি কথায় লিখেছেন, "আমি ধরতে পেরেছিলাম, বিষয়টা খুবই সহজ। কোথাও কোনো গড়বড় হয়ে গেছে। আমার জন্য সময় তখন থেমে গেছে এবং আমি শেষ হয়ে গেছি।"
পাচিনো তার অর্থনীতি সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত খোঁজ নেওয়ার সময় স্মরণ করেন, "আমি একেবারে নিঃস্ব ছিলাম। আমার কাছে ৫০ মিলিয়ন ডলার ছিল। কিন্তু এ ঘটনার পর আর কিছুই রইল না। আমার সম্পত্তি ছিল কিন্তু অর্থ কিছুই রইল না।" তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, "এই ব্যবসায় যখন আপনি একটি সিনেমা বানিয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার আয় করবেন, সেই পুরো ১০ মিলিয়ন কিন্তু আপনার থাকবে না। কারণ আইনজীবী, এজেন্ট, প্রচারক এবং সরকারকে দেওয়ার পরে সেটা আর ১০ মিলিয়ন থাকে না বরং মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন শুধু আপনার থাকে। কিন্তু আপনি যেহেতু উচ্চ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তা জীবনযাপনেই ব্যয় হয়ে যাবে। এভাবেই আপনি আপনার অর্থ হারাতে থাকবেন। এটা খুব অদ্ভুত। আপনি যতবেশি আয় করবেন, আপনার ব্যয়ও ততো বাড়বে, সঞ্চয় কমবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি যে ধাঁচে অর্থ খরচ করছিলাম, তা ছিল এক পাগলাটে ক্ষতির চিত্র। প্রতি বছর আমার ল্যান্ডস্কেপারকে চার লাখ ডলার দিতে হতো। এসব আমি অতিরঞ্জিত করে বলছিনা। এ ধরনের খরচ শুধু চলতেই থাকতো। এ খরচ এমন একটি বাড়ির জন্য ছিল যেখানে আমি থাকতামও না।"
পাচিনো যখন নিঃস্ব হয়ে পড়েন তখন তার বয়স সত্তরের কাঠগড়ায়। তিনি বলেন, "সেসময় আমি তরুণ ছিলাম না। সিনেমায় অভিনয় করে আগে যেমন উপার্জন করতে পারতাম, তা তখন পারতাম না। তাই যে বড় অঙ্কের অর্থ আমি পেতাম, তা আর আসছিল না। সময় বদলাচ্ছিল এবং আমার জন্য অভিনয়ের ক্যারেক্টারের ভূমিকা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।"
তিনি জানান, নিঃস্ব হওয়ার আগে তিনি এমন চরিত্রে অভিনয় করতেন যেগুলোর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত মনে করতেন এবং মনে করতেন যে তিনি কিছু যোগ করতে পারবেন। তার অভিনীত 'ওশান'স ১৩; '৮৮ মিনিটস' ছিল সেরকম কিছু চলচ্চিত্র। কিন্তু নিঃস্ব হওয়ার পর তার এ মানসিকতা পরিবর্তন করতে হয়েছিল। যেসব চরিত্রের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ দেওয়া হতো, সেগুলো করতে শুরু করেন পাচিনো। এ কারণে তিনি অ্যাডাম স্যান্ডলারের বিতর্কিত 'জ্যাক অ্যান্ড জিল' সিনেমায়ও অভিনয় করেন পাচিনো। তাছাড়া তিনি কোনো বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করতে না। অর্থের জন্য তিনি সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি পরিচালক ব্যারি লেভিনসনের সাথে একটি কফির বিজ্ঞাপন করেন।
'জ্যাক অ্যান্ড জিল' সম্পর্কে পাচিনো বলেন, "এটি ছিল আমার প্রথম সিনেমা, যা আমি আমার অর্থ হারানোর পর করেছি। সত্যি বলতে, আমি এটা করেছি কারণ আমার আর কিছু করার ছিল না। তিনি আরও বলেন, "অ্যাডাম স্যান্ডলার আমাকে চেয়েছিলেন এবং তারা আমাকে এর জন্য অনেক অর্থ দিয়েছিল। তাই আমি এটা করে ফেললাম এবং এতে কিছুটা সাহায্য হলো। আমি অ্যাডামকে ভালোবাসি, তার সাথে কাজ করা ছিল অসাধারণ এবং সে এখন আমার একজন প্রিয় বন্ধু। সে দুর্দান্ত একজন অভিনেতা এবং একজন দারুণ মানুষ।"
পাচিনো জানান অর্থের জন্য তিনি তার দুটি বাড়ির একটি বিক্রি করে দেন। তাছাড়া আগে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারের জন্য অর্থ নিতেন না। সেখান থেকেও তিনি অর্থ নিতে শুরু করেন। সেমিনার সম্পর্কে তিনি বলেন, "সেমিনারগুলো আমার জন্য আরেকটি বড় আবিষ্কার ছিল। আগে আমি প্রায়ই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতাম এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতাম। মূলত তাদের সামনে আমি পারফর্ম করতাম। তাদের আমি আমার জীবনের কিছু গল্প বলতাম এবং তারা আমাকে প্রশ্ন করতো। এ জন্য আমি কোনো অর্থ নিতাম না।"
পরবর্তীতে পাচিনো এসব সেমিনারগুলো থেকে অর্থ নিতে শুরু করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি যেহেতু তখন নিঃস্ব ছিলাম, আমি ভাবলাম, এ কাজ আমি চালিয়ে যাবো। আমি জানতাম এর একটি বড় বাজার ছিল। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, এসব সেমিনারের জন্য আরও অনেক জায়গা ছিল। আমি দেখলাম সেগুলো কাজ করছে। দর্শকরা আসতো, কারণ তখনও আমার জনপ্রিয়তা ছিল।"
আল পাচিনোর স্মৃতিকথার বই 'সনি বয়' কেনার জন্য উন্মুক্ত, যে কেউ এটি কিনতে পারবে।