রোজায় ডায়াবেটিস রোগী কী খাবেন, কেমন হবে আপনার খাদ্য ব্যবস্থাপনা
আমাদের দেশে সেহরি ও ইফতারের মধ্যবর্তী সময় সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা হতে পারে। এ দীর্ঘ সময় একজন ডায়াবেটিস রোগীর না খেয়ে থাকা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে অনেক বছর ধরে বহু বিতর্ক হয়েছে। অবশেষে পৃথিবীর মুসলমান ও অমুসলমান ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞগণ সর্বসম্মতভাবে মতামত দিয়েছেন যে, ডায়াবেটিস রোগীর পক্ষে রোজা রাখা ক্ষতিকর হবে। ডায়াবেটিস রোগীর বিপর্যস্ত বিপাকীয় তন্ত্রের কারণে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শারীরিক নানাবিধ সমস্যা হতে পারে।
কোনো ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডায়াবেটিস রোগীকে রোজা রাখার পরামর্শ দেবেন না। তবে কোনো ডায়াবেটিস রোগী যদি ধর্মীয় প্রচণ্ড আগ্রহের কারণে রোজা রাখতে চান, তবে তাকে নিষেধ করাও কারও পক্ষে সম্ভব না।
ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখার সময় সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে খাদ্য ব্যবস্থাপনায়। আজ এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- সেহরির খাবার সেহরির শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে খাওয়া উচিত।
- ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা ভালো।
- ডায়াবেটিস রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন তারা পানিশূন্যতায় না ভোগেন। খেজুর খেলে একটা খেজুর খেতে পারেন। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টক দই তালিকাভুক্ত করতে পারলে ভালো। ডাবের পানি পান করতে পারেন। যদি কোনো পানীয় পান করেন তবে চিনিমুক্ত পানি বেছে নেওয়াই উত্তম। যদি মিষ্টি পানীয় পছন্দ করেন, তবে সুইটনার, যেমন ক্যানডেরাল, জিরো ক্যাল বা সুইটেক্স ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন (তবে এগুলোও বর্জন করাটা বেশি সুস্বাস্থ্যকর হবে)। ভাজাপোড়া খাবার, যেমন পিঁয়াজু, বেগুনী, পুরি, পরোটা কাবাব অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।
- খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরন ঠিক করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাওয়া প্রয়োজন।
- রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতেন, রমজানে ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রেখে খাবার সময় এবং ধরন বদলাতে হবে। প্রয়োজন হলে নিউট্রিশনিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাবার তালিকা ঠিক করে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে ওষুধের সঙ্গে খাবারের যেন সামঞ্জস্য থাকে। ইফতারের সময় অতিভোজন এবং শেষ রাতে অল্প আহার পরিহার করতে হবে, বরং উল্টোটা হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর রোজার সময় খাবারের তালিকা:
তালিকা ১ (ক্যালরি ১৪০০)
(শশা, ক্ষীরা, আমড়া, কাজি পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি, (চিনি ছাড়া) ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে।)
তালিকা ২ (ক্যালরি ১৬০০)
(শশা, ক্ষীরা, আমড়া, কাজি পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি, (চিনি ছাড়া) ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে।)
তালিকা ৩ (ক্যালরি ১৮০০)
(শশা, ক্ষীরা, আমড়া, কাজি পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি, (চিনি ছাড়া) ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে।)
তালিকা ৪ (ক্যালরি ২০০০)
(শশা, ক্ষীরা, আমড়া, কাজি পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি, (চিনি ছাড়া) ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে।)
- ডা. শাহজাদা সেলিম: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ