কে হবেন পরবর্তী জেমস বন্ড?
গত ১৬ বছরে ব্যবসাসফল ৫টি জেমস বন্ড চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পর বিখ্যাত ব্রিটিশ স্পাই চরিত্রটিকে বিদায় জানিয়েছেন অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেইগ। এ বছরের শেষার্ধে মুক্তি পাওয়া 'নো টাইম টু ডাই' ছিল ক্রেইগের শেষ বন্ড চলচ্চিত্র। বলাই বাহুল্য, বন্ড রূপে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন ক্রেইগ। কিন্তু তার বিদায়ের পর সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি জেগেছে সিনেমাভক্তদের মনে, তা হলো 'কে হবেন পরবর্তী জেমস বন্ড?'
ক্রেইগের পর রূপালি পর্দায় কে জেমস বন্ড হবেন তার উপর নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়। প্রথমত, বক্স অফিস সাফল্য এবং দ্বিতীয়ত, অভিনয়ে ক্রেইগের সমকক্ষ কাউকে পাওয়া। নতুন জেমস বন্ডও ভক্তদের মন জয় করতে পারবেন কিনা তা একটি কঠিন প্রশ্ন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, 'ক্যাচিং বুলেটস: মেমোয়ারস অব আ বন্ড ফ্যান' বইয়ের লেখক মার্ক ও'কনেল মনে করেন, নতুন জেমস বন্ড হয়তো তার পূর্বসূরিদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত করবেন ঠিকই; কিন্তু তিনি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা নিয়েই পর্দায় হাজির হবেন।
তাই নেক্সট জেমস বন্ড জিরো জিরো সেভেন কে হতে পারেন, সম্ভাব্য সেসব তারকাদের নিয়েই আজকের আয়োজন।
টম হার্ডি
একটি বিষয় তো আমরা নিশ্চিত জানি যে আগামীর জেমস বন্ড হবেন একজন ভিন্ন মানুষ। আর প্রযোজক বারবারা ব্রকোলি তো জানিয়েই দিয়েছেন, পরবর্তী জেমস বন্ড যে ই হন না কেন, তিনি অবশ্যই একজন পুরুষই হবেন! তাই নারী অভিনেত্রীরা আগেই এই তালিকা থেকে বাদ গেছেন।
পুরুষ চরিত্রের কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে টম হার্ডির জুড়ি মেলা ভার। ভেনম, ডানকার্ক ও ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড এর মতো ছবিগুলোতে এরই মধ্যে নিজের পৌরুষত্যের যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন টম।
এমনকি ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে টম নিজেই জানিয়েছেন, "আমি ক্রিস্টোফার নোলান বা তার মতো কারো পরিচালনায় বন্ড সিনেমায় অভিনয় করতে খুবই আগ্রহী।"
তবে ৪৪ বছর বছর বয়স হয়ে যাওয়ায় টম হয়তো এবার সেই সুযোগটা মিস করে ফেলেছেন। আর ক্রেইগের মতো তাকেও যদি ১৫ বছর ধরে বন্ড সেজে থাকতে হতো, তাহলে দেখা যেন ৬০ বছরের এক বুড়ো যুবক গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করছেন!
রেগ-জিন পেজ
'ব্রিজারটন' তারকা রেগ-জিন পেজের আবার বয়স বিষয়ক সমস্যা নেই। তাই তরুণ জেমস বন্ডের ভূমিকায় আমরা তাকে কল্পনা করতেই পারি।
প্রাক্তন জিরো জিরো সেভেন পিয়ার্স ব্রসনানও পেজের দিকেই হ্যা ভোট দিয়েছেন! সম্প্রতি সব অনুষ্ঠানের লাল গালিচায়ই যেন তাকে বন্ড চরিত্রের জন্য অডিশন দিচ্ছেন বলে মনে হয়েছে।
তবে পেজ কিন্তু বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যে, "আপনি যদি একজন ব্রিট হয়ে থাকেন তাহলে পরিচিত কারো অনুকরণ করলেই লোকে সেই 'বি' শব্দটাকেই ভেবে নেয়। এটা অনেকটা মেরিট ব্যাজের মতো। আর আমি সেই ব্যাজটা পেলে ভীষণ খুশিই হবো।"
রিচার্ড ম্যাডেন
পর্দায় প্রথম জেমস বন্ড হিসেবে দেখা দিয়েছিলেন স্কটিশ অভিনেতা প্রয়াত শন কনারি। তাই পুরনো কথা মনে করে যে প্রযোঙ্কেরা আরও একজন স্কটিশ প্রতিভা নিয়ে আসবেন, তা ভাবা অন্যায়ের কিছু নয়।
তাই জেমস বন্ড বানানোর জন্য অভিনেতা শিকারের জালে আটকাতে পারেন 'গেম অব থ্রোনস' তারকা রিচার্ড ম্যাডেনও। ঝকঝকে নতুন টাক্সেডো, গাড়ি রিভার্সে নেওয়া এবং বন্দুক চালানোর মাধ্যমে বন্ড অভিনেতার খানিকটা হাওয়া এনেছেন তিনিও।
কিন্তু রেগ-জিন পেজের মতোই এসব গুজবকে উড়িয়ে দিয়েছেন অভিনেতা নিজেই। ২০১৮ সালে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ তাকে জেমস বন্ড ভাবছে চিন্তা করলে তা তোষামোদের চাইতেও বেশি কিছু লাগে! তবে তিনি এও বলেন, "সবাই এই বিষয়ে গুজব ভালোবাসে। আমিও সেই তালিকারই একজন। পরের সপ্তাহে হয়তো আরও একজন আসবে।"
টম হপার
বন্ড ভূমিকায় অভিনেতা বেছে নেওয়ার ঝামেলা হলো, যাদের নাম পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে; তারা আসলে বুকিদের প্রিয়। কিন্তু প্রযোজকেরা এমন একজনকে বেছে নেয় যে আসলে চিন্তার বাইরে।
ও'কনেল লিখেছেন, "পিয়ার্স ব্রসনানের মৃত্যুর পরপর বা তাদের দুবছর বাদেও কোনো বুকি ড্যানিয়েল ক্রেইগের নাম করেনি। কারণ তারা ক্লাইভ ওয়েনকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তাও কিনা সে আরেক ছবিতে টাক্সেডো পরেছিল বলে! জেমস বন্ডকে তো কখনো রবিবার রাতে বাইরে দেখাই যেত না।"
অক্টোবরের শেষ দিকেও গুজব শোনা যায় যে প্রযোজক ব্রকোলি তার শর্টপ্লিস্টে হপারের নাম রেখেছেন।
হেনরি ক্যাভিল
ড্যানিয়েল ক্রেইগের সাথেই যে 'সুপারম্যান' অভিনেতার নাম জড়িয়ে ছিল তা অনেকেই জানে না। বয়স খুবই কম হওয়ায় বন্ড চরিত্রের জন্য তার ব্যাপারে গুজব শোনা যায়। তাই এবারও তিনি আছেন এই তালিকায়।
২০২০ সালে ক্যাভিল জিকিউকে বলেছিলেন, "এখন সবকিছুই বাতাসে গুঞ্জনের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। দেখা যাক কি হয়। তবে হ্যা, বন্ড চরিত্রে অভিনয় করতে আমি আগ্রহী। এটা দারুণ উত্তেজনাকর একটা ব্যাপার হবে!
বইয়ের লেখকও কি আছেন তালিকায়?
জেমস বন্ড সিনেমা নিয়ে গোটা একটা বই লিখে ফেলা ও'কনেল জেমস বন্ডকে বর্ণনা করেছেন এভাবে, "একজন নতুন বন্ড মানে শুধু লাল গালিচায় হাটা নয়। তাকে অবশ্যই একজন মুভি স্টার, সিরিজ ও সিনেমার জন্য একজন অ্যাম্বাসেডর, একজন মিডিয়া কূটনীতিক, ব্রিটিশ সংস্কৃতির একজন পুরুষ এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও এন্ডোর্সমেন্টের শুভেচ্ছাদূত হতে হবে।"
তার মতে, জেমস বন্ড হবেন এমন একজন যাকে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ একবার দেখেই চিনে ফেলবে। সেই সাথে তাকে দেখতে আকর্ষণীয়-সুন্দরও হতে হবে যাতে সিনেমার পর্দায় আবেশ তৈরি করতে পারেন এবং দর্শকদের ধরে রাখতে পারেন।
সূত্র: বিবিসি