নিষেধাজ্ঞা কি কাজে দিচ্ছে? এক মাস আগে তৈরি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ছুঁড়ছে রাশিয়া!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/12/06/webnew-russian-cruise-missile-launched-from-tu-160.jpg)
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়ার কাছে প্রযুক্তিগত পণ্য (সেমিকন্ডাক্টর, সফটওয়্যার ইত্যাদি) রপ্তানিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু, তাতে উন্নত অস্ত্র/ গোলাবারুদ উৎপাদনের সক্ষমতা হারায়নি মস্কো। এমনকী গত নভেম্বরের শেষদিকে ইউক্রেনে হামলায় ব্যবহার করেছে– নিষেধাজ্ঞার কয়েক মাস পর নির্মিত ক্রুজ মিসাইল। অস্ত্র বিশেষজ্ঞ একটি গ্রুপের বরাত দিয়ে এতথ্য জানানো হয় দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
গত ২৩ নভেম্বর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একটি ব্যাপকতর মিসাইল হামলা চালায় রাশিয়া। এতে জরুরি অবকাঠামো ধ্বংস হলে– রাজধানী শহরটিসহ দেশটির বিশাল অংশে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ওই আক্রমণে রাশিয়া যেসব মিসাইল ব্যবহার করে, তার অন্তত একটি গত গ্রীষ্মে প্রস্তুত করা হয় বলে প্রমাণ পেয়েছেন 'কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চের' অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করেই তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাধীন এ সংস্থাটি সংঘাত অঞ্চলে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ (মিউনিশন) নিয়ে গবেষণা করে থাকে। ২৩ নভেম্বরের ওই হামলার কিছুদিন আগেই ইউক্রেনের নিরাপত্তা বিভাগের আমন্ত্রণে কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চ গ্রুপটির একটি ছোট টিম কিয়েভে যায়।
কিয়েভে আক্রমণে ব্যবহৃত একটি কেএইচ-১০১ মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষার সময়- এতে থাকা কিছু চিহ্ন লক্ষ করে (উৎপাদন ব্যাচ/ সিরিয়াল নম্বর) তারা প্রমাণ পান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত সেপ্টেম্বরে প্রস্তুত করা হয়। সেই সূত্রে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, হয় রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে মিসাইলে প্রস্তুতে দরকারি সেমিকন্ডাক্টর ও অন্যান্য প্রযুক্তি উপকরণ আমদানির গোপন উপায় বের করেছে; নাহলে যুদ্ধে নামার আগে থেকেই গড়ে তুলেছিল এগুলোর বিশাল মজুত।
আজ সোমবার (৬ ডিসেম্বর) এসংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চ।
কেএইচ-১০১ মিসাইলটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পর বিস্ফোরিত হয়েছিল নাকি আকাশেই এটিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে– সেটা তারা নির্ধারণ করতে পারেননি বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
তবে এতে ১৩ সংখ্যার একটি সিরিয়াল নম্বর ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর প্রথম তিনটি সংখ্যা মিসাইল উৎপাদনকারী কারখানার সাংকেতিক কোড। পরের তিনটি সংখ্যা কেএইচ-১০১ এর দুই ভার্সনের কোনটি- এ মিসাইল এবং তারপরের দুটি সংখ্যা উৎপাদনের তারিখ সম্পর্কিত। আর সবশেষ পাঁচটি সংখ্যা দিয়ে উৎপাদনের ব্যাচ ও সিরিয়াল নম্বর নির্দেশ করা হয়েছে।
রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও মিউনিশন (ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, গোলা ইত্যাদি) নিয়ে ব্যাখ্যাপূর্ণ প্রতিবেদন লিখে থাকেন পোলিশ সাংবাদিক পিয়তর বোতস্কি। তিনি জানান, অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণটি তার গবেষণার সাথে মিলে যায়। অর্থাৎ, বিশেষজ্ঞদের দেওয়া ব্যাখ্যার মতো করেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের দিন-তারিখ, প্রস্তুতকারক সম্পর্কিত তথ্য লেখে রাশিয়ানরা।
তিনি ই-মেইলে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, প্রথম তিনটি সংখ্যা ছিল '৩১৫'- এটা হলো কারখানার কোড। "কেএইচ-১০১ ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার রাদুগা কোম্পানি প্রস্তুত করে, এই স্থাপনাটি মস্কোর কাছে দুবনা এলাকায় অবস্থিত।"
যুদ্ধ শুরুর পর অস্ত্র বিশেষজ্ঞ দলটি এর আগে আরও চারবার ইউক্রেন সফর করেছে। যুদ্ধাঞ্চল থেকে উদ্ধারকৃত অত্যাধুনিক রুশ সমরাস্ত্র পরীক্ষা করে তারা সেসময় জানিয়েছিলেন, এর প্রায় সবই পশ্চিমা উপকরণ ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়েছে। যেমন রুশ বাহিনীর ব্যবহার করা এনক্রিপটেড রেডিও বা লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার প্রস্তুতে পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে পিয়তর বোতস্কির ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সামরিক গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষক টাইমসকে বলেন, মার্কিন সরকার রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন সম্পর্কে যা জানে, এই ব্যাখ্যা তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে এবিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মতপ্রকাশের অনুমতি না থাকায়, নাম না প্রকাশের শর্তে এসব কথা বলেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি মনে করছেন, অস্ত্র মজুত নিয়ে সমস্যায় পড়েছে রাশিয়া। একারণে পুরোনো মিউনিশনের সাথে নতুনভাবে উৎপাদিতগুলোও ব্যবহার করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া থেকে আসা গোয়েন্দা তথ্যের সূত্রে মার্কিন সরকার মনে করছে, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে রুশ সরকার মিউনিশন কারখানার কর্মীদের অতিরিক্ত সময় কাজের নির্দেশ দিয়েছে। আর মজুতের ঘাটতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে রাশিয়ার সাম্প্রতিক আক্রমণে। এসময় দেখা গেছে, আগের চেয়ে ইউক্রেনের অনেক কম লক্ষ্যবস্তুতে দূরপাল্লার ক্রুজ মিসাইল ছুঁড়ছে মস্কো।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন, এরমধ্যেই ইউক্রেনের বিভিন্ন লক্ষ্যে দূরপাল্লার ক্রুজ মিসাইলসহ স্বল্প ও মধ্যপাল্লার হাজার খানেক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এতে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্রের পুরোনো মজুত শেষ হয়ে গেছে কিনা– সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই পশ্চিমা গোয়েন্দাদের কাছে। তবে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ, অধিকাংশক্ষেত্রেই যুদ্ধের ময়দানে প্রথমে নিজেদের পুরোনো গোলাবারুদ ব্যবহার করে অধিকাংশ সামরিক বাহিনী। তাদের মজুতের সিংহভাগই এ ধরনের মিউনিশনে গঠিত। এগুলো শেষ হয়ে আসলেই বাড়ে নতুনভাবে উৎপাদিত গোলা/ বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার।