সচল হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। এ হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তখন দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে সম্প্রতি আবারও মেটা'র মালিকানাধীন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম প্ল্যাটফর্মে ফেরার চেষ্টা চালিয়েছেন ট্রাম্প। মেটা কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ট্রাম্পের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়া হবে। খবর বিবিসির।
মেটা'র গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রধান নিক ক্লেগ সম্প্রতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এই কর্মকর্তা বলেন, "২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের 'প্রশংসা' করায় ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই বিশেষ সময়ে এ পদক্ষেপটি গ্রহণ করা ছিল জরুরি। তবে সম্প্রতি প্ল্যাটফর্মটির করা এক রিভিউতে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বর্তমানে জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপদজনক বলে মনে হয়নি। তাই খুব শীঘ্রই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হবে।"
ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বেশ জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। আর নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করে ট্রাম্প শিবির। যদিও একসময় ট্রাম্প ফেসবুককে উপহাস করে বলেছিলেন, এটি কোনো কাজের জিনিস নয়!
শুধু মেটা প্ল্যাটফর্মেই নয়, বরং টুইটারেও নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপর একই বছরে অনেকটা জেদ করেই 'ট্রুথ সোশ্যাল' নামের নতুন আরেকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে টুইটার তার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়, তবুও বর্তমানে ট্রাম্প টুইটারকে পাশ কাটিয়ে ট্রুথ সোশ্যালই ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে হয়তো আপাতত অন্য জনপ্রিয় কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে দেখা যাবে না। কেননা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ট্রুথ সোশ্যাল এর সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী, ট্রাম্পকে অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্টের অন্তত ছয় ঘণ্টা আগে তা ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করতে হবে।
মেটা প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের এ সংবাদকে অবশ্য ভালোভাবে দেখছে না বিপক্ষ ডেমোক্রেট শিবির ও মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এনএএসিপি নামের মানবধিকার সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ডেরিক জনসন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি এ বলেন, "এটি খুব আশ্চর্যজনক যে, একজন ব্যক্তি ঘৃণা ছড়াতে পারে, ষড়যন্ত্রের হোতা হতে পারে এবং ক্যাপিটল হিলে সহিংস হামলাকে উস্কে দিতে পারে- তবুও মার্ক জুকারবার্গ তাকে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।"
যদিও মেটা প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্ট সচলের বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, "আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। মেটা কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেয়, তাহলে এটি তাদের জন্য ভালো হবে। আমার চেয়ে এটি তাদেরই বেশি প্রয়োজন।"
অন্যদিকে, সচল করার পর ভবিষ্যতে এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অনুরূপ 'সহিংসতামূলক' কর্মকাণ্ডে ফের জড়িত হলে আরও কঠিন শাস্তি দিতে বাধ্য হবে বলে ট্রাম্পকে সতর্ক করেছে মেটা কর্তৃপক্ষ।