এই বিজয় নারীর আত্মস্বাধীনতার বিজয়
যে বিজয় আজ আমাদের নারী ফুটবলাররা অর্জন করল সেই সাফল্যের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযুক্ত রয়েছে। এই ফুটবলারদের খেলার মাঠের পোশাক নিয়ে দেশের মৌলবাদীরা মুখ খোলেনি ঠিক, কিন্তু তাদের স্বাভাবিক জীবনে, খেলার পোশাক থেকে নিয়ে শুরু করে নানান বিতর্ক ছড়িয়েছে। এই বিজয়, এসব বিতর্ক থামিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিশাল ঘটনা। এই বিজয় আমাদের সমাজজীবনেও প্রভাব ফেলবে।
দেশের অভ্যন্তরে হিজাব বিতর্ক চলছে। বিতর্ক চলছে জিন্স পরা নিয়ে, বিতর্ক চলছে টিপ পরা নিয়ে- এবং সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্তও বিষয়টি গড়িয়েছে। বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।
নারীর স্বাধীনতা কেবলমাত্র শরীরের কোনো অংশ প্রদর্শন করা যাবে, বা যাবে না তা নয়, বরং এ ধরনের চিন্তা যে কতটা ভুল তা এবারকার সাফ ফুটবলে নারীদের বিজয় প্রমাণ করে দিয়েছে। এখানে পোশাক নিয়ে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে সরকারের ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। তাই যদি হয় বিষয়গুলো সরকার চাইলেই নিষ্পত্তি করতে পারেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ পোশাক বিতর্ক চলছে। হিজাব নিয়ে তাণ্ডব চলছে ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। আবার একই ঘটনা ঘটেছে ইরানেও। সেখানেও হিজাব না পরার কারণে এক কুর্দি নারীকে হত্যার অভিযোগ এনেছেন সে দেশের সাধারণ মানুষেরা।
দিন দিন এ পোশাক বিতর্ক আরো গভীর হচ্ছে, বিস্তৃত হচ্ছে। এই পোশাক বিতর্কের ফলে দেশের অভ্যন্তরে নারীরা কতটুকু স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি, কিন্তু ইউটিউবে নানান ব্যক্তিকে বয়ান করতে দেখা যায়। ধর্ম সম্পর্কে যারা অধিকাংশই মনগড়া কথা বলেন এবং বিশেষ করে নারীর পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে। নারীর পোশাক নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেন। কিন্তু মুসলিম নারীর সঠিক পোশাক কি?
আফগানিস্তানের পথে পথে নারীরা যে মুখ আবৃত করে শুধুমাত্র দুটি চোখ খোলা রেখে চলাচল করেন তাকেও আমাদের দেশের মৌলবাদীদের একাংশ সমর্থন করেন। তারা বলেন এটি নারীর ইসলামী পোশাক। আবার মুখ না ঢেকে রেখে কেবলমাত্র মাথার চুল আবৃত করে যে হিজাব পরা হয় তা নিয়েও বিতর্ক থামছে না দেশে।
তাই মুসলিম দেশগুলোতে আমাদের আজকের এই বিজয় হোক নারীদের বিজয়। আজকের এই বিজয় হোক নারীর আত্মস্বাধীনতার বিজয়।
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা এক ঐতিহাসিক বিজয় ছিনিয়ে এনেছে সাফ ফুটবলে। যে সাফল্য অর্জন করলো তা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সমাজে গভীর প্রভাব ফেলবে।
সাফ ফুটবলের এবারের আসরের শুরুতেই বোঝা যাচ্ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা একটি বড় অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা যখন ভারতকে পরাজিত করল তখনই এই ধারণা আরো দৃঢ় হয়ে উঠছিল।
আজকের জয়ের ভিতর থেকে প্রথম একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের নারীরা বিজয়ের নজির গড়লেন। তাদের এই বিজয় হোক নারীর আত্মস্বাধীনতার বিজয়।