অভিযুক্ত ট্রাম্পের এখন কী হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো। এবার ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়কার এ ঘটনায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করেছে ম্যানহ্যাটানের গ্র্যান্ড জুরি আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ট্রাম্পই প্রথম ফৌজদারি অভিযোগের সম্মুখীন হলেন। তবে তার বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসের প্রকৃত নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড; তার অভিযোগ, ২০০৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুলতে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।
বিষয়টি তদন্তের পর ম্যানহ্যাটানের গ্র্যান্ড জুরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করার পক্ষে ভোট দেয়।
ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের একজন মুখপাত্র বিবৃতিতে জানান, তারা ট্রাম্পের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা মেনে তিনি যেন আত্মসমর্পণ করেন সে বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়েছে।
শুনানির তারিখ ঠিক হলে তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
ফৌজদারি মামলায় হাজিরার ক্ষেত্রে আসামিরা স্বেচ্ছায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সামনে উপস্থিত হতে পারেন। এ সময় সাথে তাদের আইনজীবীদেরও দেখা যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের অনুমতি দেওয়া হবে; ট্রাম্পের আইনজীবীদের বরাতে সূত্র বলছে, সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ওপর দায়েরকৃত অভিযোগের শুনানির জন্য আগামী (৪ এপ্রিল) আদালতে উপস্থিত হতে পারেন।
শুনানির পর 'পরিচিতি'র জন্য ট্রাম্পের জামিন পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। তাছাড়া তার ওপর যে অপরাধের অভিযোগ এসেছে তা নন-ভায়োলেন্ট বা অহিংস। নিউইয়র্ক আইন অনুযায়ী, প্রসিকিউটররা এই ধরনের মামলায় আসামির জামিনের অনুরোধ করতে পারে না।
হেফাজতে নেওয়ার পর থেকে বিচারকের সামনে হাজিরা পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রতিটি পদক্ষেপে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের সশস্ত্র এজেন্টরা উপস্থিত থাকবেন। এই সিক্রেট সার্ভিস সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সুরক্ষায় কাজ করে থাকে।
প্রসিকিউটরদের সাথে ট্রাম্পের আইনজীবীদের নেগোসিয়েশনের অংশ হিসাবে, আদালত তাকে মূল প্রবেশদ্বারের পরিবর্তে গণমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে গোপন কোনো প্রবেশদ্বারের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার দিতে সম্মত হতে পারেন।
গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামীদের সাধারণত অস্থায়ী হাতকড়া পরানো হয়, যদিও ট্রাম্পের আইনজীবীরা তা এড়ানোর চেষ্টা করবেন। বিচারকের সামনে উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্পকে এরপর একটি হোল্ডিং এরিয়া বা সেলে অপেক্ষা করতে হবে।
ভেতরে প্রবেশের পর ট্রাম্পের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হবে। এমনকি অন্য সব ক্রিমিনাল কেসের অপরাধীদের মতো তাকে মাগশটও দিতে হবে। এরপর তাকে অভিযোগ পড়ে শোনানো হবে।
মামলা দায়ের এবং বিচারক নির্বাচিত হবার পর অন্যান্য বিবরণীর উল্লেখ করা হবে, যেমন- রায়ের তারিখ ও সময়, আসামির জন্য সম্ভাব্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কিংবা জামিনের জন্য যেসব রিকোয়ারমেন্ট বা শর্ত পূরণ করতে হবে সেইসব।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন তবে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড পেতে পারেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞদের অনুমান ট্রাম্পকে জরিমানাই করা হবে, কারাভোগের সাজা দেয়ার সম্ভাবনা কম।
মার্কিন আইনে এমন কিছু নেই যা একজন প্রার্থী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেও তাকে নির্বাচনে প্রচারণা চালানো এবং প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করা থেকে বাধা দেয়; এমনকি কারাগার থেকেও রাজনীতি করে যেতে কোন বাধা নেই। ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে তাই আপাত কোনো বাধা নেই।
যদিও এই মুহূর্তে এই ফৌজদারি অভিযোগ গঠন ট্রাম্প শিবিরের জন্য বিরাট এক ধাক্কা।
এর আগে গত ১৮ মার্চ ট্রাম্প নিজেই এ মামলায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কা প্রকাশ করে ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্ট করেছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি সমর্থকদের প্রতিবাদ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন।