সুযোগসন্ধানী লিজ: অক্সফোর্ডে রাজনীতি পড়ে আসা, দলবদলে পাননি বাবার সমর্থন
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দলীয় নির্বাচনী লড়াইয়ে এগিয়ছিলেন লিজ ট্রাস এবং ঋষি সুনক। সাত সপ্তাহব্যাপী প্রচার এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার শেষে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষিত হয়।
কনজারভেটিভ পার্টি সূত্রে খবর, লড়াইয়ের প্রাথমিক পর্বে সুনক এগিয়ে থাকলেও নয়া কর নীতি-সহ নানান সংস্কারমূলক কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের মন জয় করে নেন লিজ। প্রধানমন্ত্রীর পদও তাই তিনিই পেলেন।
ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৬ জুলাই, ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে। তাঁর পুরো নাম মেরি এলিজাবেথ ট্রাস।
১৯৯৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন লিজ। তাঁর বিষয় ছিল দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি।
ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ছিল লিজের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ছাত্র রাজনীতির গোড়ার দিনগুলিতে লিবেরাল ডেমোক্র্যাট হিসাবে পরিচিতি ছিল তার। পরে মত এবং মন বদলে কনজারভেটিভ দলে নাম লেখান।
স্নাতক হওয়ার পর কর্মসূত্রে বেশ কিছু দিন কেবল সংযোগের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ট্রাস। তার অনেক পরে তিনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
লিজের বাবা লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের অধ্যাপক ছিলেন। মা ছিলেন নার্স এবং শিক্ষিকা। পরিবারে বামপন্থী আবহ থাকায়, লিজের কনজারভেটিভ দলে যোগদান মেনে নিতে পারেননি তার বাবা। মেয়ের হয়ে প্রচারে নামতেও রাজি হননি। মেয়ের অনুরোধে মা অবশ্য প্রচারে যেতে রাজি হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে সাফল্য অধরা ছিল লিজের। ২০০১-এ প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েই বিরোধী লেবার পার্টির কাছে পরাজিত হন তিনি। ২০০৫ সালেও পরাজয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটে। হেরে গেলেও কনজারভেটিভ পার্টির ভোট আগের তুলনায় বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন লিজ।
২০১০ সালে কনজারভেটিভ নেতা তথা ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রার্থী তালিকার প্রথম দিকেই ছিল লিজের নাম। প্রথমদিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র আস্থাভাজন থাকলেও, মে পদত্যাগ করার পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি।
বরিস মন্ত্রিসভায় প্রথমে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলালেও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুভার দেন বরিস।
এক সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তীব্র বিরোধী হলেও, গণভোটে ব্রিটেনের মানুষ ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেওয়ায় অবস্থান বদলে ব্রেক্সিটপন্থী হয়ে ওঠেন লিজও।
নানা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত কনজারভেটিভ পার্টি এবং জ্বালানির দামবৃদ্ধি-সহ নানা অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভোগা ব্রিটেনকে বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হওয়া লিজ কীভাবে নেতৃত্ব দেন- তা নিয়েই এখন নানা জল্পনাকল্পনা চলছে ব্রিটেন জুড়ে।
- সূত্র: আনন্দবাজার