বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে যে কথা বলতে হয়
বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি নিয়ে যেসব আলোচনা শুনতে বা পড়তে পাওয়া যায় তার প্রায় সবগুলোতে বলা হয় – ফসল তোলার সময়ের সাথে রাজস্ব আদায়ের সময় সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের নির্দেশে ফতেহ্ উল্লাহ্ শিরাজী এই ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেন। কেউ কেউ এই ক্যালেন্ডারের ধারণাটি সম্রাট আকবরের অর্থমন্ত্রী রাজা টোডর মল অথবা প্রধানমন্ত্রী আবুল-ফযল ইবনে মুবারাকের বলে দাবি করেন। ধারণাটি যারই হোক, এ কথা সত্য যে, সম্রাট আকবরের সময়ে রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি সৌরবর্ষীয় ক্যালেন্ডার চালু করা হয় যার শুরুটা চান্দ্রবর্ষীয় ক্যালেন্ডার হিজরীর সাথে সমন্বয় করা হয়েছিল।
চান্দ্রবর্ষ আর সৌরবর্ষের পার্থক্যের দরুণ এই লেখার সময় পর্যন্ত সম্রাট আকবরের আমলে প্রচলিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাংলা সন হচ্ছে ১৪২৯ আর হিজরী হচ্ছে ১৪৪৩ – ১৪ বছরের পার্থক্য। মুঘল আমলের ইতিহাস পাঠে জানা যায়, রাজস্ব আদায়ের জন্য যে ক্যালেন্ডারই অনুসরণ করা হয়ে থাকুক না কেন দাপ্তরিক কাজের জন্য সে সময় হিজরী ক্যালেন্ডারই অনুসরণ করা হয়েছে। মানে তখন বাংলা ক্যালেন্ডার দাপ্তরিক ব্যবহারের মর্যাদা পায়নি।
সূর্যের পরিক্রমণের সাথে বাংলা ক্যালেন্ডারটি যথাযথভাবে সমন্বিত না থাকায় সেটি সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমির তরফ থেকে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ এটি সংশোধন করেন। সংশোধনীতে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩১ দিনে, আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাস ৩০ দিনে এবং অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে হিসেব করার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য বাংলা একাডেমির ক্যালেন্ডার অনুসৃত হয় না। সেখানে একাধিক ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা চালু আছে যেখানে মাসে দিনের সংখ্যা ২৯ দিন থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত হয়, এবং একই মাস বিভিন্ন ক্যালেন্ডারে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে হিসাব করা হয়।
আকবরের নির্দেশিত বাংলা ক্যালেন্ডার বিষয়ে একটু ভাবলে কিছু অবধারিত প্রশ্নের উদয় হয়। প্রথমত, এই ক্যালেন্ডারের নাম বাংলা ক্যালেন্ডার কেন? কেন এর নাম মুঘল ক্যালেন্ডার বা আকবরী ক্যালেন্ডার বা হিন্দুস্তানী ক্যালেন্ডার নয়? শুধুমাত্র আকবরের নির্দেশনাকে হিসেব করলে এই ক্যালেন্ডারের নাম বাংলা ক্যালেন্ডার হবার কোন কারণ নেই। কারণ, আকবরের আমলে এর নাম ছিল 'ফসলী সন'। ধারণা করা যেতে পারে বাংলার লোকজন হিজরীর সাথে পার্থক্য করার জন্য একটাকে হিজরী আর আরেকটাকে বাংলা বলে উল্লেখ করতেন।
ঐতিহাসিকদের এক দলের মতে, আকবরেরও আগে ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার সুলতান আলা-উদ্-দীন হুসাইন শাহের আমলে এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হয়। আরেক দলের মতে, আলা-উদ্-দীন হুসাইন শাহেরও আগে গৌড়াধিপতি শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের সম্মান শশাঙ্ক অথবা আল-উদ্-দীন হুসাইন শাহের প্রাপ্য হলে, অথবা এর প্রচলন তাঁদের আমল থেকে আরও আগে হয়ে থাকলে এই ক্যালেন্ডারের নাম 'বাংলা ক্যালেন্ডার' হওয়ার যৌক্তিকতা স্পষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ত, এই ক্যালেন্ডারের মাসের নামগুলো ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দেওয়া নক্ষত্রদের সংস্কৃত নাম থেকে উদ্ভূত কেন? কেন মাসগুলোর নাম হিজরী ক্যালেন্ডারের অনুরূপ অথবা আরবী/ফারসি ভাষার নয়? স্মর্তব্য, সম্রাট আকবরের শাসনামলে দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফারসি। মুঘল ইতিহাস থেকে জানা যায়, মাসগুলোর নাম শুরুতে ফারসিতেই ছিল। যথাক্রমে ফারওয়ার্দিন, আর্দি, খুর্দাদ, তীর, মুর্দাদ, শাহ্রিয়ার, বিহিসু, আবান, আযার, দেয়ি, বাহ্মান ও ইসকান্দার মিয। কিন্তু এই নামগুলো বেশি দিন ব্যবহৃত হয়নি। বরং ৭৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারতবর্ষে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত শক ক্যালেন্ডারের মাসের নাম বৈশাখ (বৈশাখ), জৈষ্ঠ (জৈষ্ঠ), আষাঢ় (আষাঢ়), শ্রাবণ (শ্রাবণ), ভাদ্রপদ (ভাদ্র), আশ্বিন (আশ্বিন), কার্তিক (কার্তিক), মার্গশীর্ষ (অগ্রহায়ণ), পৌষ (পৌষ), মাঘ (মাঘ), ফাল্গুন (ফাল্গুন) ও চৈত্র (চৈত্র) থেকে মাসের নাম গ্রহণ করা হয়। কারণ, এই নামগুলো পরিচিত এবং স্থানীয়ভাবে সার্বজনীনভাবে আগে থেকেই ব্যবহৃত।
তৃতীয়ত, এই ক্যালেন্ডারের দিনের নামগুলো সৌরমণ্ডলীর সদস্যদের সংস্কৃত নাম থেকে উদ্ভূত কেন? দিনগুলোর নাম হিজরী ক্যালেন্ডারের অনুরূপ অথবা আরবী/ফারসি ভাষার নয় কেন? সম্রাট আকবরের সময়ে মাসের প্রতিটি দিনের আলাদা আলাদা ফারসি নাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, একত্রিশটা দিনের একত্রিশটা আলাদা আলাদা নাম মনে রাখা ও দিনের হিসেব রাখা একটা অসম্ভব ব্যাপার, তাও আবার বিদেশি ভাষায়। তাছাড়া, ৭ দিনের সপ্তাহভিত্তিক দিন গণনা ও সেগুলোর নাম আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। তাই সম্রাট শাহ্জাহানের আমলে ৭ দিনের সপ্তাহভিত্তিক দিন গণনা ও সপ্তাহের পূর্বপ্রচলিত নামগুলো পুনঃপ্রচলিত হয়।
চতুর্থত, এই ক্যালেন্ডারের আগে বাংলা বা ভারতের মানুষ কোন্ ক্যালেন্ডার অনুসরণ করতো? দেখাই যাচ্ছে খোদ সম্রাট আকবরের সময়ে দাপ্তরিক কাজে হিজরী সন আর স্থানীয়ভাবে শকাব্দ চালু ছিল। তাছাড়া শশাঙ্কের অবদানকে ধর্তব্য মনে করলে বঙ্গাব্দের ব্যবহার ষষ্ঠ শতক থেকে। সঠিক নিয়মে দিন-মাস-বছর গণনা করার সৌরবর্ষ পদ্ধতির উৎপত্তি যদি 'সৌরসিদ্ধান্ত' থেকে ধরি তাহলে সৌরবর্ষভিত্তিক স্থানীয় ক্যালেন্ডারের শুরু চতুর্থ শতকে; অর্থাৎ শশাঙ্কের প্রায় ২০০ বছর আগে, হুসাইন শাহের প্রায় ৮০০ বছর আগে ও সম্রাট আকবরের প্রায় ৯০০ বছর আগে থেকে এমন ক্যালেন্ডার এই দেশে প্রচলিত আছে। কিন্তু সৌর সিদ্ধান্তও শেষ কথা নয়, কারণ, সৌরসিদ্ধান্তর উৎপত্তি বৈদিক ক্যালেন্ডার থেকে। বেদ যখন অগ্রন্থিত তখনো যজ্ঞ, হোম ও অন্যান্য আচারের জন্য তিথী, লগ্ন ইত্যাদি গণনার জন্য ক্যালেন্ডার আবশ্যক ছিল। তখন তিথী, লগ্ন ইত্যাদি গণনা করার জন্য চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রাদির অবস্থান ও গতিপথভিত্তিক নানা প্রকারের বৈদিক ক্যালেন্ডারের ব্যবহার ছিল। ব্রোঞ্জ যুগের অন্তিম পর্ব থেকে লৌহ যুগে বৈদিক ক্যালেন্ডারসমূহ প্রচলিত ছিল।
দেউলপোতাসহ রাঢ় অঞ্চলে প্রাপ্ত পুরাতন প্রস্তর যুগের হাতিয়ারকে বিবেচনার বাইরে রাখলেও উয়ারী-বটেশ্বরের ধ্বংসাবশেষকে বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ধরলে বাংলায় সভ্যতার বয়স কম করে হলেও ২৫০০ বছরের পুরনো হয়। তারও কমপক্ষে হাজারখানেক বছর আগে বেদ গ্রন্থিত হয়। তার মানে, বৈদিক ক্যালেন্ডারসমূহ ততদিনে সংহতরূপ পেয়ে গেছে। এই সময়ে বাংলাতে বৈদিক ক্যালেন্ডারের একটি স্থানীয় অভিযোজিতরূপ ব্যবহার একটি অবধারিত ব্যাপার হবার কথা।
বাংলা ক্যালেন্ডারকে পুরোপুরি সৌর (solar calendar) বলা যায় না। একে কিছুটা চান্দ্রসৌর (lunisolar calendar) এবং কিছুটা নাক্ষত্রিক সৌর (sidereal solar calendar) বলা যুক্তিযুক্ত। বৈদিক ক্যালেন্ডার হতে উদ্ভূত অন্যান্য ক্যালেন্ডারও এমন চন্দ্র-সৌর-নাক্ষত্রিক; যেমন, শক ক্যালেন্ডার, হিন্দু ক্যালেন্ডার, তামিল ক্যালেন্ডার, মালয়ালাম ক্যালেন্ডার, বিক্রম ক্যালেন্ডার ইত্যাদি। তাই সম্রাট আকবরের আমলে হিজরীর ন্যায় চান্দ্রবর্ষের সাথে ফসলী সনের মতো সৌরবর্ষকে মিলানোর চেষ্টা ঠিক বৈজ্ঞানিক নয়। এই কারণে ফসলী সন প্রচলনের গোড়া থেকে সঠিক সময় হিসেবে গড়বড় ছিল, যা আজো চলে আসছে।
মোটামুটি ধারণা করা যাচ্ছে, শশাঙ্ক অথবা আলা-উদ্-দীন হুসাইন শাহের আমলে বাংলায় একটা নতুন ক্যালেন্ডার চালু করা হয়েছিল বটে তবে তারও আগে থেকে এখানে অন্য এক বা একাধিক ক্যালেন্ডার প্রচলিত ছিল। পূর্ব থেকে প্রচলিত স্থানীয় ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ না করে হিজরী সন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের চেষ্টাটি দিল্লীভিত্তিক মুসলিম শাসকদের। সেটা মামলুকদের কাজ হতে পারে অথবা তার পরের কারো কাজ হতে পারে। শুধুমাত্র বাংলার প্রেক্ষিত বিবেচনা করলে এটা সম্ভবত মুঘলদের কাজ। হিজরী সন অনুসারে রাজস্ব আদায়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল সম্রাট আকবরের সময়ে পুরনো ক্যালেন্ডারকে ভিত্তি করে সেটা নিরসন করার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
বিষয়টি এবার একটু ভিন্ন প্রেক্ষিত থেকে পর্যবেক্ষণ করা যাক। বাংলা নববর্ষ একটা বিশুদ্ধ স্থানীয় ও লোক উৎসব। এটা কোনভাবেই মুঘল-পাঠানদের উৎসব নয়। অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করা অথবা কোনো শাসকের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া উৎসবও নয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন নামে এই লোক উৎসবটা পালন করে থাকেন। যেমন:
বাঙালী = নববর্ষ
চাকমা, মুরং = বিজু/বিঝু
ত্রিপুরা = বৈসু/বৈসুক
মারমা, রাখাইন = সাংগ্রাই/সাংগ্রাইং
অসম = বিহু
মণিপুর = চেইরাওবা
ওড়িয়া = মহা বিষ্ণু
তামিল = পুথান্দু
কেরল = বিসু
পাঞ্জাব = বৈশাখী
হিমাচল = বাসোয়া
মৈথিলী = জুড়ি শীতল
নেপাল = নয়া বর্ষ
বার্মা = থিঙইয়ান
শ্রীলঙ্কা = আলুথ আওরুদ্ধা
থাইল্যান্ড = সংকার্ন
কম্বোডিয়া = চঅল চনম থমাই
লাও = পী মাই/সোংকার্ণ
দেখা যাচ্ছে এপ্রিলের ১৪ তারিখ বা তার দুয়েকদিন আগে-পরে বছরের প্রথম দিন পালনকারী জাতির সংখ্যা বহু; এবং তাদের বড় অংশের সাথে শশাঙ্ক, আলা-উদ্-দীন হুসাইন শাহ্ বা জালাল-উদ্-দীন আকবরের শাসনের কোন দূরতম সম্পর্ক নেই। তার মানে, মূল ভিত্তিকে অপরিবর্তিত রেখে একটি ক্যালেন্ডার নানা আকারে, নানা রূপে গোটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল এলাকা জুড়ে কমপক্ষে ২৫০০ বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই এপ্রিল হচ্ছে ২০৭৯তম নেপালী বর্ষের প্রথম দিন বা পহেলা বৈশাখ।
পহেলা বৈশাখে নববর্ষ পালনের সবচে' পুরনো ইতিহাসটা পাওয়া যায় কৌলিয় সম্রাট অঞ্জন কর্তৃক খ্রিস্টপূর্ব ৬৯১ সালে। অর্থাৎ, গৌতম বুদ্ধেরও দেড়শ' বছর আগে বা আজ থেকে ২৭১৩ বছর আগে। এখান থেকে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের সবচে' পুরনো দাবীটা সম্রাট অঞ্জনের হয়। ইতিহাস একটু ঘাঁটলে বোঝা যায় এদেশের সব কিছু 'হয় মুঘলদের নয়তো ব্রিটিশদের অবদান' জাতীয় ভাবনার আসলে কোন ভিত্তি নেই।
বাংলা নববর্ষকে ভিত্তি করে কিছু যজ্ঞ-পূজার ব্যাপার পরে প্রচলিত হয়ে থাকলেও শুরু থেকে এই উৎসবটা একেবারেই লৌকিক। বাংলায় এমন বড় মাপের সর্বজনীন উৎসব আর নেই। প্রত্যুষে স্নান, নতুন পোশাক পরা, হলকর্ষণ, প্রাতঃরাশে দই-চিঁড়ে বা দুধ-খই-মুড়কি, দুপুরে মাছ-নিরামিষ খাওয়া, মেলা, জলকেলী, গান এই উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ ছিল। জলকেলী ব্যাপারটা এখন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে লাও-কম্বোডিয়া পর্যন্ত প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশের অন্যত্র ও ভারতের জাতিগুলোর মধ্যে আর অমন করে প্রচলিত নেই। পাকিস্তান আমল থেকে ঢাকার রমনা বটমূলে গানের অনুষ্ঠান আর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর চারুকলা ইনস্টিটিউটের মঙ্গল শোভাযাত্রা এই উৎসবে যুক্ত হয়েছে।
এখন সারা দেশ জুড়ে তো বটেই দেশের বাইরেও যেখানেই বাঙালীরা আছেন সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর মেলার আয়োজন করা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। পহেলা বৈশাখের সকালে ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে পান্তাভাত খাবার একটা নাগরিক ইভেন্ট গত কয়েক দশক ধরে প্রচারণার গুণে নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।
ফ্যাশন হাউজরা নববর্ষ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের পোশাক আনে, পত্রিকারা নববর্ষ সংখ্যা বের করে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এই দিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। চাকুরীজীবীদের কেউ কেউ এই উপলক্ষে বোনাস পান। একটু একটু করে পয়লা বৈশাখের সর্বজনীন বোনাসের দাবি উঠছে। তবে বোনাস মিলুক আর নাই মিলুক বাংলাদেশের লোকজন শ্রেণী নির্বিশেষে নিজের সাধ্য অনুযায়ী এই উৎসবটা পালন করা শুরু করেছে। ফলে পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে একইসাথে সর্বজনীন এবং সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসব, এই ক্যালেন্ডার আমাদের ভূমিজাত, আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির প্রতীক – কোনো শাসকের আবিষ্কার বা চাপিয়ে দেওয়া নয়। সর্বজনীনভাবে এর পালন দেশে শুভ'র চর্চা বাড়াবে, অশুভকে নাশ করবে।