যেভাবে ভেতরের দিকে দুমড়ে মুচড়ে গেল টাইটান!
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে রোববার নিখোঁজ হওয়া সাবমার্সিবলের পাঁচ আরোহী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো। মার্কিন কোস্ট গার্ডের ধারণা, 'টাইটান' নামক ওই সাবমার্সিবলের দেহকাঠামো 'ক্যাটাস্ট্রফিক ইমপ্লোশন' বা 'ভয়াবহ ধরনের অন্তর্মুখী সংকোচনের' কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু অন্তর্মুখী সংকোচন আসলে কী?
'ইমপ্লোশন' মূলত এক্সপ্লোশন বা বিস্ফোরণের বিপরীত ঘটনা। কোনো বস্তুর ভয়াবহভাবে ভেতরের দিকে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়াকেই বলে ইমপ্লোশন বা অন্তর্মুখী সংকোচন। টাইটানের বেলায়ও সেটাই ঘটে।
বৃহস্পতিবার ইউএস কোস্ট গার্ড রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মগার বলেন, আটলান্টিক মহাসাগরের ১৩০০০ ফুট গভীরে অবস্থিত টাইটানিক ধ্বংসাবশেষের সামনের অংশ থেকে ১,৬০০ ফুট দূরে নিখোঁজ সাবমার্সিবলের টেইল কোন (পেছনের সরু অংশ) ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ পড়ে ছিল। কোস্টগার্ড বলছে, সমুদ্রের তলদেশে পাওয়া ধ্বংসাবশেষ সাবমার্সিবলটির 'প্রেশার চেম্বারের' হতে পারে।
সমুদ্রের তলদেশে ১৩ হাজার ফুট গভীরতায় সাবমার্সিবলের ওপর পানির প্রচুর চাপ থাকে। এমনকি সূক্ষ্মতম কাঠামোগত ত্রুটির কারণেও ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়।
আন্ডারওয়াটার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটরের সিইও টম ম্যাডক্স বলেন, "সমুদ্রের ওই গভীরতায় প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ৪-৫ হাজার পাউন্ড চাপ অনুভূত হয়; যা ভূপৃষ্ঠে অনুভূত চাপের ৩৫০ গুণ বেশি। যেকোনো সূক্ষ্ম ছিদ্রও তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। আর এতে পুরো যানই ধ্বংস হয়ে যাবে।"
ভূপৃষ্ঠে অনুভূত চাপকে ১ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হিসেবে পরিমাপ করা হয়, যা প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ১৫ পাউন্ড। পানিতে ডুব দেওয়ার পর যতই গভীরে যাওয়া হয় ততই চাপ বাড়তে থাকে। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ যে গভীরতায় অবস্থিত সেখানে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে চাপ অনুভূত হয় প্রায় ৬ হাজার পাউন্ড।
টাইটানের ভেতর থাকা ওই ৫ জন কি বুঝতে পেরেছিলেন তাদের সাথে কী ঘটছে? এর উত্তর দিয়েছেন ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন নৌ কর্মকর্তা এবং অধ্যাপক আইলিন মার্টি। তার মতে, ঘটনাটি ঘটেছে মিলিসেকেন্ডেরও কম সময়ে।
আইলিন সিএনএনকে বলেন, "বিপর্যয়মূলক অন্তর্মুখী সংকোচন সাধারণত ঘণ্টায় ১৫০০ মাইল বেগে ঘটে। কিন্তু কোনোকিছু যে ঘটছে তা বুঝতে মানব মস্তিষ্কের আরো ০.২৫ গুণ বেশি সময় লাগে।"
অর্থাৎ, প্রচণ্ড চাপে টাইটানের অন্তর্মুখী সংকোচন এতই দ্রুত ঘটেছে যে ভেতরে থাকা যাত্রীরা কিছু বুঝেই উঠতে পারেননি।
"তারা এমনভাবে মারা গেছেন যে তারা বুঝতেও পারেননি তাদের মৃত্যু ঘটতে চলেছে। ইমপ্লোশন হয়ে থাকলে তাদের মৃত্যু ছিল পেইনলেস (ব্যথাহীন)," বলেন আইলিন।
২২ ফুট লম্বা টাইটান-এর যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) এবং তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান, ফরাসি ওশেনোগ্রাফার ও টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পল-অঁরি নারজিওলে (৭৭), এবং ওশানগেট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ।
সাবমার্সিবলটি পরিচালনা করছিলেন স্টকটন রাশ।
টাইটানের যাত্রীদের পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মার্কিন কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল মগার বলেন, তার কাছে 'এখনই কোনো উত্তর নেই'। তবে তারা অনুসন্ধান চালিয়ে যাবেন।