সব শিশুকে স্কুলে আনতে হলে কী করণীয়
প্রথম আলো-র একটি সংবাদের সূত্র ধরে শিশু আধিকার নিয়ে কিছুদিন ধরে অনেক আলোচনা ও নাগরিক সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক (বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে) রুবাইয়া মুরশেদের সম্প্রতি প্রকাশিত বই Nobody's Children (UPL, 2022)-এর কথা মনে পড়ল। এ বইতে সে পথশিশুদের নিয়ে তার একটি সামাজিক উদ্যোগের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছে। তার অনুরোধে বইটির পেছনের মলাটের জন্য একটি ছবি তৈরি করে দিয়েছিলাম।
আমাদের সংবিধানে "রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব" হিসাবে নাগরিকদের "অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা"-এর কথা বলা আছে। পথশিশুরা স্পষ্টতই এই সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিশু অধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিয়ে মাথা ঘামানোর আগে আমাদের দেশের বাস্তবতা ও নিজেদের সংবিধানের দিকে তাকানোই তো বেশি দরকার। শুধু সরকার নয়, নাগরিকদেরও যে এখানে অনেক কিছু করার আছে, এই বইতে বর্ণিত উদ্যোগগুলো থেকে তা বোঝা যায়। আর রাজনৈতিক দলগুলো মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রামে যে পরিমাণ শ্রম ও অর্থ ব্যায় করে, তার একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি সামাজিক উদ্যোগে নিয়োজিত করা যেত, তাতে সমাজের যেমন মঙ্গল হতো, দলগুলোরও সত্যিকার জনসম্পৃক্ততা বাড়ত।
বাংলাদেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে চমকপ্রদ উন্নতি হয়েছে। তবে সব শিশুকে স্কুলে আনতে হলে এর সঙ্গে সংবিধানে উল্লেখিত "সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার"-এর বিষয়টিও জড়িত। সর্বজনীন শিক্ষার সুযোগ থাকলেও সে সুযোগকে কাজে লাগাতে দরকার পরিবারের ন্যূনতম জীবনধারণের সংস্থান। মুশকিল হলো বাংলাদেশসহ অন্য অনেক স্বল্পোন্নত দেশের রাষ্ট্রের মূলনীতিতে নাগরিকদের সমান সুযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তার উল্লেখ থাকলেও তা কেবল 'দিকনির্দেশনামূলক', কিন্তু প্রয়োজন হলো আইনি বাধ্যবাধকতা।
এ প্রসঙ্গে ভারতের একটি শিক্ষাবিতর্কের কথা উল্লেখ করা যায়। সে দেশের উচ্চতম আদালতের ২০০২ সনের একটি সংবিধান সংশোধনী রায়ে ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের শিক্ষার অধিকারের উপর আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। অনেক দিনের নাগরিকসমাজের দাবির ফলশ্রুতিতেই এটা সম্ভব হয়। তা সত্ত্বেও এই সংশোধনী সমালোচনার মুখে পড়ে। কারণ শিক্ষার সুযোগের সদ্ব্যবহারের দায়িত্ব অভিভাকের উপর দেয়া হয়, পরিবারের ন্যূনতম জীবনধারণের সংস্থান বিবেচনায় না নিয়েই। এছাড়া শিক্ষার মানের উল্লেখ না থাকার জন্যও এই রায়টির সমালোচনা করা হয়।
- লেখক: অর্থনীতিবিদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
[লেখাটি ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ফেসবুক থেকে নেওয়া]