উচ্চশিক্ষা: বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রমা কাটানোই বড় চ্যালেঞ্জ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ছাত্র আন্দোলনের শুরু, তা রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বুকে নজিরবিহীন একটি ছাত্র আন্দোলন ও সরকার বদলের পরিস্থিতিতে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। দীর্ঘ অচলাবস্থার পর অবশেষে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচল হতে যাচ্ছে। আমাদের অনেকের কাছে এ অচেনা জনপদের পথচলা কত দীর্ঘ হবে বা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সুফল আমরা কবে পাব, সময়ই তা ভালো বলতে পারে। তবে এটি বলা সহজ, জুলাই–আগস্টে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, তার ট্রমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীদেরকে অনেকদিন বয়ে বেড়াতে হবে।
অভ্যুত্থানে উল্লসিত ও আতঙ্কিত উভয় পক্ষের কাছে আজকের এ বাংলাদেশ বড্ড অচেনা। ফলে অচেনা জনপদে বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানটিতে আমাদের সামনে কিছু জরুরি প্রশ্ন সামনে উত্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি যুক্ত থাকা বা আন্দোলনের প্রধান শক্তি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু আলাপ তোলা এখন সময়ের দাবি।
২০২৪ থেকে একটু পিছিয়ে যাই ২০২০ সালে। বাংলাদেশে তখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ। সেই ২০২০ সালে দেড় বছরের মতো অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। করোনাকালের সেই দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ছিলাম আমরা। করোনার নিস্তরঙ্গ অবসাদের জীবনে অনলাইন ক্লাস হলেও, আমরা দেখেছি আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন চলে আসে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেই আচরণগত কিছু পরিবর্তন খেয়াল করি আমরা। তখন প্রযুক্তির কারণে ইন্টারনেটে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও বহুদিন চিরপ্রত্যাশার ক্যাম্পাসে ফিরতে পারিনি আমরা। মুক্তমনা ছাত্র–শিক্ষকদের প্রাণবন্ত ক্লাসলেকচার ও আড্ডাহীন ছাত্রজীবন পার করতে হয়েছে আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের।
সেই করোনাকালের অবরুদ্ধ কৈশোরকালের কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই এখন যৌবনের দুয়ারে ফের ট্রমায় পড়তে যাচ্ছে। প্রায় তিনমাস ধরে অচল প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। নজিরবিহীন সহিংসতা ও প্রাণহানি স্কুল-কলেজ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোজগতে বড় পরিবর্তন এনেছে। চলমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তন শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মানসিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে বদল এনেছে, আনবে; এটাই স্বাভাবিক। একজন শিক্ষার্থী এখন ক্যাম্পাসে ফিরবে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন মানুষ হয়ে। এ এমন এক ভিন্নতা, যা কোনভাবেই বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল তো নয়ই, পারতপক্ষে ঘৃণার।
পাশাপাশি জুলাই হত্যাকাণ্ডে শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের 'নীরবতা'ও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাটা বেশি ছিল বলেই হয়তো জীবনানন্দ দাশের মতো গাঢ় নীরবতা ভেদ করে এখন আমাদেরও শুনতে হবে — 'এতদিন কোথায় ছিলেন?' হাজার বছর পৃথিবীর পথহাঁটা অপেক্ষা ও উপেক্ষায় কাতর কবি জীবনানন্দকে যেভাবে বনলতা সেনের মুখোমুখি হয়ে রিমান্ড-স্টাইলে প্রশ্ন ছুঁড়েছিল অন্ধকারে! জুলাই হত্যাকাণ্ডে আমরাও যেন হাল ভেঙে দিশা হারানো নাবিক, তবে পাখির নীড়ের মতো মায়াবী চোখ তুলে তাকাবে না আমাদের শিক্ষার্থীরা; কারণ এ সবুজ ঘাসের দেশ তাদের রক্তজমিন। ফলে তাদের চোখে থাকবে ক্ষোভ, রাগ, অভিমান ও বিহ্বলতা।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। কেউ পদত্যাগ করতে দেরি করলে বা অস্বীকৃতি জানালে তাদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শিক্ষককে জুতার মালা পরানো, চেয়ার থেকে জোর করে উঠিয়ে নির্যাতন করা, থাপ্পড় মেরে উল্লাস করার মতো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় শিক্ষকেরাও ট্রমার মধ্যে পড়েছেন।
ছাত্র-জনতার প্রবল গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ আর আগের জায়গায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ও দেশের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যাচটি সম্মান চতুর্থ বর্ষে বা মাস্টার্সে, তারাই কিন্তু প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষে করোনাসংক্রমণের ফলে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। করোনার সময়ে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ছিল শিক্ষার্থীদের ঘরে বন্দি রাখা। যে বয়সে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ দাপিয়ে বেড়ানোর কথা, বান্ধবদের সঙ্গে খেলাধুলা-তর্ক-আলাপে নতুন বুদ্ধিজীবী হওয়ার কথা, টানা দেড়টি বছর সে সময়ে শিক্ষার্থীরা ছিল গৃহবন্দি। শিক্ষক হিসেবে আমরা ছিলাম অসহায়, অভিভাবকেরাও নিরুপায়। এরপর দীর্ঘ সময় লেগেছে আমাদেরকে 'পোস্ট-করোনা নিউ নর্মাল' লাইফে ফিরতে এবং মহামারির ট্রমা কাটাতে।
কিন্তু জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের আগে-পরে প্রায় তিন মাস ধরে ক্যাম্পাস সচল নয়। শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সেই জুন মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছন্দপতন। করোনাকালের পর আমাদের দেশের ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের জন্য অচল পরিস্থিতি।
এখন একটিই প্রশ্ন, ক্যাম্পাস সচল হলে শিক্ষার্থীরা কি তাদের নিজেদের খুঁজে পাবে? অনেকে ট্রমা হলে কোনোভাবে নিজেদের মানিয়ে নেয়, হোঁচট খেয়ে খেয়ে চলে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, সে ভালোই তো আছে। কিন্তু আসলে মানুষের শরীরের ভেতর আরও অনেক মানুষের মন বসবাস করে। সাংসারিক টানাপড়েন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঘাত-প্রতিঘাত এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন এসবের ধাক্কা কি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া খুদে বুদ্ধিজীবীরা নিতে পারবে?
তাদের জীবনে কঠিন সময় এসেছে, ফলে তারা দুর্বল হয়ে পড়বে, অস্থিরতা অনুভব করবে। স্বাভাবিক জীবনটাকে যেন অচেনা লাগবে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারে, যারা সামনে থেকে হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছেন, যারা উদ্ধার করেছেন, চিকিৎসা করেছেন, এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং যারা বাড়িতে বসে টেলিভিশনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নৃশংসতার ভিডিও দেখেছেন, বর্ণনাগুলো পড়েছেন তাদের প্রত্যেকের মনের ওপর এক ধরনের চাপ পড়েছে। শুধু প্রত্যক্ষভাবে যারা যুক্ত ছিলেন তারাই নন, পরোক্ষভাবে যারা ঘরে ছিলেন তাদের মধ্যেও এক ধরনের মানসিক ট্রমা, মানসিক চাপ পড়েছে। দীর্ঘমেয়াদিভাবে আরও কিছু দিন পর এ ট্রমার বিভৎসতা, নির্মমতা, নৃশংসতা এগুলো যখন তাদের স্মৃতিতে চলে আসবে তখন তাদের ভেতর পিটিএসডি বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার হতে পারে।
জুলাইয়ের এ নজিরবিহীন হানাহানি, পীড়ন, সহিংসতা ও প্রাণহানি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোজগতে বড় পরিবর্তন এনেছে। ক্যাম্পাস সচল হলে এমন একজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরবেন, তখন তিনি সম্পূর্ণ এক ভিন্ন মানুষ। সহপাঠীর পাশে, শিক্ষকের ডায়াসের বিপরীতে, আড্ডায়, ছাত্র হলে তাদের মধ্যে বড় ধরনের এক পরিবর্তন ঘটে যাবে। আমি যেহেতু শিক্ষক এবং প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক পৌরহিত্যের পদে আছি, আমি মনে করি সর্বদলমত নির্বিশেষে এসব পরিবর্তনকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে ধরে নিয়েই আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে।
কারণ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যেও ট্রমার সৃষ্টি হয়েছে। তারা ক্লাসে কীভাবে বিদ্রোহী ছাত্রদের সামলাবেন এমন কথাও বলেছেন অনেক শিক্ষকরা। অনেকেই আমরা নিজেদের অক্ষমতা ও নীরবতা নিয়ে মনোবেদনার 'পরাজয়ে' ভুগছি, আবার অনেকেই বিপ্লবী জৌলুসে 'বিজয়ী' ভাবছি। অনেকেই ভাবছি, এ গভীর সংকটের কি চটজলদি আদৌ সমাধান আছে? শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে তুলতে সুপারিশ তুলে ধরে শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, 'সার্বিক পরিস্থিতিতে সরকারকেও সময় দিতে হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা একটা ভূমিকা নিয়েছেন, এর ফল পাওয়া যাচ্ছে।… শিক্ষার্থীরা দুই রকম ট্রমার মধ্যে দিয়ে পার করছে। একটি হলো দেশের সব শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে ইনফেকটেড। একটি পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের মানিয়ে ওঠার ব্যাপার। আরেকটি হচ্ছে যারা নিজেদের চোখের সামনে সহপাঠী, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-স্বজনকে মারা যেতে দেখেছেন এবং নিজেরা আহত হয়েছেন। ট্রমা তো হবেই, এ জন্যই আমরা সরকারকে বলতে চাচ্ছি — এদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
এ অভ্যুত্থান সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে নতুন এক ইনক্লুসিভ, উদারনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জমিন তৈরি করে দিয়েছে। রাজনৈতিক গণঅভ্যুত্থানের শত-শত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন, ফলে এটি বেঁচে থাকা সকল শিক্ষার্থীর ওপরও গভীর মানসিক আঘাত তৈরি করেছে। এছাড়াও, বদলে যাওয়া মৌসুমি রাজনৈতিক হাওয়ার ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা, আতঙ্ক, এবং হতাশা দেখা দিয়েছে। এই দুই পক্ষের সম্পর্কে ফের বিশ্বাস ও আস্থা জাগিয়ে তোলা জরুরি। পারস্পরিক মর্যাদা ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সংকট নিরসনে আন্তরিক হতে হবে।
একটি শিক্ষাঙ্গানের প্রাণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা; দেশজুড়ে কোনো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন আর প্রাণ নেই। রাষ্ট্রের নিজের অবরুদ্ধ পরিস্থিতি না কাটলে প্রাণ ফিরবে না ক্যাম্পাসেও। রাষ্ট্রের প্রতি কমবেশি সবাই মনযোগী হয়েছি, এবার ক্যাম্পাসগুলোর দিকে তাকানোর সময় হয়েছে। সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হোক দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস। করোনাকালের ট্রমা কাটিয়ে যে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে যাত্রা শুরু করেছিল, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের যেন নতুন কোনো ট্রমায় পড়তে না হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানান সংগঠন, কাউন্সেলিং দপ্তর, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা, বিভাগীয় সভাপতি, ডিন ও প্রভোস্টদের ভূমিকা মুখ্য।
আমরা আমাদের বহু প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ পেয়েছি একাত্তরে। কথা ছিলো বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু তিন বছর না যেতেই রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দেখতে পেয়েছি। পরবর্তীকালে নব্বই সালে প্রবল নাগরিক আন্দোলনের ফলে আমরা আরেকটা বন্দোবস্তে গেলাম। সংসদীয় কাঠামো শুরু হলো, বৈষম্য গেল না। এক-এগারতে আরেকটা নতুন বন্দোবস্ত হলো। যেটার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বিপুল জনপ্রিয়তা ক্ষমতায় এলেও এটির কাঁধে এখন গণহত্যা, দুর্নীতি ও ফ্যাসিজম তৈরির ভয়াবহ কিছু অভিযোগ। রাষ্ট্র যখন বছরের পর বছর এতগুলো সংকটের পরও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারল না, তখন ২০২৪ এর নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আমাদের কতদূর নিয়ে যাবে, এটি সময় বলে দিবে।
আমাদের আকাঙ্ক্ষা থাকবে, সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ার কাজে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য শক্তি হয়ে উঠুক। সেই যোগ্যতার লড়াইয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস খুললেই যেন ফিরে পায় মুক্ত মন, মুক্ত আলো। ছাত্র-শিক্ষকেরা যেন প্রাণ খুলে বিচরণ করতে পারেন। ক্লাসরুম আর পরীক্ষার হলগুলোতে ফিরে আসুক প্রাণ। না হয়, 'পৃথিবীর সব রং নিভে যাওয়া ধুসর পাণ্ডুলিপি' করবে আমাদের জন্য অভিনব এক আয়োজন। যেখানে বসবে না শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল কোনো আয়োজন। ক্যাম্পাস খুললেই 'সব পাখি ঘরে আসা'র মতো সব শিক্ষার্থীরা দলে দলে ক্যাম্পাসে ফিরবে। কিন্তু তখন যদি তাদের সঙ্গে জরুরি কিছু বিষয় নিয়ে মনখুলে কথা না বলি, তখন তারা অভিমান, রাগ ও ক্ষোভে মুখ ফিরিয়ে নিবে। শিক্ষার্থীর 'সব লেনদেন' হারিয়ে যাবে, ডায়াসে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে থাকবেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের সামনে তখন শিক্ষকেরা নয়; থাকবে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন।
লেখক: রাজীব নন্দী; সহযোগী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।