রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল করলেন লাহোর হাইকোর্ট, অভিনন্দন সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী মহলের
পাকিস্তানের পেনাল কোড ১২৪-ক' বাতিল করেছেন লাহোর হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) এক পিটিশন শুনানির পর আদালত এ রায় দেন। এটি 'রাষ্ট্রদ্রোহ আইন' নামেই পরিচিত, যার আওতায় সরকারের বিরুদ্ধে 'বিদ্রোহী' বক্তব্য প্রদান বা বিক্ষোভকে উস্কে দেওয়াকে সংবিধান পরিপন্থী বলে অবহিত করে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ বলে গণ্য করা হতো। খবর দ্য ডনের
আইনটি বাতিল চেয়ে বেশ কয়েকজন নাগরিক আদালতে পিটিশন করেছেন। প্রায় একইরকম সবকটি। এরমধ্যে হারুন ফারুক নামক একজনের পিটিশনে বলা হয়, "পাকিস্তান পেনাল কোড (পিপিসি)'র ১২৪-ক ধারা সংবিধানের ৮নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এবং সংবিধানের ৯, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৯ ও ১৯ (ক) আওতায় প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায়" বিজ্ঞ আদালতের কাছে আমি এটিকে বাতিলের অনুরোধ করছি।
এরপর লাহোর হাইকোর্টের বিচারক শাহীদ করিম তার রায় ঘোষণা করেন। রায়ের লিখিত কপি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে বলা হয়েছে: "যদি কেউ মৌখিক বা লিখিতভাবে বক্তব্য দিয়ে; অথবা কোনো সংকেত বা প্রদর্শনীর মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে – কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা, অসন্তোষ বা বিক্ষোভকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে, তিনি বিদ্যমান আইনের আওতায় আজীবন কারাবাসে দণ্ডিত হবেন, অথবা তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন, যার সাথে অর্থদণ্ডও দেওয়া হতে পারে।"
আবেদনে বলা হয়েছে, 'পাকিস্তানে যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন'
হারুন ফারুক তার পিটিশনে বলেছেন, পাকিস্তানে যথেচ্ছ এবং বেপরোয়াভাবে এই আইনের অপব্যবহার করে বাকস্বাধীনতাহানি করা হচ্ছে, যে অধিকারটি নিশ্চিত করেছে সংবিধানের ১৯ নং অনুচ্ছেদ।
"১৮৬০ সনের পিপিসি ১২৪-ক' ধারাটি সংবিধান অনুমোদিত বৈধ, ন্যায্য ও আইনসিদ্ধ বাকস্বাধীনতাসহ অন্যান্য উপায়ে ভাব প্রকাশের অধিকারকে অন্যায়ভাবে সীমিত করে এবং তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে," পিটিশনে আরো বলা হয়েছে।
বিগত অনেক বছর ধরেই পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিক, সাংবাদিক ও অধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে পিপিসি'র ১২৪-ক ধারায় মামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে এতে আরো বলা হয়, "যত দিন যাচ্ছে আইনের এ ধারার অধীনে এজাহার দায়েরের ঘটনা বেড়েই চলেছে, পাকিস্তানের জনতা অনেক দুর্ভোগ সয়েছে, তাদের প্রতিবাদের অধিকার আছে। অথচ সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সমালোচনাকেই ১২৪-ক' ধারার অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে প্রয়োগ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো"।
এই আইন "মুক্ত ও স্বাধীন দেশ পাকিস্তানের বিরোধী পক্ষ, মুক্তবাক এবং সমালোচকদের দমন ও কন্ঠরোধের কুখ্যাত হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে"।
যেসব রাজনীতিক রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের আওতায় অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আইনপ্রণেতা মহসিন দাওয়ার, আলি ওয়াজির প্রমুখের নাম উল্লেখ করা হয়। এ মামলায় যেসব সাংবাদিক বিচারাধীন রয়েছেন তাদের মধ্য অন্যতম হলেন, আরশাদ শরিফ, খাওয়ার ঘুম্মান, আদল রাজা ও সাদাফ আব্দুল জব্বার। ইতোমধ্যেই জাভেদ হাশমি নামের এক সাংবাদিককে ২৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী মহলের উচ্ছ্বাস, রায়কে অভিনন্দন জানালেন তারা
লাহোর হাইকোর্টের কুখ্যাত এ আইন বাতিলের সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের অধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও আইনি বিশেষজ্ঞরা। তারা একে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের বিজয় এবং দেশের আইনি সংস্কারের পথে একটি স্মরণীয় প্রচেষ্টা বলেছেন।
জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানী সাংবাদিক হামিদ মির বলেন, যারা উপনিবেশিক এ আইন প্রয়োগ করে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমন করেছে 'তাদের জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করা উচিত'।
সাংবাদিক মুনিজাই জাহাঙ্গীর হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেন, এটাই পাকিস্তানের জন্য ইংরেজদের রেখে যাওয়া উপনিবেশিক আমলের অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী আইন থেকে মুক্ত হওয়ার যথার্থ সময়।
তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা আন্দালিব আব্বাস বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন 'বাকস্বাধীনতার জন্য অভিশাপ' হয়ে উঠেছিল। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, শিগগিরই আইনি সংস্কারের নতুন যুগ শুরু হবে।