বন্দুক-বিরল জাপানে, শিনজো আবের খুনে হতবিহ্বল গোটা জাতি
সর্বশেষ কোনো ক্ষমতাসীন বা সাবেক জাপানি প্রধানমন্ত্রী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ৯০ বছর আগে। এ থেকেই অনুমান করা যায় বন্দুক-সহিংসতা দেশটিতে কতটা বিরল আর হতবিহ্বলকর ঘটনা। জাপানে বন্দুকের ব্যক্তিমালিকানার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
শুক্রবার (জুলাই ৮) জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে যে বন্দুক দিয়ে খুন করা হয়, সেটি ছিল বাড়িতে তৈরি একটি শটগান। ওসাকার পশ্চিমে নারা শহরে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি'র (এলডিপি) হয়ে ক্যাম্পেইন করার সময় গুলিবিদ্ধ হন শিনজো আবে।
এ সপ্তাহের আপার হাউজ নির্বাচনের কথা রয়েছে। শিনজো আবে একটি রেলস্টেশনের সামনে বক্তব্য রাখছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে তার কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
এলডিপি'র দফতরে কথা বলার সময় দলটির জ্যেষ্ঠ একজন সদস্য হিরোমিচি ওয়াতানাবে বলেন, 'এটা একটা প্রচণ্ড ধাক্কা হয়ে এল আমাদের জন্য। জাপানে এ ধরনের কিছু হওয়ার কথা বিশ্বাসই করতে পারছি না।'
জাপানিদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা মোটামুটি অস্বাভাবিক, তবে একেবারেই যে ঘটে না তাও নয়। ন্যাশনাল পলিসি এজেন্সি'র তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটিতে ১০টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘাতে মারা গেছেন একজন, আহত হয়েছেন চার জন।
জাপানে কোনো বেসামরিক নাগরিক যদি খেলা ও শিকারের জন্য শটগান বা রাইফেলজাতীয় বন্দুক সংগ্রহ করতে চান, তাহলে তাকে লাইসেন্সিং ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের কিছু গুরুতর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দেশটির পুলিশ সচরাচর হ্যান্ডগান (রিভলবার, পিস্তল) ব্যবহার করে।
শিনজো আবেকে ৪০ বছর বয়সী জনৈক সন্দেহভাজন আততায়ী গুলি করেছে বলে জাপানি গণমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে। গুলির পরপরই আবে'র নিরাপত্তায় নিয়োজিত সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী তাকে ধরে ফেলে।
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবে'র জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা ছিল। এ দলের কমপক্ষে একজনের কাছে একটি বুলেটপ্রুফ শিল্ড ছিল। টেলিভিশনের ফুটেজে দুটো লম্বা নলকে কালো টেপ দিয়ে মাটিতে একত্রে মুড়িয়ে রাখতে দেখা গিয়েছে। এটি ঘরে তৈরি শটগান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ফোর্থ অভ জুলাইয়ের প্যারেডে বন্দুক-হামলার এক সপ্তাহ পেরোনোর আগেই জাপানে এমন ঘটনা ঘটলো। শিকাগোর ওই মাস-শ্যুটিংয়ের কারিগর ২১ বছর বয়সী রবার্ট 'ববি' ক্রাইমো থার্ড। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে এখন অব্দি যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০'র বেশি মাস-শ্যুটিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালে জাপানে বেসামরিক নাগরিকদের কাছে আনুমানিক তিন লাখ ১০ হাজার ৪০০টি বন্দুক ছিল। এ হিসাবে দেশটিতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে বন্দুক ছিল ০.২৫টি। গানপলিসি ডট অর্গ-এর তথ্যমতে জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে এ সংখ্যাটি সবচেয়ে কম।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বেসামরিক নাগরিকদের কাছে বন্দুকের সংখ্যা ৩৯৩ মিলিয়ন বা প্রতি ১০০ জনে ১২০টি। যুক্তরাজ্যে এ সংখ্যা ৩.২ মিলিয়ন বা প্রতি ১০০ জনে পাঁচটি।
১৯৩২ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সুয়োশি ইনুকাই জাপানি নৌবাহিনীর সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তারা চাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে। এমনকি সে সময় জাপান ভ্রমণরত চার্লি চ্যাপলিনকেও হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারা।
সর্বশেষ ২০০৭ সালে জাপানে একজন রাজনীতিবিদ আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। নাগাসাকির মেয়রকে একটি স্টেশনের বাইরে গুলি করা হয়।
সূত্র: ব্লুমবার্গ