মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির বিচার শুরু
প্রায় ছয় মাস আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মামলায় ঢালিউড অভিনেত্রী পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
বুধবার (৫ জনুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ অভিযোগ গঠন করেন।
অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হলো। মামলার অপর দুই আসামি হলেন আশরাফুল ইসলাম দিপু ও কবির হোসেন।
মাদক মামলায় হাজিরা দিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে উপস্থিত হন পরীমনি। তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী।
গত ৪ আগস্ট রাজধানীর বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা করে র্যাব।
এরপর তার জামিনের আবেদন বেশ কয়েকবার খারিজ হয়ে যায় এবং তাকে ২৭ দিন কাটাতে হয় কারাবন্দি অবস্থায়। এ সময়ে বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম তিনবার অভিনেত্রীকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
তিন দফা রিমান্ডের পর জামিন আবেদনের শুনানি শেষে ৩১ আগস্ট দুপুরে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক মুচলেকায় পরীমনির জামিন আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েস। জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর পরদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পান পরীমনি।
এদিকে, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট দুই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা চান ৮ সেপ্টেম্বর।
বলে রাখা ভালো, জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে সাধারণত আদালতগুলোয় অভিযুক্ত বা অপরাধীকে বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করে জামিনের আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ও ৪৯৭ ধারায় জামিন বিষয়ে বলা হয়েছে।
জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি জামিনের অধিকারী নয়, এর অর্থ এটি নয় যে, তার জন্য আর কোনো সুযোগ বাকি নেই। জামিন অযোগ্য অপরাধ সত্ত্বেও যদি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধের প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে তিনি জামিনে মুক্তি পেতে পারেন; এমনকি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনের যুক্তিসঙ্গত কারণ পাওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত অতিরিক্ত সুযোগ লাভ করতে পারেন যদি তিনি নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ ব্যক্তি হন।
অন্যদিকে, গুরুতর প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রেই সাধারণত অভিযুক্তদের দীর্ঘ সময় রিমান্ডে নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পরীমনিকে তিন দফায় সাত দিনের মধ্যে প্রথমে চারদিন, দ্বিতীয় দফায় দুইদিন ও তৃতীয় দফায় একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জাতীয় নিরাপত্তা বা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই গুরুতর মামলায় আদালতের এতদিনের রিমান্ডের অনুমতি দিতে দেখা যায়।
পরীমনির কাছে ১৮ লিটার মদ এবং এলএসডি পাওয়ার যে অভিযোগ আসে তাতে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা অনুসারে তিনি জামিনের অধিকারী ছিলেন না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড- মৃত্যুদণ্ড নয়।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪৯৬ এবং ৪৯৭, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদকেই তুলে করে যেখানে স্পষ্ট বলা আছে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।
সুতরাং, বিবেচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করে, বিচারকরা ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারার অধীনে পরীমনির জামিন মঞ্জুর করতে পারতেন। পাশাপাশি একজন নারী হওয়ায় তার জামিন পাওয়ার বিশেষ সুযোগ ছিল।
কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারকরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আবেদনে সাড়া দিয়ে তাকে রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে রাখেন এবং তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এমনকি বিচারক শুনানি ছাড়াই তার জামিনের আবেদন ২১ দিন পর্যন্ত মুলতবি রেখেছিলেন।
উল্লেখ্য, ঢাকার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল এমন অভিযোগ এনে গত বছরের ৮ জুন থেকেই আলোচনায় রয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ নায়িকা। ১৪ জুন তারিখে এ অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন পরীমনি।
মামলা দায়েরের পরপর নাসির ও অমিকে আটক করে পুলিশ। এর দুই মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে পরীমনিকেই মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করে র্যাব।