দখলীকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করছে মস্কো
দীর্ঘ সাত মাসের যুদ্ধে দখল করা এলাকার বড় অংশ থেকে কিয়েভের সশস্ত্রবাহিনী রাশিয়ান বাহিনীকে পিছু হটিয়ে দেওয়ার পর ক্রেমলিন এখন ইউক্রেনের দখল করা অবশিষ্ট এলাকা রাশিয়ার অঙ্গীভূত (অ্যানেক্সেশন) করার জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে।
এর অংশ হিসেবে দ্রুতই গণভোটের আয়োজন করতে যাচ্ছে রাশিয়ার মদতপুষ্ট তথাকথিত দনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপল'স রিপাবলিক (ডিপিআর ও এলপিআর) এবং খেরসন ও জাপোরিজজিয়া। এ অঞ্চলগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৩-২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা গণভোটের আয়োজন করবে।
ইউক্রেন ও এর মিত্ররা এ গণভোটকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কেবল অল্প কিছু দেশ এ ভোটের ফলাফলকে সমর্থন জানাবে।
মস্কোর কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ওই অঞ্চলগুলো যদি গণভোটের আবেদন করে তাহলে ক্রেমলিন তা মঞ্জুর করবে। নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপ-প্রধান ও সাবেক রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, এ অ্যানেক্সেশন হবে 'অপরিবর্তনীয়' এবং এর ফলে রাশিয়া নতুন অধিকৃত অঞ্চলে 'আত্মরক্ষার জন্য সবধরনের শক্তি প্রয়োগ করতে' সক্ষম হবে।
দখলীকৃত অঞ্চল অধিকৃত করলে বর্তমান যুদ্ধ আরও তীব্রতর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এর ফলে মস্কোর দাবি করা রাশিয়ান অঞ্চলকে রক্ষা করার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আইনি ভিত্তি পাবেন পুতিন। এ ধরনের অধিগ্রহণের ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো শান্তি আলোচনার সম্ভাবনাও অচল হয়ে যেতে পারে।
কিয়েভের প্রতি 'আল্টিমেটাম'
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অধিগ্রহণের জন্য গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত রাতারাতি নিলেন। রাশিয়ার আরবিসি নিউজের প্রতিবেদনে জানা গেছে, পুতিন বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ্য বিবৃতি দিতে পারেন।
আর.পলিটিক গবেষণা দলের প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেছেন, পুতিন কিয়েভ ও এর পশ্চিমা মিত্রদের জন্য আরেকটি আলটিমেটাম (চূড়ান্ত সময়) ঘোষণা করেছেন।
"বিজয়' নিশ্চিত করতে পুতিন দ্রুত গণভোট আয়োজন করতে প্রস্তুত। যাতে তিনি রাশিয়ার অঞ্চলগুলো প্রতিহত করতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার (পুতিনের মতে) পান। হয় ইউক্রেন পিছু হটবে, নইলে এটা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেবে,' বলেন তাতিয়ানা।
ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার এ অধিগ্রহণকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে এটিকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, দেশ থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে তাড়াতে তারা আক্রমণ চালিয়ে যাবে।
দখল করা অঞ্চলকে গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের সঙ্গে অঙ্গীভূত করার মাধ্যমে রাশিয়া চাইলে এসব অঞ্চলে বাসকারী মানুষদের বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দিতে পারে। প্রসঙ্গত, ক্রেমলিন এখনো বর্তমান যুদ্ধে পূর্ণ সেনাদল নিয়োগ করেনি।
মস্কোর পরিকল্পনা ছিল এ মাসের শুরুতে গণভোটের আয়োজন করা। কিন্তু ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে দখলীকৃত এলাকা হারানোর হুমকি তৈরি হওয়ায় তারা তখন ভোট স্থগিত করে।
এ মাসে ইউক্রেন রাশিয়ার দখল করা নিজেদের এলাকার ১০ শতাংশ পুনরুদ্ধার করেছে। এর আগে কিয়েভ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার পর এটিই রাশিয়ার জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হয়ে এল।
সূত্র: ব্লুমবার্গ