ডিমেনশিয়া: নারী কেন পুরুষের চাইতে বেশি ভুলে যাচ্ছেন?
দেশে আশঙ্কাজনক হারে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর পাশাপাশি আরও শঙ্কার কথা হচ্ছে— যারা রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কেন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বা স্মৃতিভ্রংশ নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় এতো বেশি?
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, নারী তার জীবনে পুরুষের চাইতে বেশি সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও উপেক্ষার শিকার হন। ছোট থেকে বড় হতে হতে পরিবারের ভেতরেই নারী যৌন হয়রানির শিকার হন— যা তার মনোজগতে ভয়াবহ ট্রমা তৈরি করে। আর এসব অভিজ্ঞতা নারীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর খুব নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার ফেলে।
বিশ্বজুড়েই নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র ভয়াবহ। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা হলে, তার পাশে দাঁড়ানোর মতো বন্ধু, স্বজন ও সাপোর্ট সিস্টেম খুব দুর্বল। আসলে এই সমাজে নারীকে এমন একটি নাজুক পরিবেশের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, যার কারণে ডিমেনশিয়ার মতো আরও নানান ধরনের সমস্যা অবচেতনভাবেই নারীকে আক্রান্ত করে।
সহিংসতার শিকার নারী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং আঘাতজনিত পরিণতির শিকার হন। এ ধরনের মানসিক চাপ মস্তিস্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে; বিশেষত, কোর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের উচ্চমাত্রা মস্তিস্কে স্মৃতি এবং চিন্তা সম্পর্কিত অংশগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে— যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। আবেগ অবদমনের কারণে বাড়ে ডিপ্রেশন— যা ডিমেনশিয়ার অন্যতম কারণ।
সহিংসতার শিকার নারী সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন— যা মানসিক অবসাদ এবং একাকীত্বের সৃষ্টি করে। একাকীত্ব মস্তিস্কের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক বা মানসিক সহিংসতার ফলে নারীর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি এটি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ানোর একটি সম্ভাব্য কারণ।
২০১৫ সালে করা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর তথ্য বলছে, অন্তত ৭২ শতাংশ নারী তাদের স্বামী কর্তৃক নানান রকম নির্যাতনের শিকার হন। কিশোরীদের মধ্যেও অন্তত ৪২ শতাংশই তাদের স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। এ নির্যাতন শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও। সেই নির্যাতনকে তারা সহজেই ভুলে যেতে পারেন না। একজন নারী যখন গর্ভবতী হন, তখন দেখা যায় তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বহুকারণে আরও বেড়ে যায়। ডিমেনশিয়া রোগের পেছনে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
আলজাইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের উদ্যোগে 'ডিমেনশিয়া যত্ন ও নাগরিক মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ' বিষয়ক সেমিনারে এ তথ্যগুলো উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. হালিদা হানুম আখতার।
সেমিনারে আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে যেই সংখ্যক ডিমেনশিয়া রোগী পাওয়া গেছে, তারমধ্যে মাত্র একভাগ পুরুষ; আর বাকি তিনভাগই নারী। নারীরা রিপ্রোডাক্টিভের কারণেও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।
পরিবারের ভেতরে ও বাইরে নারীর নির্যাতিত হওয়ার চিত্র বাংলাদেশে খুব ভয়াবহ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নিজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন ৪২৭ নারী। এরমধ্যে ১৫৫ জন নারী স্বামীর হতে খুন হয়েছেন। নিপীড়িত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৩৫ জন নারী। আত্মহত্যার এই সংখ্যা নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহতা প্রমাণ করে।
সহিংসতার শিকার হয়েছে ৫৮০ জন শিশু। একই সময়ে ৩৬৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৯৭ জনকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৯৬ জনকে। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৪৯ জন। (সূত্র: আইন ও সালিশ কেন্দ্র)।
এই সংখ্যাগুলো শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য, বাস্তবতা এর চাইতেও হয়তো বেশি। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে ভুক্তভোগী নারী বা তার পরিবার মামলা করেন খুবই কম। যারা করেন, তারাও বিচার পান না। এর প্রতিটি ঘটনা নারীর জন্য ট্রমার কারণ। এই ভীতিকর পরিসংখ্যান প্রমাণ করে পরিবারে ও সমাজে নারী ও মেয়েশিশুর অনিরাপদ ও দুর্বল অবস্থান। এই ট্রমা ডিমনেশিয়ার আরেকটি কারণ।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, বিভিন্ন চেষ্টা সত্ত্বেও নারী ও মেয়েদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো এখনো 'আশঙ্কাজনকভাবে বেশি' রয়ে গেছে। নারী ও মেয়েদের জন্য নিজ বাড়ি অনিরাপদ রয়ে গেছে। বিশ্বে ২০২৩ সালে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ও স্বজনদের হাতে প্রতিদিন গড়ে ১৪০ জন নারী ও মেয়ে খুন হয়েছেন।
ডিমেনশিয়া রোগটির কথা ১৯০৬ সালে প্রথম উল্লেখ করেন আলোইস আলঝেইমার নামের একজন জার্মান চিকিৎসক। স্মৃতি হারিয়ে ফেলা একজন নারীর ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, তার মস্তিস্ক অদ্ভুতভাবে শুকিয়ে গেছে এবং স্নায়ুকোষ ও এর আশেপাশে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
আরও অনেক গবেষণার পর বেরিয়ে আসে যে মস্তিকের অনেক অসুখের একটি উপসর্গ এই ডিমেনশিয়া। এর স্বাভাবিক ও সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া বা ভুলে যাওয়া। ডিমেনশিয়া রোগীর পক্ষে অতীতের চেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা মনে রাখা অনেক বেশি কঠিন। আক্রান্ত ব্যক্তি ভুলে যান বলে নিজের কাজগুলো নিজে ঠিকমতো করতে পারেন না। কারও কারও হাঁটা-চলা, খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা, ঘুম ইত্যাদিতেও সমস্যা হতে পারে। পরিবর্তন আসতে পারে আচরণ, মেজাজ ও ব্যক্তিত্বেও। অনেকে পরিচয় ও ঠিকানা ভুলে যান বলে হারিয়েও যান। (সূত্র: বিবিসি)
বাংলাদেশে ডিমেনশিয়া বিষয়ে সচেতনতা খুব কম। আমরা অনেকে এই টার্মটির সাথে পরিচিত নই। তবে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা যে বাড়ছে, এটা কেউ কেউ বুঝতে পারলেও, অধিকাংশ মানুষই সচেতন নন। ডিমেনশিয়া সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি খুব কম বলে এ রোগের আক্রান্ত মানুষের লক্ষণ কী কী হতে পারে, কীভাবে তাকে পরিচর্যা করতে হবে, কী খাওয়াতে হবে, কীভাবে যত্ন করতে হবে— সে সম্পর্কে আমরা সঠিক জানি না। আমাদের অজ্ঞতার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি অযত্ন অবহেলায় ও কষ্টে থাকেন। আমরা অনেকেই ধারণা করি, দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি অংশ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন এবং এটা শুধু বয়স্ক মানুষেরই হয়। বুড়ো মানুষ যেমন ভুলে যেতে পারেন, কমবয়সীরাও ভুলে যেতে পারেন। বিশ্বজুড়েই এই ভুলে যাওয়া রোগের যথাযথ কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার হয়নি, তাই এই রোগটির বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা অপরিহার্য।
দেশে ডিমেনশিয়া সচেতনতা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পরিবারের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবরা এই ভুলে যাওয়াটাকে উপেক্ষা করেন, হাসাহাসি করেন। তারা এটাকে বার্ধক্যজনিত অথবা বয়োবৃদ্ধির একটি স্বাভাবিক নিয়ম হিসাবে দেখাতে চান। অথচ বাংলাদেশে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে এর প্রভাব তরুণদেরও হতে পারে। ডিমেনশিয়া পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়, তবে এর কিছু উপসর্গ কমানো যায় এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া নারীকে কেন বেশি প্রভাবিত করে, এর পেছনে শুধু মনস্তাত্ত্বিক নয়, কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু জেনেটিক, হরমোনাল এবং সামাজিক কারণ। নারীদের ডিমেনশিয়া হওয়ার পিছনে একটি বড় কারণ হলো— হরমোনের তারতম্য; বিশেষত, এস্ট্রোজেন হরমোন। এস্ট্রোজেনের স্তর কমে যাওয়ার কারণে মস্তিস্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, বিশেষত মেনোপজ হওয়ার পর এই হরমোনের মাত্রা কমে যায়— যা কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। নারীর মেনোপজ ইস্যুটি প্রায় সব পরিবারে এবং নারীর কাছেও উপেক্ষিত থেকে যায়। এ সময় যথাযথ শারীরিক ও মানসিক সাপোর্ট পান না অধিকাংশ নারী।
অথচ পরিবারে নারীর মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ অনেক বেশি। নারী তার মতামত স্বাচ্ছন্দ্যে প্রকাশ করতে পারেন না। অনেকক্ষেত্রেই শারীরিক ও মানসিক চাপ, বাড়তি দায়িত্ব-কর্তব্য মেনে নিতে বাধ্য হন। নারী সাধারণত বেশি সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা যেমন— উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও বিষণ্ণতা ইত্যাদির শিকার হন— যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। নারীরা যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তখন তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের নারীরা কীভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হচ্ছেন, তা ফুটে উঠেছে বিবিএসের এক প্রতিবেদনে। নারী নির্যাতন বিষয়ে বিবিএস এর সর্বশেষ 'রিপোর্ট অন ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন সার্ভে ২০১৫' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ৭৩ শতাংশ নারী কোনো না কোনো সময় স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ৩৯ শতাংশ নারী অভিযোগ করার প্রয়োজন বোধ করেন না। লোকলজ্জা, সামাজিক মর্যাদা, পরিবারের সম্মানহানির ভয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ নারী অভিযোগ জানাতে চান না। তারা অবলীলায় বলেছেন, মারামারির মধ্যেই টিকে থাকতে হয় তাদের।
দেশে দুই-তৃতীয়াংশ নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হার মাত্র ৩ শতাংশ। সচেতনতার অভাব, সংসারে টিকে থাকার ইচ্ছা, লোকলজ্জা ও অর্থ খরচের ভয়ে অধিকাংশ নারী থানায় অভিযোগ করেন না বা অন্যকোনো প্রাসঙ্গিক আইনে বিচার চান না।
নারী কেন অত্যাচার মেনে নেন, কেন ভোগান্তির শিকার হলেও বিচার চান না? এ প্রসঙ্গে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে নির্যাতিত একজন নারী বলেছেন, 'মামলার পেছনে কে দৌড়াবে? বাবা-মা মেনে নিছে, আমিও মেনে নিছি।' এছাড়া নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হলেও অভিযোগ করেন না, কারণ অভিযোগ করতেও টাকা লাগে।
বলা হয় যে, আর্থিক সংকটের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। সংসারের আয় বৃদ্ধির জন্য তারা কাজ করেন ঠিকই, কিন্তু আয় চলে যায় পরিবারের পুরুষের হাতে। অর্থের মালিক হয়ে যান পুরুষ, এমনকি নিজ উপার্জিত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে পুরুষ সদস্যের অনুমতি নিয়ে ব্যয় করতে হয়। চর, উপকূল, পার্বত্য ও হাওর এলাকার ১৪ জেলার নারীর অবস্থা আরও কঠিন। কাজেই আয় করলেই নির্যাতনের মাত্রা কমবে, তা কিন্তু নয়। গ্রাম ও শহর সবখানেই একই অবস্থা। যেকোনো ধরনের পারিবারিক নির্যাতন নারীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং ক্রমে তা ডিমেনশিয়ার মতো রোগ তৈরি করে।
২০২০ সালে করা 'ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম স্ট্যাটাস কো অ্যান্ড রিকমেন্ডেশন ফর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ভিকটিম ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক গবেষণায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান ও পুলিশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান বলেছেন, শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন— এই চার ধরনের পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন দেশের ৮৭ শতাংশ নারী। এরমধ্যে মাত্র ১ শতাংশ মামলা করেন এবং প্রায় ৩ শতাংশ সালিসি বা এনজিওর মাধ্যমে মধ্যস্থতা করেন।
মানুষ কেন ভুলে যায়, এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা বলেন, মস্তিকের একটি নির্দিষ্ট জায়গা, যাকে বলা হয় স্মৃতির প্রবেশপথ বা হিপ্পোক্যাম্পাস— এই এন্ট্রি পয়েন্টের ওপরেই রোগটি আক্রমণ করে। অর্থাৎ, ডিমেনশিয়া হলে হিপ্পোক্যাম্পাস শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়। যখন এটি ভাল থাকে, তখন এটি বিভিন্ন স্মৃতি সংগ্রহ করে জায়গা মতো গুছিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু হিপ্পোক্যাম্পাস যখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন সে আর স্মৃতি গুছিয়ে রাখতে পারে না। এ কারণে ডিমেনশিয়া হলে মানুষ তার নিকট অতীতের স্মৃতি হারাতে শুরু করেন। অনেক বছর আগের ঘটনা তার ঠিকই মনে আছে। কারণ সেগুলো গুছিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখনকার স্মৃতি গুছিয়ে রাখার মতো অবস্থায় নেই। (বিবিসি বাংলা)।
বাংলাদেশে ২০২০ সালে ১১ লাখ ডিমেনশিয়া রোগী পাওয়া গেছে। শতকরা বিবেচনায় এর ২৪.৫ শতাংশ পুরুষ। এছাড়া, নারী ডিমেনশিয়া রোগী রয়েছেন ৭৫.৫ শতাংশ।
এমনকি এই ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা আগামী বছরে (২০২৫ সাল) ১৩ লাখ ৭ হাজারে পৌঁছাবে— যেখানে পুরুষ আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩.২০ লাখে এবং নারী ৯.৮ লাখে।
বাংলাদেশে যেহেতু এই রোগের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক কম। তাই 'ভুলে যাওয়া' কারণের জন্য রোগীদের ডাক্তারের কাছে আনা হয় কি-না, সেটিও একটি প্রশ্ন। নারীর দুঃখ, চাহিদা, স্বপ্ন, রোগ, শরীর, নারীর সুবিধা-অসুবিধা যেহেতু অবহেলিত বিষয়, কাজেই নারীর ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটিও গুরুত্বহীন থেকে যাচ্ছে।
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।