রাশিয়াকে সমর্থন ও মার্কিন রোষের বলি ইমরান!
দীর্ঘ ৭৪ বছরেও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রকাঠামো সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারেনি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির জন্ম হয়েছিল, তারপর এই দীর্ঘ ৭৪ বছরেও দেশটির কোনো প্রধান কখনও স্বাধীনভাবে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।
স্বাধীনতা পরবর্তী এই দীর্ঘ সময়ের অর্ধেকের বেশি জুড়েই শাসন ক্ষমতা সরাসরি সামরিক বাহিনীর শাসকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একাধিক জেনারেল দেশটি পরিচালনা করেছেন। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক এবং সর্বশেষ পারভেজ মোশারফ- এই চার জেনারেলের সম্মিলিত শাসনকাল ৩০ বছরেরও বেশি।
শাসনতন্ত্র কার্যকর করতে পাকিস্তান সময় নিয়েছিল প্রায় ৯ বছর । ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর ১৯৫৬ সালে প্রথম দেশটির সংবিধান কার্যকর হয়। এক বছর সেই সংবিধান কার্যকরী ছিল। তারপর সামরিক শাসন জারি হলে ১৯৬২ সালে সংবিধান স্থগিত করে আইয়ুব খান নিজের মতন করে একটি সংবিধান চালু করেছিলেন। সেই সংবিধান রচনার জন্য সংসদের ব্যবহার করা হয়নি।
সংবিধানটি ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এরপর আবার সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করা হয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে পশ্চিম পাকিস্তান নামের প্রদেশটি পরিণত হয় একটি একক ভূখণ্ডের ফেডারেল রাষ্ট্রে। ১৯৭৩ সালে আবার নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। সংবিধানে একটি ফেডারেল কাঠামোর পার্লামেন্ট পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা কখনোই পূর্ণ রূপ লাভ করতে পারেনি। সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ববাদীতায় প্রায়ই পাকিস্তানের বেসামরিক শাসন পর্যুদস্ত হয়েছে।
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে পাক-ভারত ইস্যুতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে। পাকিস্তান-ভারতের যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে, তার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পিছনে জিডিপির একটি প্রধান অংশ খরচ হয়। এই সংকটকে সামনে রেখে পাকিস্তানের জনগণের করের পয়সায় বিশাল একটি সেনাবাহিনী পালন করা হচ্ছে।
পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ফলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থেকে মাঝেমধ্যেই বিরতি দেয়। তবে তখনও পর্দার অন্তরাল থেকে শাসনব্যবস্থায় ছড়ি ঘুরানো ঠিকই অব্যাহত থাকে। তেমনি একটি ঘটনা বর্তমানেও চলছে।
পাকিস্তানে ইমরান খানের তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টিকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করার আপ্রাণ চেষ্টায় লিপ্ত দেশটির বিরোধী দল। ইমরান খান আস্থাভোটে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করার রাস্তা থেকে সরে গিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন রাষ্ট্রপতির কাছে। বর্তমানে পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে বিশেষ করে ইমরান খানের নিজ রাজনৈতিক দলের অনেকেই তার বিপক্ষে। তার নিজের রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র সংকট বিরাজমান।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মোট ৩৪২টি আসনের মধ্যে ইমরান খানের পার্টির রয়েছে ১৫৫টি আসন। সেনাবাহিনী ও আঞ্চলিক কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সহায়তায় সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও ইমরান খান ক্ষমতায় ছিলেন। এই মুহূর্তে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই নানান প্রচেষ্টার ভেতর থেকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করেছেন ইমরান খান।
- লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক