ইসরায়েলের হামলায় নয় ফিলিস্তিনির মৃত্যু, গাজায় আবার বিমান হামলা
জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী একজন বয়স্ক মহিলাসহ নয়জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করার একদিন পর ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একাধিক বিমান হামলা শুরু করেছে, যা কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরে সবচেয়ে মারাণাত্মক অভিযানগুলোর একটি।
গাজার স্থানীয় সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে যে, শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে থাকা আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে কমপক্ষে ১৩টি হামলা চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে, যুদ্ধবিমানগুলোর হামলার আগে ইসরায়েলি ড্রোন গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার সংবাদদাতা মারাম হুমাইদ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, ২১ লক্ষ বাসিন্দা নিয়ে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল গাজা থেকে প্রায় মধ্যরাতে (২২:০০ জিএমটি) ইসরায়েলের দিকে দুটি রকেট ছোড়ার পর তারা বিমান হামলা চালিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে দুটো রকেট নিক্ষেপের পর দক্ষিণ ইসরায়েলে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে, ইসরায়েলের বিমান হামলার পর আবারো বেশ কয়েকবার বেজে ওঠে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায় যে রকেটগুলোকে ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে বাধা দেওয়া হয়েছে। এদিকে গাজার উত্তরে প্রায় ১২ কিলোমিটার আশকেলন শহরের ওপরে রাতের আকাশে ইসরায়েলি ইন্টারসেপ্টর মিসাইলগুলোকে ছোড়ার ফুটেজ প্রচার করেছে দেশটির গণমাধ্যম চ্যানেল ১২।
এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী রকেট ছোঁড়ার দায় স্বীকার না করলেও হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন যে, গাজার সশস্ত্র দলগুলো "ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য [তাদের] দায়িত্ব পালন করতে থাকবে এবং জনগণের ঢাল ও তলোয়ার হয়ে কাজ করবে"।
জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নয়জন নিহত হওয়ার পর আবারো ইসরায়েলিরা বিমান হামলা এবং রকেট ছোঁড়া শুরু করে। এই হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন, যেটিকে ২০২১ সালের শুরুর অভিযানের পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে সবচেয়ে মারণাত্মক দিনে পরিণত করেছে।
অভিযানে আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর এবং নিহতদের মধ্যে একজন বয়স্ক মহিলাও রয়েছে, যাকে জেনিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ 'মাগদা ওবায়েদ' নামে চিহ্নিত করেছে। ওবায়েদের পরিবার জানিয়েছে, জানালা দিয়ে উঁকি মেরে তাকে গুলি করা হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা জেনিনের অভিযানকে 'গণহত্যা' বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।
এদিকে জেরুজালেমের উত্তরে আল-রাম শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ২২ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তিও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সংঘর্ষ বাড়ার আশঙ্কা
জেনিন অভিযানের পর ইসরায়েলি বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর অনেকেই আশঙ্কা করেছিল যে একটি নতুন সংঘাত শুরু হতে চলেছে। অবরুদ্ধ অঞ্চলে শেষ বড় ইসরায়েলি হামলায় ৪৯ জন নিহত হওয়ার মাত্র পাঁচ মাস পরেই এই ঘটনা ঘটেছে।
আল-মাগাজিতে থাকা আনাস আবু মুয়াইলিক আল জাজিরাকে বলেন, "আমার বাচ্চারা [ইসরায়েলি বিমান হামলার পর] জেগে ওঠে এবং শব্দগুলো প্রচণ্ড জোরে ছিল। আমার বাড়ি এবং জানালাগুলো খুব জোরে কাঁপছিলো। কাছাকাছি কোথাও আগুন লেগে গিয়েছিল, আমাদের বাড়ির কাছেই থাকা একটি ইসরায়েল-প্রতিরোধী জায়গায় বোমা হামলা করা হয়েছে।"
"এই সংক্ষিপ্ত সামরিক হামলা প্রায়ই যুদ্ধের সূচনা ঘটায় এবং আমরা এটা চাই না। আমরা শান্তি ও স্থিতিশীলতার মধ্যে বাস করতে চাই, আমাদের সাথে যা ঘটছে তা যথেষ্ট।"
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জেনিনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করার পর বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরের রাস্তায় মানুষ ভরে ওঠে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনেহ বলেছেন, আব্বাস 'আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে বারবার আগ্রাসন এবং স্বাক্ষরিত চুক্তির অবনমনের কারণে' ইসরায়েলের সাথে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিয়েছেন। তিনি আরও বলেন যে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরিকল্পনা করেছে।
কূটনীতিকরা বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং ফ্রান্স শুক্রবার এই হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠকে বসতে বলেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির জেনিন অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন, "যারা আমাদেরকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাদের জানা উচিত যে তার রক্ত জব্দ করা হয়েছে"।
সূত্র: আল জাজিরা