অবশেষে, জেলখানা থেকে মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর তখতে!
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। প্রায় তিন দশকের অক্লান্ত লড়াইয়ের পর অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলেন ৭৫ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ। মালয়েশিয়ার সুলতান আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। খবর রয়টার্সের।
মালয়েশিয়ার সাম্প্রতিকতম নির্বাচনে আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ব্লক সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আনোয়ারের জোট পায় ৮২টি আসন, মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পায় ৭৩ আসন, আর ক্ষমতাসীন জোট পায় ৩০টি। তবে ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনে প্রয়োজন ছিল ১১২ আসন।
অন্যদিকে কোনো দলই অন্য কোনো দলকে সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য সমর্থন দিতে রাজি হয়নি। তাই শেষতক প্রধানমন্ত্রী ঠিক করার দায়িত্ব পড়ে সুলতানের ওপর। সুলতান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন আনোয়ার ইব্রাহিমকে।
বহু ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। গত তিন দশকে এই পদটি বারবার তার হাতের নাগালে এসেও মুঠো ফসকে বেরিয়ে গেছে। বহুবার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের কাছাকাছি পৌঁছেছেন তিনি। প্রথমে ১৯৯০-এর দশকে হন উপপ্রধানমন্ত্রী। তারপর ২০১৮ সালেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
এর মধ্যে প্রায় এক দশক সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে কারাভোগ করেন আনোয়ার ইব্রাহিম। যদিও এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দানি করেছেন তিনি।
মাহাথির মোহাম্মদ একবার আনোয়ারকে তার বন্ধু বলে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি আনোয়ারকে তার উত্তরসূরিও নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু পরে সমকামিতার অভিযোগ ওঠার পর আনোয়ারকে তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেন।
আনোয়ার পরিচিত সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে। তার জোটে একাধিক জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি রয়েছে। সংখ্যাগুরু মালয়দের মধ্যে অজনপ্রিয় চীনা জাতিগোষ্ঠীর একটি দলও আছে তার জোটে।
মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যার (৩৩ মিলিয়ন) প্রায় ৭০ শতাংশ হলো মালয় জাতিগোষ্ঠীর। তারা মূলত মুসলিম। বাকি ৩০ শতাংশ চীনা ও ভারতীয় জাতিগোষ্ঠীর।
কয়েক দশক ধরে আনোয়ার ইব্রাহিম অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছেন। মালয়দের সুবিধা দেওয়ার নীতিসমূহ রদ করার দাবিও জানিয়ে আসছেন তিনি অনেকদিন থেকে।
আনোয়ারের রাজনীতি শুরু মাহাথিরের ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অরগানাইজেশনে। ১৯৯৩ সালে মাহাথির আনোয়ারকে উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী করেন। আশা করা হয়েছিল মাহাথিরের পর আনোয়ারই দায়িত্ব নেবেন।
কিন্তু এশীয় আর্থিক সংকট মোকাবিলার পদ্ধতি নিয়ে দুজনের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। ততদিনে আনোয়ারও মাহাথিরের দলের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন।
১৯৯৮ সালে মাহাথির আনোয়ারকে বরখাস্ত করেন। এরপর দুর্নীতি ও সমকামিতের অভিযোগে আনোয়ারকে জেলে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু ২০১৫ সালে ফের সমকামিতার অভিযোগে কারাবন্দি করা হয় তাকে।
তারপর ২০১৮ সালে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আনোয়ার ও মাহাথির একসঙ্গে নির্বাচন করতে একমত হন। ওই সময় দেশজুড়ে ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাসিওনালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ বিক্ষোভ চলছিল।
বারিসানের নেতা নাজিব রাজাক কয়েক বিলিয়ন ডলার কেলেঙ্কারির জন্য কারাগারে আছেন।
যাহোক, জোট জেতার পর মাহাথির বলেছিলেন দু-বছরের মধ্যে আনোয়ারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু দু-বছর পূর্ণ হওয়ার পরই তাদের জোট ভেঙে যায়। আবারও প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে বঞ্চিত হন আনোয়ার ইব্রাহিম।
এরপর অবশেষে গত শনিবারের নির্বাচনে রক্ষণশীল মালয় মুসলিম জোটের বিরুদ্ধে জয় পায় আনোয়ারের প্রগতিশীল জোট।