বিদেশিরা কানাডায় আর বাড়ি কিনতে পারবে না!
বিশেষ কিছু বিদেশিদের কানাডায় বাড়ি কেনার ওপর দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। খবর বিবিসির।
এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসন বাজারগুলোর একটিকে সাশ্রয়ী করতে সহায়তা করা৷
এই গ্রীষ্ম পর্যন্ত কানাডায় বাড়িগুলোর গড় দাম ৭,৭৭,২০০ কানাডিয়ান ডলার বা ৫,৬৮,০০০ মার্কিন ডলার, যা কর দেওয়ার পর কানাডার পরিবারগুলোর গড় আয়ের ১১ গুণেরও বেশি।
কেউ কেউ এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে বলেছেন, এটি কানাডার হাউজিং মার্কেটে কী প্রভাব ফেলবে তা স্পষ্ট নয়।
অন্টারিও এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বাড়ির মালিকদের মধ্যে নন-কানাডিয়ান বাসিন্দাদের হার ৬ শতাংশেরও কম, যেখানে জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাড়ির দাম সবচেয়ে বেশি।
কানাডার নাগরিক অথবা স্থায়ী বাসিন্দা নন তাদের ওপর ১ জানুয়ারি থেকে এই নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হবে। এবং যারা এটি লঙ্ঘন করবেন তাদের ওপর ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার জরিমানা আরোপ করা হবে।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার ১১ দিন আগে, কানাডিয়ান সরকার অন্তত পাঁচ বছর ধরে দেশে থাকা আন্তর্জাতিক ছাত্র, শরণার্থী দাবিদার এবং অস্থায়ী কাজের অনুমোদন আছে এমন লোকেদের জন্য এই নিয়মের ব্যাপারে কিছু ছাড় ঘোষণা করেছিল।
একটি বিবৃতিতে ফেডারেল হাউজিং মন্ত্রী আহমেদ হুসেন জানান যে, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো ক্রেতাদেরকে বাড়িকে পণ্য হিসেবে ভাবার পরিবর্তে সেখানে থেকে পরিবার গঠনে উৎসাহিত করার জন্য: "এই আইনের মাধ্যমে, আমরা নিশ্চিত করবো যে প্রত্যেক বাড়ির মালিক কানাডিয়ান হবে, যা এই দেশে বসবাসকারী প্রত্যেকের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে।"
২০২২ সালে কানাডায় আবাসনের দাম কিছুটা কমে গেলেও এক দশক আগের তুলনায় এটি অনেক বেশি। ২০১৩ সালের তুলনায় গত বছর বাড়ির দাম ৪৮ শতাংশ বেড়েছে, যখন একটি বাড়ির গড় মূল্য ৫,২২,৯৫১ কানাডিয়ান ডলার।
ইতিমধ্যেই, কানাডিয়ানদের গড় পরিবারের আয় বাড়ির দাম বাড়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কর-পরবর্তী পরিবারের আয় ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৯.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সংখ্যা কানাডার আবাসন বাজারকে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল হিসেবে ঠিক করেছে। স্ট্যাটিস্টার উপাত্ত অনুযায়ী, এটি নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের চেয়েও বেশি।
কানাডার সবচেয়ে দুই বড় শহর, টরন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভারে গড় বাড়ির দাম ১ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের চেয়েও বেশি, যা তাদেরকে পরিণত করেছে আবাসন খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশ ব্যবয়বহুল শহরের তালিকায়।
নিউজিল্যান্ডও ২০১৮ সালে বিদেশিদের জন্য বাড়ি কেনার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে অনুরূপ আইন পাস করেছে, কারণ দেশটিও তার নিজস্ব আবাসন ক্রয়ক্ষমতার সংকটের সাথে মোকাবেলা করছে। তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে মূল্যস্ফীতি-সামঞ্জস্যপরবর্তী বাড়ির দাম বাড়তে থাকে।
অন্যান্য দেশগুলোও বিদেশিদের হাতে বাড়ির মালিকানা রোধ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে, যার মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাইরে বিদেশিদের বাড়ি কেনার অপর নিষেধাজ্ঞা এবং অতিরিক্ত ফি রয়েছে।