প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো। এবার ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ের এ ঘটনায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করেছেন ম্যানহ্যাটানের গ্র্যান্ড জুরি আদালত। খবর রয়টার্সের।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ট্রাম্পই প্রথম ফৌজদারি অভিযোগের সম্মুখীন হলেন। তবে তার বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসের প্রকৃত নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড; তার অভিযোগ, ২০০৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে গড়ে ওঠা যৌন সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুলতে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।
ট্রাম্প যখন ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখন ফৌজদারি অভিযোগ গঠন ট্রাম্প শিবিরের জন্য বিরাট এক ধাক্কা। অবশ্য ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উল্টো ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্য ও ম্যানহ্যাটানের অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগকে দোষারোপ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, "আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে এগুলো করা হচ্ছে।" একইসাথে মামলাটিতে আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য সমর্থকদের কাছে তহবিলেরও আবেদন করেছেন ট্রাম্প।
এর আগে গত ১৮ মার্চ ট্রাম্প নিজেই এ মামলায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কা প্রকাশ করে ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্ট করেছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি সমর্থকদের প্রতিবাদ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদের সমর্থন পেয়েছেন। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডেসানটিস ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তার মধ্যে অন্যতম।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন প্রসঙ্গে মাইক পেন্স বলেন, "ট্রাম্পের প্রতি এমন আচরণের কারণে দেশ আরও দ্বিধাবিভক্ত হবে।" তবে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
অন্যদিকে প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেট নেতাদের বক্তব্য, "ট্রাম্প তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়।" দলটির প্রভাবশালী সিনেটর চাক শুমার বলেন, "আমি ট্রাম্পের সমর্থক ও সমালোচক উভয়ক পক্ষকেই অনুরোধ করছি যে, শান্তিপূর্ণভাবে আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিন।"
অন্যদিকে অ্যাটর্নি ব্র্যাগের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শীঘ্রই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা সব অপরাধমূলক অভিযোগ প্রকাশ করা হবে।
আর ট্রাম্পের আইনজীবী নিচেলস ও জোসেফ জানান, রাজনৈতিক নিপীড়নের অংশ হিসেবে এ অভিযোগগুলো করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে শক্তভাবে লড়বেন তারা।
গতবছর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলাতেও প্রসিকিউটর হিসেবে ছিলেন ব্র্যাগ। ঐ মামলায় ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে ১.৬১ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়েছিল। সে মামলার বিচারক জুয়ান মারচ্যানই বর্তমান মামলার দায়িত্ব নিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্টর্মির মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ হিসেবে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্পের প্রাক্তন আইনজীবী মাইকেল কোহেন দাবি করেছিলেন, তিনিই ট্রাম্পের হয়ে স্টর্মি এবং অন্য এক মডেল কারেনের কাছে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছিলেন।
২০১৮ সালে যদিও ট্রাম্প অর্থ প্রদানের অভিযোগটি অস্বীকার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ প্রেসিডেন্ট তার সাবেক আইনজীবী কোহেনকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টিকে স্বীকার করে এটিকে 'ব্যক্তিগত লেনদেন' হিসেবে অভিহিত করেন।