বাংলাদেশের উচিত রাশিয়াকে সমর্থনের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপর যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মোস্ট ফেভার্ড ন্যাশন এর নিয়মানুযায়ী করতে পারে না। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। শক্তিশালী দেশগুলো ডাব্লিউটিও'র শর্ত মেনে এসব বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, দিয়েছে রাজনৈতিকভাবে।
কারণ, ডাব্লিউটিও'র নিয়মানুযায়ী কোনো দেশের এমএফএন সুবিধা বাতিল করতে পারে না। কেবল তা-ই নয়, ডাব্লিউটিও থেকে রাশিয়ার সদস্যপদও বাতিল করতে চাচ্ছে পশ্চিমারা, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজীকরণের উদ্দেশ্যে গঠিত ডাব্লিউটিও নীতির পরিপন্থি। ডাব্লিউটিও'র নীতি অনুযায়ী কারও সদস্যপদ বাতিল করার সুযোগ নেই। পশ্চিমারা যা করছে, তার পুরোটাই রাজনৈতিকভাবে করছে।
এখন রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর নেওয়া এসব উদ্যোগের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ডাব্লিউটিওতে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কোনো কারণে রাশিয়া সরে গেলে বাংলাদেশের বিরাট ক্ষতি হবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে, যা অক্ষুন্ন রাখা জরুরি।
তাই রাশিয়া বাংলাদেশের যে সমর্থন চেয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ কি করবে, তা ডাব্লিউটিও'র পলিসি অনুযায়ী বিবেচনা না করে রাজনৈতিকভাবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দুই পরাশক্তির দ্বৈরথে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে প্রত্যেকটি পদক্ষেপের প্রস এন্ড কন বিবেচনা করে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন হবে।
কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই পক্ষ যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা তারা রাজনৈতিক বিবেচনাতেই নিচ্ছে।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি না বাড়াতে ভারতের উপর যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে, অথচ তারা নিজেরাই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ধ্বস ঠেকাতে ভেনিজুয়েলার সঙ্গে সমঝোতায় যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থেই এসব করছে। তাই যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশকে খুব সতর্কতার সঙ্গে দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যতো সাবধানে পা ফেলবো, ততোই মঙ্গল।
- বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (পিআরএল) ড. মোস্তফা আবিদ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বিশেষ প্রতিবেদক আবুল কাশেমের সাথে ফোনালাপে এ কথা বলেন।