ইদ্রিস এলবা: আমি কেন আফ্রিকায় যেতে চাচ্ছি
ব্রিটিশ অভিনেতা ইদ্রিস এলবা বিএমসি-কে বলেছেন, তিনি আগামী এক দশকের মধ্যে আফ্রিকায় চলে যেতে চান, যাতে মহাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে সমর্থন দিতে পারেন।
৫২ বছর বয়সী এই অভিনেতা তানজানিয়ার জাঞ্জিবারে এবং ঘানার আক্রায় একটি চলচ্চিত্র স্টুডিও নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।
লন্ডনে জন্ম নেওয়া এলবার মা ঘানার অধিবাসী এবং বাবা সিয়েরা লিওনের। তাই আফ্রিকার প্রতি তার গভীর টান রয়েছে।
তিনি নিজের তারকা ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার বেড়ে ওঠা চলচ্চিত্র শিল্পকে সমর্থন করতে চান কারণ তার মতে, আফ্রিকানদের নিজেদের গল্প বলার প্রয়োজন রয়েছে।
আক্রায় একটি সিনেমা শিল্প সম্মেলনের সময় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি এখানে বসবাস করার কথা নিশ্চয়ই ভাবব। এটা ভাবারও দরকার নেই, এটা হবেই।"
এলবা আরও বলেন, "ঈশ্বর চাইলে আমি আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে চলে আসব। আমি চলচ্চিত্র শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য এখানে আছি। এটি একটি ১০ বছরের প্রক্রিয়া। আমি বিদেশ থেকে এটা করতে পারব না। আমাকে দেশে, মহাদেশে থাকতে হবে।"
তবে, প্যান-আফ্রিকানবাদের চেতনায় তিনি একটি নির্দিষ্ট স্থানে থাকার প্রতিশ্রুতি দেননি। এটি এমন এক চেতনা যেটি মনে করে, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, "আমি আক্রায়, ফ্রিটাউনে [সিয়েরা লিওনের রাজধানী], জাঞ্জিবারে থাকব। আমি করব, যেখানে গল্প বলা হচ্ছে, আমি সেখানে যেতে চেষ্টা। এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।"
এলবার একটি লক্ষ্য রয়েছে আর তা হলো, আক্রায় তার স্টুডিওতে একদিন একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা।
'গল্পগুলোকে নিজের মনে কর'
২০১৩ সালের বায়োপিক "লং ওয়াক টু ফ্রিডম"-এ দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার চরিত্রে অভিনয় করা এলবা বিশ্বাস করেন, আফ্রিকানদের চলচ্চিত্র নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ ক্যামেরার সামনে, পেছনে, এবং অর্থায়ন, বিতরণ, মার্কেটিং ও চূড়ান্ত পণ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রে থাকা অপরিহার্য।
তিনি কল্পনা করেন, ঠিক যেমন বিশ্বজুড়ে সিনেমা দর্শকরা নিউ ইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসের মধ্যে পার্থক্য জানেন, তারা একদিন আফ্রিকার বৈচিত্র্যকেও আরও সূক্ষ্মভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন।
এলবা বলেন, "এই খাত শুধু ঘানায় নয়, বরং পুরো আফ্রিকায় একটি উদীয়মান শক্তি। আপনি যদি আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো সিনেমা দেখেন, আপনি সবসময় দেখবেন ট্রমা [মানসিক আঘাত], আমরা কীভাবে দাস ছিলাম, কীভাবে আমাদের উপনিবেশিত করা হয়েছিল, কীভাবে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু যখন আপনি আফ্রিকায় আসেন, তখন আপনি বুঝবেন যে এ কথা সত্য নয়।"
তিনি আরও বলেন, "তাহলে, আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, এবং বিভিন্ন ভাষার মধ্যে পার্থক্যের গল্পগুলো আমাদেরই বলা খুব জরুরি। বিশ্ব সেসব গল্প জানে না।"
নাইজেরিয়ার নলিউড বছরে শত শত সিনেমা নির্মাণ করে, যা দেশটির অন্যতম সফল রপ্তানি। এছাড়া, ফ্রাঙ্কফোন আফ্রিকার কিছু অংশে উচ্চমানের সিনেমা নির্মাণের একটি ঐতিহ্য রয়েছে।
এলবা আগেও আফ্রিকার চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, মহাদেশের চলচ্চিত্রের এখনও সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে।
ইউনেস্কোর ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন এলবার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "প্রযোজনায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির" পরেও [আফ্রিকা] মহাদেশজুড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যবসা বিভিন্ন সমস্যার জন্য বিঘ্নিত হচ্ছে, যেমন: পাইরেসি, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব এবং সরকারি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের অভাব।
এলবা বিশ্বাস করেন, সঠিক গতিশীলতা এবং বিভিন্ন দেশে সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, "আমাদের গল্প বলার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে কারণ যখন আপনি আমাকে দেখেন, তখন আপনি আপনার একটি ছোট সংস্করণ দেখতে পান এবং এটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে।"