গৃহহীনদের সঙ্গে রাতের পর রাত গাছতলায় ঘুমাতেন জাভেদ আখতার
১৯৬৪ সালের ৪ অক্টোবর মুম্বাইয়ে পা রাখেন জাভেদ আখতার। হাতে তখন না ছিল কাজ, না টাকাপয়সা। অর্থের সন্ধানে, নিজের ক্ষুরধার কলমের জোরে স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আরব সাগর তীরে এসে পৌঁছান তিনি।
ভাগ্যের দুয়ার খোলার আগে গৃহহীনদের সঙ্গেই শহরের আনাচে-কানাচে থাকতে হত তাকে।
সারা সকাল কাজের সন্ধান। রাত হলে কখনও কোনও বারান্দা, কখনোবা কোনও করিডোর। মাঝেমাঝে আবার গাছের তলায় ভিড়ের মধ্যে রাত কাটিয়েছেন তিনি। সকাল হলে ফের লোটাকম্বল গুটিয়ে কাজের সন্ধান।
পাঁচটি বছর এভাবেই কাটে তার। ১৯৬৯ সালে এমন একটি কাজ পান, যার ফলে গাছের তলায় ঘুমানোর প্রয়োজন হয়নি আর। তার পরেই সেলিম খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে বলিউডের একের পর এক সুপারহিট ছবির সংলাপ লেখা শুরু করেন জাভেদ। পরিচিত হন সেলিম-জাভেদ নামে।
১৯৭০ থেকে ৮০-র দশক জুড়ে বলিউডে রাজত্ব চালান তারা। 'সীতা অউর গীতা', 'শোলে', 'দিওয়ার', 'ডন', 'মিস্টার ইন্ডিয়া'-র মতো ছবিতে কাজ করেন তারা।
কিন্তু ১৯৮২ সালে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আলাদা হয়ে যায় সেলিম এবং জাভেদের পথ। আলাদা আলাদাভাবে কাজ করা শুরু করেন তারা। আলাদা হলেও স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করতে ব্যর্থ হননি কেউই।
গীতিকার হিসেবে পরপর তিন বছর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন জাভেদ। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত যথাক্রমে 'সাজ', 'বর্ডার' এবং 'গডমাদার'-এর জন্য। শুধু তা-ই নয়, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রীও পেয়েছেন তিনি।
১৯৮৪ সালে অভিনেত্রী শাবানা আজমির সঙ্গে বিয়ে হয় জাভেদের। তিন দশক হয়ে গেল তাদের দাম্পত্যের। কিন্তু বিয়ের শুরুটা ততটা মসৃণ ছিল না। তার কারণ, আগে অভিনেত্রী হানি ইরানির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জাভেদের। দুই সন্তানও ছিল জাভেদ এবং হানির। ফারহান আখতার এবং জোয়া আখতার।
শাবানা এবং জাভেদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার সময়ে সমাজ থেকে নানা কটাক্ষ এসেছিল। অনেকেই কাদা ছোঁড়া শুরু করেন তাদের দু'জনকে নিয়ে। শাবানা তার এবং জাভেদের বিয়ে নিয়ে কথা বলার সময়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ''আমি সেই সময়ে নিজের যুক্তি দিতে পারতাম সকলকে। কিন্তু তাতে আরও কথা বাড়ত। আমি জানতাম, এখন চুপ থাকলে পরে সবাই ধীরে ধীরে বুঝবে। এবং তা-ই হল।
একই সঙ্গে তিনি হানি ইরানির প্রশংসা করেন। তার মতে, জাভেদের আগের পক্ষের স্ত্রী যদি পাশে না দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো তাদের দাম্পত্য সহজ হত না।
আজমির কথায় জানা যায়, তাদের বিয়ের পরপরই হানি তার দুই সন্তানকে শাবানা-জাভেদের সঙ্গে লন্ডন-ভ্রমণে পাঠিয়েছিলেন। সেই থেকে সৎ মায়ের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আজও সেই সম্পর্ক বজায় রয়েছে।
- সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা