মন্দার ভয়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ৩ শতাংশ দরপতন
বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বল দশা নিয়ে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। এই অবস্থায় বুধবার (৩১ আগস্ট) আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে পড়তির দিকে গেছে।
'বিশ্বের কারখানা' খ্যাত চীন করোনা মহামারির নতুন সংক্রমণ মোকাবিলা করছে, রোগ বিস্তার বন্ধে দেশটির সরকার আবারো নিচ্ছে কঠোর সব পদক্ষেপ। এতে গতি হারিয়েছে চীনে উৎপাদন ও ভোক্তা অর্থনীতি। জ্বালানি চাহিদা কমার পেছনে এই ঘটনাকে বড় চালিকাশক্তি বলেছে জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলির জোট ওপেক প্লাস।
মঙ্গলবার লাইট ক্রুডের বৈশ্বিক সূচক ব্রেন্ট ফিউচার্স- এ প্রতিব্যারেল অশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য কমেছে ৫.৭৮ ডলার। দরপতন অব্যাহত থাকে বুধবারেও। এদিন কমেছে আরও ৩.৪১ ডলার। আগামী নভেম্বরের জন্য ব্রেন্ট ক্রুড ক্রয়ের চুক্তিমূল্য কমেছে ২.৯৭ ডলার বা ৩.০৪ শতাংশ। এতে নভেম্বরের চালান কিনতে ব্যারেলপ্রতি দিতে হবে ৯৪. ৮৭ ডলার।
মার্কিন জ্বালানি তেলের প্রধান সূচক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট- এ ক্রুড ফিউচার্স কমেছে ২.৮৯ ডলার বা ৩.১৫ শতাংশ। দাম নেমে এসেছে ৮৮.৭৫ ডলারে। মন্দার শঙ্কায় আগের কার্যদিবসের লেনদেনে দাম কমেছিল ৫.৩৭ ডলার।
পিভিএম অয়েল অ্যাসোসিয়েটস নামক একটি বৈশ্বিক সংস্থার বিশ্লেষক তামাস ভার্গা বলেন, 'আগস্টে চীনের কারখানা পর্যায়ে উৎপাদন কম হয়েছে, এটি দেশটিতে প্রবৃদ্ধি কমে আসার লক্ষণ মনে করা হচ্ছে। চীনের সেবা খাতের বিকাশও প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতিতে হচ্ছে'।
'তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংক– উভয়েই আগামী মাসে মৌলিক সুদহার আরও উচ্চ হারে বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসিবি ও ফেডের এই পদক্ষেপ দশমিক ৭৫ শতাংশের মতো বড় পরিসরে হতে পারে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উৎসাহ হারাবেন অনেকেই। তেলের বাজার আপাতত এই প্রবণতাকেই অনুসরণ করছে'।
চীনে শুধু করোনা মহামারি নয়, নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ ও খরাও উৎপাদন কাজ ব্যাহত করেছে। ফলে দেশটির অর্থনীতি চলতি বছর প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে পারবে না এমন আশঙ্কা রয়েছে।
প্রযুক্তি কেন্দ্র শেনঝেন-সহ চীনের বড় বড় শহরে সংক্রমণ কমাতে আবারো শুরু হয়েছে লকডাউন। যদিও আগে থেকেই দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির গতি কমতে শুরু করেছিল, সেই পালে এবার বিরূপ জলবায়ু আর মহামারি দুইয়ে মিলে হাওয়া দিচ্ছে।
আমেরিকা ও ইউরোপের মতো বড় ভোক্তাবাজারেও মন্দার শঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির সুদহার বৃদ্ধিও কমাতে চলেছে বাজারে অর্থপ্রবাহ। এতে ভোক্তাব্যয়ও সংকুচিত হবে। কমবে বিক্রিবাট্টা, কর্মসংস্থান, আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এ দুটি অঞ্চলেও মন্দার মেঘ ঘনিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
- সূত্র: রয়টার্স