প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা নেপালে, নিহত অন্তত ৬৮
নেপালের পোখারায় আবারও যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে।
আজ রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ৭২ জন যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাওয়ার পথে শহরের পুরানো এবং নতুন বিমানবন্দরের মাঝে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৮ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন দেশটির এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা।
নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জগন্নাথ নিরুলা বলেন, "এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। আবহাওয়া পরিষ্কারই ছিল।"
দেশটির পুলিশ কর্মকর্তা অজয় কেসি জানান, দুই পাহাড়ের মাঝখানে দুর্ঘটনাটি ঘটায়, উদ্ধারকর্মীদের সেখানে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ তমু বলেছেন, "বিমানের অর্ধেক পাহাড়ের ধারে এবং বাকি অর্ধেক গিয়ে পড়েছে সেতি নদীর ঘাটে।" বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় ঘটনাস্থালে গিয়েছেন তিনি।
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র সুদর্শন বারতৌলার বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে, বিমানের মোট ৭২ আরোহীর মধ্যে দুই শিশু, চারজন ক্রু সদস্য, পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান, একজন আইরিশ, দুইজন দক্ষিণ কোরিয়ার, একজন অস্ট্রেলিয়ান, একজন ফরাসি এবং একজন আর্জেন্টিনার নাগরিক ছিলেন।
"দুর্ঘটনায় কেউ বেঁচে আছেন কিনা, তা এখনও আমরা জানি না," বলেন তিনি।
বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। উদ্ধারকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
দেশটির সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, "আমরা আরও লাশ উদ্ধারের আশঙ্কা করছি। বিমানটি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।"
বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানানো হয়, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সেতি অঞ্চল থেকে বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিমানটি। এর পরপরই এটি বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের (টেক-অফ) প্রায় ২০ মিনিটের মাথায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটি তখন অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা, দুই শহরের মধ্যে ফ্লাইটের সময় দূরত্ব মাত্র ২৫ মিনিট।
নেপালের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএএন)-এর তথ্য অনুসারে, ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ৯এন-এএনসি এটিআর-৭২ মডেলের বিমানটি কাঠমান্ডু থেকে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩৩ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল।
এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের মার্চে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর এটিই নেপালের সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে উড়ে যাওয়া ফ্লাইটটি কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়; সেই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ৭১ জনের মধ্যে ৫১ জনই নিহত হয়েছিলেন।
২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নেপালে বিমান বা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩০৯ জন মারা গেছেন। হিমালয়ের দেশ নেপালে বিমান দুর্ঘটনার ঝুঁকি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি; এখানে হঠাৎই আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে৷ নিরাপত্তা উদ্বেগজনিত কারণ দেখিয়ে তাই, ২০১৩ সাল থেকে নেপালি এয়ারলাইন্সকে নিজেদের আকাশসীমায় নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ অনুসারে, বিমানটির বয়স ছিল ১৫ বছর।
এটিআর৭২ হলো, বহুল ব্যবহৃত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট টার্বোপ্রপ প্লেন; এয়ারবাস এবং ইতালির লিওনার্দো কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয় এই বিমান। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির বহরে এটিআর৭২-৫০০ মডেলের ছয়টি বিমান রয়েছে।
নেপালে এর আগেও এ ধরনের বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটই নয়, বিদেশি ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও এরকম দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে বেশ কয়েকটি গুরুতর বিমান দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
এদিকে, বিমান দুর্ঘটনার পর মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল; দেশটির এক সরকারি বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।