পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী ভয় পাচ্ছে যে আমি নির্বাচনে জিতে যাব: ইমরান খান
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখতে তার এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জোট এবং সামরিক বাহিনী। খবর আল জাজিরার।
বুধবার (১৭ মে) লাহোরের জামান পার্কে নিজের বাসভবন থেকে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে ইমরান খান জানান, তাকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে তার বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
"সকল রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী আমাকে এবছর নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়", বলেন ইমরান খান। তিনি আরো জানান, বুধবার পুলিশ তার বাড়ি ঘেরাও করেছিল এবং প্রধান সড়কে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল।
বুধবার সন্ধ্যায়ও ইমরান খানের বাসভবনের বাইরে ভারি পুলিশি উপস্থিতি ছিল। পুলিশের দাবি, সম্প্রতি ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সহিংস বিক্ষোভে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের কয়েকজনকে তিনি নিজ বাসভবনে আশ্রয় দিয়েছেন।
গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজিরা দেওয়ার সময় আধাসামরিক বাহিনী পিটিআই প্রধানকে গ্রেপ্তার করে। ইমরান খানের এই নাটকীয় গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও বাসভবনে হামলার ফলে এটি সহিংস রূপ নেয়। বিক্ষোভে অন্তত দশজন নিহত হয়েছেন এবং পিটিআই-এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গেল মঙ্গলবার দেশটির বেসামরিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশের সামরিক স্থাপনাগুলোতে যারা হামলা করেছে তাদেরকে সেনা আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। অধিকার গোষ্ঠীগুলো এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।
'অগ্নিসংযোগ করতে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল'
সরকারি কর্মকর্তারা ইমরান খানের সমর্থকদের অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার জন্য দায়ী করলেও, ইমরান খান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
"যেকোনো স্বাধীন তদন্তে দেখা যাবে আমার পক্ষে যারা রাজপথে নেমে এসেছিল, তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছে", বলেন ইমরান খান। তার ভাষ্যে, 'অগ্নিসংযোগ করতে কিছু লোক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল' যাতে কর্তৃপক্ষ তার দলের ওপর ধরপাকড় করার একটা কারণ খুঁজে পায়।
দারিদ্র্য, সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী শাজিয়া মারি আল জাজিরাকে বলেন, ইমরান খান তার ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তার সমর্থকদের সহিংসতার জন্য 'উস্কানি' দিচ্ছিলেন।
ইমরান খানের সমর্থকদের দিকে ইঙ্গিত করে শাজিয়া বলেন, 'আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছিলো তারা', তারা ভবনগুলোতে হামলা চালিয়েছিল, অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিচ্ছিল। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে প্রশাসনকে শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল।
এছাড়াও বুধবার পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের একজন কর্মকর্তা আমির মীর বলেন, নিজের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা ৪০ জন সন্দেহভাজনকে হস্তান্তর করতে ইমরান খানকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে, নতুবা তার বাড়িতে পুলিশি অভিযান চলবে বলা হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে আমির মীর বলেন, পাঞ্জাব থেকে প্রায় ৩৪০০ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও কিছু অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কিন্তু নিজের বাড়িতে কোনো 'সন্ত্রাসীকে' আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইমরান খান এবং তার দাবি- 'অগ্নিসংযোগ তারাই করেছিল যাদেরকে এই কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল'।
"আমি নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছি যেন আমার বাড়িতে আসে এবং সন্ত্রাসীদের খুঁজে নেয়, কারণ এটা তো তাদের (কর্তৃপক্ষের) আমার এখানে অভিযান চালানো এবং আমাকে তুলে নেওয়ার একটা অজুহাতমাত্র", আল জাজিরাকে বলেন ইমরান খান।
'সেনাপ্রধান যা সিদ্ধান্ত নেন তা-ই হয়'
৭০ বছর বয়সী পাকিস্তানের সাবেক এই ক্রিকেটার আরও দাবি করেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে তার সাড়ে সাত হাজার সমর্থককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
"এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে কারণ আমার রাজনৈতিক দলের রেটিং এখন ৭০ শতাংশ এবং সরকার নির্বাচন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে", বলেন ইমরান খান।
চলতি বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে বর্তমান সরকার ভেঙে দেওয়া হবে এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে- যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সবসময় প্রচলিত ছিল।
ইমরান খান বলেন, "সাবেক সেনাপ্রধানের সামরিক দল বা ১৩-দলীয় রাজনৈতিক জোট, কেউই নির্বাচন চায় না। কারণ তারা ভয় পায় যে নির্বাচনে আমি জয়লাভ করবো।" তিনি এক সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন যে, তিনি 'ইমরান খানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কান ভারি করছেন'।
সাম্প্রতিক সময়ে ইমরান খান খোলামেলাভাবে প্রাক্তন ও বর্তমান সেনাপ্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে, তারা তাকে প্রধানমন্রীধে পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন।
সামরিক বাহিনীকে অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, 'সেনাপ্রধান যা সিদ্ধান্ত নেন, তা-ই হয়'। 'পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে পারে একমাত্র বিচার বিভাগ', একথা বলে বিচার বিভাগের প্রশংসা করেন তিনি।
গত সপ্তাহে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তার গ্রেপ্তারকে বেআইনি ঘোষণা করেন এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পাকিস্তান সরকার অবশ্য এ রায়ের নিন্দা জানিয়েছে এবং সরকার বলেছে, তারা বিরোধীদলীয় নেতাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করার যেকোনো আইনি উপায় খুঁজে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।